পোষা জীব ও পশুকাম

পাপিয়া জেরিন

প্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০১৮

ধরেন, আপনার একটা বিড়াল আছে। তার লোমশ লেজের ঘষা, গরগর আওয়াজ আপনার খুব ভালো লাগে। এই পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যদি তার ঠোঁটে চুমু দেন, তার জেনিটাল নাড়াচাড়া করতে পছন্দ করেন তাইলে আপনি ধইরা নেন, আপনের ঝামেলা আছে। অবশ্য আপনি যদি ব্রাজিল, ম্যাক্সিকো, থাইল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি বা রোমানিয়ায় গিয়া এগুলা করেন, তো সমস্যা নাই। তবে ডেনমার্কে এইটা একটা ক্রিমিনাল অফেন্স।

পশুপ্রেম, পশুকাম বা Zoophilia এর হাজারটা ধরণ আছে। বিড়ালের প্রতি যেইটা সেইটারে বলে Ailurophilia। একইভাবে পাখিদের প্রতি, Ornithophilia। কুকুরের প্রতি Cynophilia। পোকামাকড়ের প্রতি Formicophilia। এরকম আছে আরো অনেক।

প্রখ্যাত যৌনমনোবিদ প্রফেসর জন মানি মনে করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ যৌনসঙ্গীর অভাবে পশুকামে লিপ্ত হয় বা পশুকামপ্রবণ হয়। শুধুমাত্র যৌনক্রিয়া না, অবচেতনে পশুর প্রতি কামপ্রবণতাও Zoophilia এর মধ্যে পড়ে। একধরণের মানুষ আছে যারা সঙ্গীর কাছ থেকে পশুর আচরণ কামনা করে। এইটারে বলে Human-animal role playing। এইটারে পশুকামের ভিতরে আনতে অনেকে নারাজ।

কিন্তু, আরেকটা আছে Romantic Zoophilia। আশপাশে আপনি হরহামেশাই দেখতে পাবেন এইসব। কেউ কেউ মানুষের চাইতেও পোষা জীবটারে বেশি ভালোবাসতেছে। তার লোমের স্পর্শে বিরল আনন্দ পাইতেছে। বুকে-বিছানায় নিয়া শুইতেছে। আপনি এইটারে হয়তো আদিখ্যেতা মনে করতেছেন। এইটাও এক ধরণের পশুকাম। সাধারণত পোষা প্রাণীরে দিয়া সাইকো-সেক্সুয়ালি উদ্দীপ্ত হয় এরা। Tactile Zoophilis এদের পশুর যৌনাঙ্গ ছু্ঁইয়া মজা লাগে। এরা পোষা জীবের সাথে সরাসরি যৌন কাজটা করে না কখনও। এদের থাকে স্পর্শের বা দেখার আনন্দ।

মনোবিদ্যা বলে, এই ব্যস্ত ও প্রতিযোগিতার সময়ে আমরা একাকী। যেকোনো কারণে স্থায়ী বা অস্থায়ী সঙ্গী পাইতেছি না। আমরা একটা মানবিক সম্পর্কের চাইতেও একটা `পেট` রাখারে বেশি সহজ মনে করতেছি। কিন্তু, যতটা সহজভাবে আমরা দেখতেছি বা ব্যাখ্যা করতেছি, আসলে তা এত সহজ না। একজন নিস্বঙ্গ ব্যক্তির  এক বা একাধিক পালা বিড়াল থাকাটা আমাদের চোখে সহজ-স্বাভাবিক মনে হইতে পারে। কিন্তু আচরণগত দিক বিবেচনায় যৌনমনোবিদরা এইটা নিয়া বিশদ গবেষণা দাঁড়া করাইছেন। তারা মনে করেন, পোষাপ্রাণী ও পাখির শরীরে চুমু (বিশেষ করে ঠোঁটে) খাওয়া ও তাদের জেনিটাল স্পর্শ করাও পশুকামী আচরণ।

লেখক: কবি ও চিত্রশিল্পী