প্রকৃত ইসলাম বনাম ধর্মব্যবসায়ীদের ইসলাম

হাসান আজারকাত

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৮, ২০১৮

ইসলাম ধর্মের কোথাও বিশ্ব ইজতেমার কথা উল্লেখ নেই। শুনলাম এদেশের কওমী গ্রুপগুলো দিল্লীর একজন আলেমকে ইজতেমায় নিষিদ্ধ করেছে। সেই আলেমের দোষ তিনি অর্থের বিমিময়ে কোনও ধর্মীয় কর্মসূচিতে যাওয়া বা ধর্মীয় কোনও কিছু করা নিষেধ করেছেন।
ইসলাম ধর্মে কোথাও অর্থের বিনিময়ে মোনাজাত, মিলাদ, ওয়াজ কিংবা মাহফিলের কথা বলা নেই। প্রকৃত ধার্মিক ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের মূল পার্থক্য এখানেই। ধর্ম কোনো পেশা নয়। আর ইজতেমাও কোনো অবশ্য পালনীয় রীতি নয় মুসলিমদের জন্য। বরং ইজতেমার কারণে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়ে।
আমি বিশ্ব বা জাতীয় ইজতেমা, যাই হোক না কেন এসব উপড়ি ধর্মীয় রীতিনীতির বিপক্ষে। যে কোনও মাহফিলের বিপক্ষে।
এই দেশে নারীদের নামাজ ও ইবাদতের জন্য হাতেগোনা কিছু ছাড়া আর কোনও মসজিদ নেই। ইসলাম বিষয়ক জ্ঞানার্জনের জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। আবার নারীদেরকেই ধর্ম ব্যবসায়ীরা হেয়-প্রতিপন্ন করার তালে সর্বদা ব্যস্ত থাকে।
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় কোমলমতি শিশুকিশোরদের মাঝে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের জন্ম না দিয়ে ঘৃণার জন্ম দেয়া হয়। তারা তখন নিজেদের সমাজের অংশ মনে না করে এক অপার্থিব জগতের অংশ মনে করে। অথচ তারা বসবাস করে পার্থিব জগতে।
জুমু`আর দিন অধিকাংশ মসজিদে যেসব ওয়াজ হয়, তা খুবই একঘেয়ে। এবং ঘুরেফিরে ইমামতি করা ব্যক্তিদের একই কথা, আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে মসজিদে দান করবেন বা কোন নবী ও রাসূল কী করে গেছেন ইত্যাদি। অথচ মসজিদে আলোচনা করার জন্য আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কিভাবে পাপ থেকে দূরে থাকা যায়, কিভাবে নিজেকে সংযত রাখা যায়, কিভাবে ইবাদত জীবনে শান্তি বয়ে আনে, ধৈর্য কিভাবে মানুষকে বহুদূর পর্যন্ত নিয়ে যায়, কিভাবে পুঁজি মানুষের সময় চুরি করছে, কিভাবে একটি সিস্টেম আমাদের নৈতিকতার ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে, কিভাবে এগুলো উপেক্ষা করা যায়... এসব ব্যাপারে মোটিভেট করার মতো শিক্ষিত ইমাম আমাদের দেশে খুবই কম আছেন।
এদেশের ইমামতি করা ধর্ম ব্যবসায়ীরা মসজিদ মাদ্রাসায় দান করতে বলেন। অথচ ওসব জায়গায় দান না করে সেই টাকায় এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত করলে বা গৃহহীনের ঘর বানিয়ে দিলে আরও বেশি সওয়াব বা নেকী হবে, তা তারা বলতে চায় না।
ধর্মের সাথে সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা ও নৈতিকতার সম্পর্ক খুব গভীর। কম্যুনিস্ট ও ধর্মনিরপেক্ষরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে মার্ক্সের কিছু উদ্বৃতি দিলেও সত্য কখনও পরিবর্তন হবে না।
আমরা যারা ধর্মবিশ্বাসী তাদের উচিত ইজতেমা, মিলাদ, মাহফিল এসব বড় পরিসরে বয়কট করা। ধর্মব্যবসায়ীদের ফাঁদে পারা না দিয়ে নিজের বিবেক ও যুক্তির মাধ্যমে ধর্ম পালন করা। কুরআন ও হাদিসের অনেক ভুলভাল ও মিসগাইডেড অনুবাদ বাজারে পাওয়া যায়, সেসব থেকে দূরে থাকা।
ধর্ম নয়, ধর্ম ব্যবসায়ীদের সামাজিক পরিসরে বয়কট করতে পারলে, সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে তাদের গুরুত্বহীন করতে পারলে আমি মনে করি সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদসহ আরও অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব।