প্রসঙ্গ শবে বারাআত

ছায়াবীথি শ্যামলিমা

প্রকাশিত : মে ০২, ২০১৮

এই বিষয়টা সম্পর্কে কলম ধরার কোনও ইচ্ছে ছিল না। নফল ইবাদত নিয়ে অযথা বিতর্ক করা ঠিক নয়। যেখানে এদেশের নামমাত্র মুসলমানরা ফরজ ছেড়ে দিচ্ছে অহরহ। হাজারো মুসলমান নাস্তিক হচ্ছে ধর্ম সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার কারণে। হাজারো মুসলমান কুরআনের আক্ষরিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। কেন একজন মুসলমান অন্য ধর্মাবলম্বী থেকে আলাদা তা-ই জানে না কোটি মুসলমান। সেখানে নফল কোনও আমল নিয়ে বিতর্ক করা মানে হলো, ফরজ সতর ঢেকে রাখা লুঙি খুলে সুন্নত পাগড়ি মাথায় দেয়ার মতো বোকামি আচরণ। এরপরও কতিপয় নামধারী ‘আহলে হাদিস’ হাদিস অস্বীকারকারীদের দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণ চলছে দেদার। নবিজি (সা.) থেকে প্রমাণিত একটি নফল আমলকে অস্বীকার করছে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করে। অপরদিকে রাজারবাগী, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, আর আটরশী, চন্দ্রপুরী ও মাইজভান্ডারীসহ বেদআতের ধ্বজাধারী নামধারী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতসহ অসংখ্য মাজার-কবর এবং পিরপূজারীরা পবিত্র শবে বরাতের নামে হালুয়া-রুটি আর সম্মিলিত ইবাদতের মতো চূড়ান্ত পর্যায়ের হীন বেদআতি কর্ম করে যাচ্ছে ধর্মের নামে। তাই বিষয়টি সাধারণ মুসলমানদের সামনে পরিষ্কার করার জন্য এ নিবন্ধ।

শবে বারাআত কি: শব শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হলো রাত। আর বরাআত আরবি শব্দ। মূলত হলো براءت যার অর্থ, মুক্তি তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হলো বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব, শবে বারাআত شب براءت

শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান ليلة النصف من شعبان তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। কেউ কেউ শবে বরাআত নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বীকার করার মতো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে থাকে। তাদেরকে আমি বলি, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আবশ্যক বলি কুরআন-হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন-হাদিসের কোথাও কি নামাজ শব্দ আছে? তাওহীদকে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু কুরআন-হাদিসের কোথাও তাওহীদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ কুরআন-হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামাজ বলি সেই অর্থবোধক কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃত শব্দ সালাতই হলো নামাজ। আমরা যাকে তাওহীদ বলি কুরআন-হাদিসের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হলো এ তাওহীদ। তেমনি আমরা যাকে শবে বারাআত বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা-ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদিসে বর্ণিত শব্দ হলো, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। সুতরাং তাই হলো শবে বারাআত।

হাদিসে শবে বারাআত: কুরআনে শবে বারাআতের কোনও উল্লেখ নাই। কুরআনে কেবল লাইলাতুল কদর তথা শবে কদরের কথা উল্লেখ আছে। পবিত্র কুরআনের পঁচিশ নাম্বার পাড়ার সূরায়ে দুখানের ২ ও ৩ নং আয়াতে বর্ণিত মুবারক রজনী দ্বারা লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর উদ্দেশ্য। শবে বারাআত নয়। এটাই বিশুদ্ধ বলেছেন গ্রহণযোগ্য মুফাসসিরীনে কেরাম। যার পক্ষে যুক্তিও শক্তিশালী। বিস্তারিত জানতে দেখুন: ১. আদ দুররুল মানসুর-৭/৪০১-৪০৭। ২. তাফসীরে কাশশাফ-৪/২৭২। ৩. তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২৪৬। ৪. তাফসীরে বাগাভী-৭/২২৭-২২৮।

বিভিন্ন হাদিসে শবে বারাআতের বর্ণনা এসেছে। যেমন-

عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

হযরত আলী বিন আবু তালীব রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে (শবে বরাত) তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো। আর দিনের বেলা রোযা রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোনও গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোনও রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোনও বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। (সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২)

عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

অনুবাদ: হযরত আয়শা রা. বলেন, একরাতে রাসূলকে সা. না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোনও অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোনও বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রা. বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনও বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সা. তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯}