প্রেষণার প্রায়শ্চিত্ত

চৌধুরী মুহাম্মদ রাশেদ

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৬, ২০১৮

হাসিব মিয়া প্রতিদিন সাভার থেকে ৭০ কেজি দুধ এনে ধানমন্ডির বাসায় বাসায় দিয়ে যায়। সে ৪০ টাকা করে দুধ কিনে ঢাকায় এনে তা ৮০ টাকায় বেচে। দিনে তিনশো টাকা খরচ বাদ দিলেও মাসে ৭৫ হাজার টাকার মতো তার আয় থাকে। ক্যান ইউ ইম্যাজিন...
একজন অশিক্ষিত লোক মাসে ৭৫ হাজার টাকা ইনকাম করছে?
তারেক সাহেব ১.৫ লক্ষ টাকা অ্যাডভান্সে নিউ মার্কেটের একটি দোকানের সামনে বসার অনুমতি নিয়েছিলেন প্রায় ২১ বছর আগে। মাসে ভাড়া দেন ১০ হাজার টাকা। তিনি সেখানে বসে প্যান্ট শার্ট ছোট করাসহ টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করেন। এ ২১ বছর দর্জির কাজ করে সায়দাবাদে একটি ৫তলা বাড়ি, রায়েরবাগে ৩তলা বাড়ি ও মালিবাগ হোসাফ টাওয়ারে দুটি দোকান কিনেছেন। বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে উনার মাসিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকা। যখন জিজ্ঞেস করলাম, দর্জির কাজ করে কত পান? উনি হেসে বললেন, কখনো ৭০, কখনো ৮০, কখনো ৬০-ও হয়, তবে ৬০ হাজার খুব কমই হয়।
দিনশেষে তিনি একজন দর্জি!
তেজগাঁও কলোনী বাজারের ইগলুর আইসক্রিম বিক্রেতা শফিকের কথাই ধরি না কেন। আইসক্রিম খেতে গিয়ে জানলাম, তার বাড়ি আমার জেলায়। আইসক্রিম বেচে তিনি বনশ্রীতে ৬তলা বাড়ি করেছেন। মাসে লাখ দেড়েক টাকা ভাড়াও আসে।
এসব মানুষ তারাই, যাদেরকে উঠতে-বসতে আমরা ঘৃণার চোখে দেখি। নিয়মিত ধমক দেই। কিন্তু ১৫ বছর পড়াশুনা করেও তাদের সমান বেতনের চাকরি ম্যানেজ করতে পারি না। এরা পড়াশুনা না করেই উদ্যোক্তা হয়ে গেছে। আর আমরা পড়াশুনা করে অন্যের গোলামি করার সুযোগও পাই না। ট্রাডিশনাল বিজনেসকে ঘৃণা করে ইনোভেটিব কিছু করতে গিয়ে আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমরা কোনও স্টার্টআপই দাঁড় করাতে পারি না।
দিনশেষে আমাদের চাকরি খুঁজতে হয় আবুল, আকিজ সাহেব কিংবা কাউছ মিয়ার জর্দার ফার্মে। অথচ আমরা জর্দার ম্যানেজার হয়েই প্রাউড ফিল করছি। এ স্টার্ট আপগুলো যদি তরুণ শিক্ষিতরা শুরু করতো, তখন?
হাসিব মিয়ার ক্ষমতা নাই ৭০ কেজির ওপরে বিক্রি করার? কিন্তু আমরা পারব এমন একশো হাসিব দিয়ে বিজনেস্টা বড় করতে। কিংবা একশো তারিককে ম্যানেজ করতে। কারণ আমাদের ম্যানেজারিয়াল অ্যাবিলিটি তাদের চেয়ে বেশি।
আমরা সেটা না করে মাল্টিন্যাশনালে জব করে গাধার মতো খেটে হাজার পঞ্চাশেক পেয়েই খুশি। আর মাস শেষে দর্জি তারেকের পাঁচতলা বাসা ভাড়া দেয়ার টাকা নিয়ে ভাবি!