`ফিলিস্তিন` নিয়মের শিকার মাত্র

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : মে ১৫, ২০১৮

যুদ্ধের মাধ্যমেই যুদ্ধ বিলুপ্ত হতে পারে। অস্ত্রের আঘাত থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অস্ত্রই ধরতে হবে। আগ্রাসনবাদী-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এটাই ছিল মাও সেতুং এর দর্শন। আজ ফিলিস্তিনের জন্য এর চেয়ে আর কোনো মহান দর্শন নাই সম্ভবত!

কেন আমরা ফিলিস্তিনের বিষয়ে নিজেদের ঘুম হারাম করবো?

মানবতার কথা বাদই দিলাম, যদি শুধু যৌক্তিক কারণেই বিবেচনা করা হয় তাহলে আমরাও যে কোনো সময় একটা ফিলিস্তিন হয়ে যাবো, ভৌগলিক কিংবা অর্থনৈতিক যে কোনো ভাবে। ফিলিস্তিনের আজকের এই অবস্থা আসলেই এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ফসল। এটাই পুঁজিবাদের নিয়ম। এভাবেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দেশের পর দেশ ধ্বংস হয়।

 

ফিলিস্তিনের মুক্তি তাদের নিজেদের হাতেই। দুনিয়ার সকল রাষ্ট্র, জাতি, আন্তর্জাতিক সংস্থা কেউই মুক্তি দিতে পারে নাই প্যালেস্টাইনকে। কেউ মুক্তি দেবেও না কারণ পুরো পুঁজিবাদী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে এই দখলদারি দর্শনের উপরে। আর এখন পর্যন্ত এ দখলদারি দর্শনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আঘাতটা ছিল মাওবাদী দর্শন। তাই সেটাই যৌক্তিক মুক্তির পথ।

 

ফিলিস্তিন বয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার বছরের বোঝা, যা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বল প্রয়োগের মাধ্যমেই। বিংশ শতাব্দীর সূচনায় ফিলিস্তিন ছিল উসমানী সাম্রাজ্যের অধীন সিরিয়া প্রদেশের একটি অংশ। ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদি, তিন ধর্মের আবেগের কেন্দ্রস্থল এই অঞ্চলে তিন ধর্মের লোকই পরস্পর সহাবস্থানে বসবাস করতো। বিংশ শতাব্দীর সূচনায় ইউরোপে যায়নবাদী আন্দোলনের সূচনার পর থেকেই ইহুদিদের প্রতি আহবান জানানো হয় একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। এই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যায়নবাদীদের পছন্দের স্থান ছিল ফিলিস্তিন। যায়নবাদীদের এই আহবানের প্রেক্ষিতেই ফিলিস্তিনে প্রথম দফা ইউরোপীয় ইহুদিদের আগমন ঘটে।

 

১ম বিশ্বযুদ্ধের শেষে উসমানী সাম্রাজ্য ভেঙে পড়লে ফিলিস্তিন ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনের অধীনে আসে। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি সমর্থন জানায়। এই প্রেক্ষিতে ইহুদিদের আরেকদফা অভিবাসন ঘটে। ক্রমেই আরব ও ইহুদিদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হতে থাকে। উভয়পক্ষের উত্তেজনা ও সহিংসতার মাঝে ব্রিটেন বাধ্য হয় ফিলিস্তিন হতে নিজেদের সরিয়ে নিতে। ফিলিস্তিন হতে ব্রিটেনের অপসারিত হওয়ার পর জাতিসংঘের অধীনে ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়।

 

১৯৪৭ এর নভেম্বরে, জাতিসংঘ বিবাদমান দুইপক্ষের মধ্যে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। ফিলিস্তিনের মোট ভূমির ৫৬.৫% নিয়ে ইহুদি-ইসরাইল রাষ্ট্র ও ৪৩.৫% ভূমি নিয়ে আরব-ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য বিভক্ত করে দেওয়া হয়। তিন ধর্মের কাছে পবিত্র জেরুসালেম নগরী জাতিসংঘের অধীন আন্তর্জাতিক জোন হিসেবে রাখার কথা প্রস্তাবে বিবৃত করা হয়।

 

ইহুদিরা জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু অপরদিকে, আরবরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এই প্রেক্ষিতেই শুরু হয় ১৯৪৮ সালের ১ম আরব-ইসরাইল যুদ্ধের। এই যুদ্ধে ইসরাইল বিজয়ী হয় এবং জাতিসংঘ কর্তৃক প্রস্তাবিত ফিলিস্তিনি ভূমিও দখল করে নেয়। পুরো ফিলিস্তিন ভূখন্ড তিনটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে পরে। জর্দানের অধীনে আসে পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমের অংশ, গাজা উপত্যকা চলে যায় মিশরের অধীন এবং পশ্চিম জেরুসালেম সহ ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ৭৮% দখল করে নেয় ইসরাইল। সাত লক্ষ ফিলিস্তিনি এই যুদ্ধের ফলে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। ফিলিস্তিনের ইতিহাসে এই ঘটনাকে স্মরণ করা হয় ‘আল-নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়’ হিসেবে।

 

১৯৬৭ সালের ছয়দিনব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিনে সম্পূর্নরূপে ইসরাইলের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিমতীর ও গাজা অধিকারের পর ইসরাইল সেখানে নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের সূচনা করে। যার ফলে ইসরাইলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়। শুরু হয় আধুনিক কালের অন্যতম বড় গণহত্যার ইতিহাস।

 

এটা স্রেফ সামান্য কিছু তথ্য বিষয়টা বোঝার জন্য। ফিলিস্তিনের উপর কি পরিমাণ আগ্রাসন চলে, সেটা বুঝতে শুধু প্রতিদিনের গণমাধ্যমের খবর গুলোই যথেষ্ট।

 

এদিকে, জেরুজালেমে সোমবার নতুন মার্কিন দূতাবাস আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার আগের মুহূর্তে ইজরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে বিক্ষোভকারী ৫২ প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে। জখম আরও অন্তত ১,৭০০ বিক্ষোভকারী। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই হিংসাত্মক ঘটনার দিনেই জেরুজালেমে আমেরিকার নতুন দূতাবাস খুলল। উপস্থিলেন ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পে বিশেষ উপদেষ্টা, তাঁরই কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প।

 

তাই ফিলিস্তিনের এই পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা দেয়, কিভাবে সাম্রাজ্যবাদ আমাদের গ্রাস করে। তাই আগেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া জরুরি।

 

 

সূত্র: ইজরায়েল-ফিলিস্তিন-সাম্রাজ্যবাদ/জাতিসংঘের দললি/ টিআরটি ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে মুহাম্মদ আল বাহলুলর লেখা কিছু অংশ।