ফেলানী, সীমান্ত আর রাষ্ট্রের রাজনীতি

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৮, ২০১৯

একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম নিষ্ঠুর ছবি এটা। এটা ফেলানী খাতুনের লাশ। শান্তিনিকেতনে থাকা সুবাদে গত ৩বছর ধরে নিয়মিত ভারতে যাতায়াত। প্রতিবার কাঁটাতার দেখে "ফেলানী"র কথা মনে পড়ে, প্রতিবার যে জাতিগত দ্বন্দ্বের ধারনা মাথায় আসে তা দ্রুত কেটে যায়, কারণ বর্ডার অতিক্রম করার পর দেখি আমি সেই একই বাংলায় দাঁড়িয়ে আছি। একই মাটি, একই মানুষ, একই শোষণ। পশ্চিমবঙ্গেও সেই একই ফেলানীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে। সামান্য কিছু মানুষ ছাড়া বাংলাদেশ বিদ্বেষী মানুষ কমই দেখেছি। অথচ শাসক শ্রেণীর সুবিধা আর লুটেরা শ্রেণীর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে এই হত্যাগুলো হচ্ছে রোজ রোজ। বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এ জাতির অন্যতম বড় ব্যর্থতা। এই অঞ্চলের শ্রেণী বৈষম্যের কারণ, ধর্মীয় আর অর্থনৈতিক রাজনীতির বিষয়ে মানুষ যতদিন অজ্ঞ থাকবে, ততদিন ফেলানিরা এভাবেই ঝুলে থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভাই, বন্ধু, কবি, সাংবাদিক অতনু সিংহ আজ এ হত্যা নিয়ে কিছু কথা লিখেছেন। আমাদের শত্রু-মিত্র চিনিতে হবে। এপাড়ের বন্ধুদের এটা পড়া উচিত, তাই উনার লেখাটা এখানে যুক্ত করলাম-

"প্রথমবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরোবার সময় যখন ভারতের ইমিগ্রেশন-কাস্টমসের মুখোমুখি হই, আর দেখি বিএসএফ ও তাদের পুং-বন্দুক, তখন আমি মনে মনে আমাদের বোন ফেলানী খাতুনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম! ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম দুই বাংলার অগণিত নাগরিক সীমান্ত শহীদের কাছে! যাদের হত্যা করেছিল রাষ্ট্র! ফেলানী অখণ্ড বাংলার দুখিনী মেয়ে। শুধুই বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে হিন্দুস্থানি বিএসএফ যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে দশকের পর দশক ধরে, সেই বন্দুক, গুলি ও ভারী বুটের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাওয়া নিখিল বাংলার প্রতীক শহীদ ফেলানী খাতুন।যে মেয়ে সীমান্তে প্রাণ দিয়েছিলেন পুরুষালী ভারত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে!

 

ফেলানী দুই বাংলার মুখ। যে বাংলা জনমদুখিনী, যে বাংলার দু`পাশেই ছোবল আধিপত্য, আগ্রাসন, পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের, ইতিহাসের ও বর্তমানের! যে বাংলা তবু আশা রাখে একদিন গ্রেইট মাদার আর্কিটাইপ কালী কালী পালটা প্রত্যাঘাত ফিরিয়ে দেবে আর্যতন্ত্রে! যেভাবে প্রত্যাঘাত ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল খান সেনাদের।

 

ফেলানী বাংলার মেয়ে, বাংলার মুখ, হে পশ্চিমবঙ্গ ফেলানী হত্যার বিচার দাবি করো! দিল্লিকে প্রশ্নবিদ্ধ করো! ফেলানীকে হত্যা ক`রে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল কাঁটাতারে! ফেলানী সন্ত্রাসী ছিলেন না। তিনি নিতান্তই গরীব ঘরের সাধারণ মেয়ে। আর যদি সন্ত্রাসী হতেনও, তাহলেও হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার লাইসেন্স কে দেয় বিএসএফকে! দিল্লি? ম্যারিকা? কে? এরা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মানুষের ওপর হত্যা আর লুঠপাঠ প্রকল্প কায়েম করে রাখবে আর কতদিন?

 

প্রশ্নবিদ্ধ করুন আপনার রাষ্ট্রকে হে পশ্চিমবঙ্গ! ভারত যুক্তরাষ্ট্র আপনার করের টাকায় আপনার ভাষা ও সংস্কৃতির ভাইবোনকে হত্যা করলে আপনি চুপ থাকবেন? এরপর ওরা আপনার ঘরে ঢুকবে, আপনার পূত্র-কন্যাকে কোতল করবে, তারপর ওড়াবে গেরুয়া ঝান্ডা! ওরা আপনার কালীবাড়ি, দরগা, মাজার, বৌদ্ধমঠ সব ধ্বংস করবে! সেখানে বসবে বানিয়াদের পাপের গণেশ মূর্তি! যে গণেশের পেট ফুলে আছে বাঙালীর হাড়মাংস খেয়ে! আপনি জাগুন পশ্চিমবঙ্গ! ফেলানী হত্যা-সহ বাংলা ও বাঙালি বিরোধী প্রতিটি হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি পদক্ষেপের হিসাব নিন। ফেলানীর স্মৃতি দীর্ঘজীবী হোক। জয় পশ্চিমবঙ্গ, জয় বাংলা।"