বর্ডারের মেয়েরা: বিভীষিকা থেকে জন্ম নেয়া গল্প

তপংকর ভট্টাচার্য্য

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮

মেলায় সংগ্রহ করা বই মঞ্জিরা সাহার `বর্ডারের মেয়ে` পড়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর আন্তরিক তাগিদ অনুভব করলাম। প্রকাশক গাংচিল।

আমাদের কাছের জেলা নদীয়ায় রাণাঘাট থেকে গেদে রেললাইনে বানপুর। কাঁটাতারের বাংলাদেশ বর্ডার। বানপুর গ্রামের মেয়েরা, শিশু থেকে বৃদ্ধা প্রায় সবার জীবিকা চোরাকারবার। লেখিকা নরকের প্রবেশদ্বার খুলে দেখিয়েছেন, এ গ্রামের মেয়েরা কীভাবে অমানবিক, অনেকটা জন্তুর মতো জীবনযাপন করে।

শিউরে উঠি! অসহায় লাগে! দেশভাগের নির্মম পরিহাস, স্বাধীনতার সত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও এই মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা নিয়ে ছেলেখেলা এখনও চলছে। আর আছে বিএসএফ। সীমান্ত রক্ষার নামে অত্যাচার... আর হিংস্র কুটিল উপস্থিতি। এদের সঙ্গে চোর-পুলিশের খেলা, ধরা পড়লে অমানুষিক অত্যাচার, এমনকী প্রাণ সংশয়।

পেটে, পায়ে, থাইয়ে শাড়ির গাঁট থেকে ফেন্সিডিলিন, ভিসিডি মেশিন অথবা চিনির বস্তা কী এক অলৌকিক উপায়ে বেঁধে বর্ডার পার হয় মেয়েরা। তারকাঁটায় শরীর ক্ষতবিক্ষত, তবু পরদিন আবার সেই একই পথে যাত্রা। এ যেন ঘড়ির কাঁটার মতো বাঁধাধরা নিয়তি। ধরা পড়লে মার... যৌন নির্যাতন, এমনকী মৃত্যু।

এর জন্য কোনও প্রতিবাদ হবে না। মিছিল হবে না। এটাই ভবিতব্য, মেনে নিয়ে পরদিন ফের এপার থেকে ওপারে। ওরা বলে, এপিঠ থেকে ওপিঠ। চালের বস্তা, শাড়ি, নুন, চিনি আর ফেন্সিডিলিন নিয়ে নব উদ্যমে যাত্রা।

নরকের এই দরজা খুলে দিয়ে মঞ্জীরা সাহা তার ঝরঝরে গদ্যের সুনিপুণ বর্ণনায় আমাদের এই কালযাপনকে ছবির মতো তুলে ধরেছেন ‘বর্ডারের মেয়ে’ বউতে। এ ব্যবস্থাকে তুলে ধরে লেখক প্রশ্নও তুলেছেন সমাজের প্রতি। অসম্ভব নির্লিপ্তি তার গদ্যভঙ্গিমা। যার প্রতিঘাতে চরিত্রগুলি জীবন্ত হয়ে পাঠককে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে।

একশো একান্ন পৃষ্ঠার এ বইয়ে চরিত্রগুলো নিজেরাই তাদের গল্প বলে। এ গল্পগুলো শেষ বিচারে `বর্ডার` নামক বিভীষিকা থেকে জন্ম নেয়া তিন চার প্রজন্মের পাশবিক জীবনযাপনের গল্প। সুস্থ সুন্দর জীবনের অধিকার কেড়ে নেয়ার গল্প। হিমশীতল আতঙ্ক চেপে বসে যখন অনুভব করি, অমীমাংসিত এই সমস্যা থেকে আাগামী কয়েক প্রজন্মের মুক্তি নেই।

মঞ্জরী সাহা, আপনাকে সাবাস এ রকম একটি পুস্তক রচনার জন্য।

একুশে বইমেলা ২০১৮