বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানসম্মততা: বর্ণমালা ও বানানে

পর্ব ৩

চৈতন্য চন্দ্র দাস

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮

বিশ্বের সকল ভাষার উচ্চারণ লিখবার প্রয়োজনে একটি আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালা তৈরি করা হয়েছে। ১৮৯৬ সালে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিজ্ঞানী পল প্যাসির নেতৃত্বে প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক সংস্থা। এ সংগঠনের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালার নামকরণ করা হয়েছে। মোট ২৮টি স্বরবর্ণ এবং ৬৩টি ব্যঞ্জনবর্ণ। মজার এবং গর্বের বিষয় হলো, বাংলা ভাষার প্রায় সবগুলো বর্ণই এতে রক্ষিত আছে। ভাষাবিজ্ঞানীদের কাছে বাংলা বর্ণমালার গ্রহণযোগ্যতা ছিল এতটাই। এর থেকে একটি বিষয় স্পষ্টতর হয়ে ওঠে যে, বাংলা ভাষায় বর্ণের আধিক্য রয়েছে বলে অনেক ভাষাবোদ্ধা (!) যে মত পোষণ করেন, তা মোটেই গ্রহণীয় নয়। বাংলা বর্ণের আধিক্যের দরকারিতা যে আছে, তার প্রমাণ ভাষাবিজ্ঞানীরা আমাদেরকে দেখিয়েছে।

বাংলা ভাষাই পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার বর্ণমালা সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং সুসজ্জিত। বাংলা ভাষাই একমাত্র ভাষা যার সাহায্যে বিশ্বের সকল ভাষাকে সবচে বেশি গ্রহণযোগ্য করে প্রতিবর্ণীকরণ করা সম্ভব। ইংরেজি ভাষাতেও ড়, ঢ় এবং ‘ত’ বর্গীয় ধ্বনি নেই, ফলে যেমন- তেল, তান, দান, ধান, বাড়ি, আষাঢ় ইত্যাদি বলা সম্ভব হয় না। আরবি ভাষায় নেই ড়, ঢ় এবং ‘ট’ বর্গ। ফলে এ ভাষায় টক, ঠাণ্ডা, দণ্ড, ঢোল, বাড়ি, গাড়ি, রূঢ় ইত্যকার শব্দের উচ্চারণও করা সম্ভব নয়। আবার, স্পেনিশ ভাষায় ‘মহাপ্রাণিত স্পর্শব্যঞ্জন’ ধ্বনি নেই। ফলে বাংলা ঝড়, ঢঙ্কা, ঘাট, রূঢ় ইত্যাদি শব্দও এ ভাষায় উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রায় সকল ভাষার বর্ণমালাতেই অপূর্ণাঙ্গতা রয়েছে। আছে বাংলা ভাষাতেও। যেমন- ইংরেজি ঋ,ঠ, এবং ড এর যথাযথ উচ্চারণগত-প্রতিবর্ণ বাংলায় নেই। কিন্তু ভাব প্রকাশের যাথার্থ্য ও মাত্রাগত আধিক্য বিচারে এবং প্রধানত প্রতিবর্ণীকরণের ক্ষমতার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলা ভাষার অবস্থান বিশ্বের সকল ভাষাসগুলোর মধ্যে সবার উপরে।

আগেই বলা হয়েছে, সকল ভাষাতেই বানানে-উচ্চারণে প্রভেদ রয়েছে। আবার, প্রত্যেক ভাষাতেই বানানের নির্দিষ্ট নিয়মও রয়েছে। দু’একটি ভাষায় আবার বানানের নিয়ম নেইও। এসব ভাষায় প্রতিটি বিষয় বা ভাবের জন্যে নির্দিষ্ট শব্দ আছে। শব্দের বানানের নিয়ম প্রণয়নেও বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতা রয়েছে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যা প্রায় ১.২৫ লক্ষ। এর মধ্যে অধিকাংশই সংস্কৃতানুগ (তৎসম, অর্ধ-তৎসম এবং তদ্ভব)। বাকিগুলোর পরিচয় দেশি এবং বিদেশি শব্দ হিসেবে। উৎস বিচারে এসব শব্দকে আমরা প্রধানত দুটো শ্রেণিতে বিভক্ত করতে পারি। এক. তৎসম শব্দ। খ. অ-তৎসম শব্দ (অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র)। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং একই সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘বাংলা বানান সংস্কার কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নের প্রচেষ্টার সূচনা। দীর্ঘ পরিক্রমায় এ কার্যক্রমের আপাত সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৪ সালে ‘বাংলা একাডেমি’ কর্তৃক ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ প্রণয়নের মাধ্যমে। এরপর থেকেই বানানের এ রীতি মেনে চলবার সরকারি-বেসরকারি প্রয়াস-অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।

উল্লেখ্য যে, বানান নিয়ে দ্বিমত-ত্রিমত-বহুমত যে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তথাপি বাংলা বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দগুলোর অধিকাংশই এ সমস্ত নিয়মের আওতায় আনা গেছে। এ-ও বাংলা ভাষার সার্বিক উৎকর্ষের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এখন প্রমিত বাংলা বানানের কিছু নিয়ম এবং সেসবের বিজ্ঞানসম্মততার প্রসঙ্গটি  দেখে নেওয়া যাক:
(ক) বাংলা শব্দে দন্ত্য ‘ন’ ও  মূর্ধন্য ‘ণ’ এর ব্যবহার:
১. তৎসম শব্দে ঋ, র ও ষ- এর পরস্থিত দন্ত্য ‘ন’ মূর্ধন্য ‘ণ’-তে পরিণত হয়। যথা- ঋণ, তৃণ, রণ, ধারণ, কারণ, আহরণ, অপহরণ, চূর্ণ, বর্ণনা, কর্ণ, পর্ণ, স্বর্ণ, প্রাণ, ত্রাণ, ভ্রুণ, ঘ্রাণ, কৃষ্ণ, বর্ষণ, কর্ষণ, আকর্ষণ ইত্যাদি।
২. ঋ, র, ষ- এর পরে ‘ক’ বর্গ (ক থেকে ঙ), ‘প’ বর্গ (প থেকে ম) এবং য়, হ, থাকলে এদের পরস্থিত দন্ত্য ‘ন’ মূর্ধন্য ‘ণ’ হয়ে যায়। যেমন- রুগ্ণ, সর্বাঙ্গীণ, অর্পণ, রোপণ, কৃপণ, গ্রামীণ, ভ্রমণ, গৃহিণী, ব্রাহ্মণ, অগ্রহায়ণ, বৃংহণ, রমণ (কিন্তু রতন), দর্পণ (অথচ দর্শন) ইত্যাদি।
৩. ট-বর্গের সাথে/পূর্বে যুক্তবর্ণ হিসেবে মূর্ধন্য ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যথা- কণ্টক, হণ্টন, বণ্টন, নির্ঘণ্ট, কণ্ঠ, লুণ্ঠন, অবগুণ্ঠন, দণ্ড, কুণ্ডলী, ভাণ্ডার, কাণ্ড, ঢেণ্ডন, ক্ষুণ্ন, বিষণ্ন ইত্যাদি।
৪. ত-বর্গের সাথে/পূর্বে যুক্তবর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত দন্ত্য ‘ন’ মূর্ধন্য ‘ণ’-তে পরিণত হয় না । যথা- অন্ত, অনন্ত, শ্রান্ত, প্রশান্ত, পন্থা, পান্থ, গ্রন্থ, দ্বন্দ্ব, ক্রন্দন, নন্দন, বন্ধু, প্রবন্ধ, অন্ন, ছিন্ন, প্রসন্ন, সন্ন্যাস ইত্যাদি।
৫. কোনো অতৎসম (অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশী বা মিশ্র) শব্দে কখনও মূর্ধন্য ‘ণ’ হয় না, দন্ত্য ‘ন’ হয়। যথা- গিন্নি, ঘরনি (সংস্কৃতে গৃহিণী), ধরন (রকম অর্থে), অঘ্রান (ঘ্রাণহীন নয়, মাসের নাম), পরান, সোনা, কান, কেরানি (তৎসম- প্রাণ, স্বর্ণ/সুবর্ণ, কর্ণ, করণিক), ঝর্না (তৎসম- প্রসবণ), লন্ডন, ক্যান্টনমেন্ট, বার্নিশ, কুর্নিশ, মেরুন, ইত্যাদি।
৬. কোনো সমাসবদ্ধ শব্দে মূর্ধন্য ‘ণ’ হয় না। যথা- দুর্নাম, দুর্নীতি, সর্বনাম, ত্রিনয়ন, নিরন্ন, নিষ্পন্ন, পরনিন্দা, অহর্নিশ ইত্যাদি।
৭. কোনো ক্রিয়াবাচক শব্দে মূর্ধন্য ‘ণ’ হবে না, দন্ত্য ‘ন’ হবে। যেমন- ধরুন, বসুন, থাকুন ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি কাজটি করুন। কিন্তু ক্রিয়াবাচক শব্দ না হলে ‘ন’ এর স্থলে মূর্ধন্য ‘ণ’ হবে। যেমন- কী করুণ দৃশ্য!

(খ)  বাংলা শব্দে শ, ষ ও স  এর ব্যবহার:
১. ঋ ও র- এর পরস্থিত দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ তে পরিণত হয়। যেমন- ঋষি, বৃষ, কৃষক, মহর্ষি, বরষা, আকর্ষী, তৃষা ইত্যাদি।
২. ট-বর্গের সঙ্গে যুক্তবর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ তে পরিণত হয়। যেমন- কষ্ট, অনিষ্ট, ইষ্ট, দুষ্ট, আদিষ্ট, ওষ্ঠ, কাষ্ঠ, জ্যেষ্ঠ, জ্যৈষ্ঠ ইত্যাদি।
৩. ত-বর্গের সাথে যুক্তবর্ণ হিসেবে দন্ত্য ‘স’ ব্যবহৃত হলে তা দন্ত্য ‘স’ ই থেকে যায়, মূর্ধন্য ‘ষ’ হয় না। যেমন- অস্ত, আস্তে, ব্যস্ত, দুঃস্থ, সুস্থ ইত্যাদি।
৪. ই-কারান্ত (অভি, অধি, পরি, প্রতি, বি...) এবং উ-কারান্ত (অনু, সু...) উপসর্গের পরস্থিত দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ হয়ে যায়। যেমন- অভি+সেক= অভিষেক, অধি+সদ= অধিষদ, পরি+সদ=পরিষদ (কিন্তু সভাসদ), প্রতি+সেধক=প্রতিষেধক, পরি+সেবা= পরিষেবা প্রতি+স্থান= প্রতিষ্ঠান, বি+সম= বিষম (কিন্তু অসম), অনু+সঙ্গ= অনুষঙ্গ, অনু+স্থান= অনুষ্ঠান, সু+সম= সুষম (কিন্তু অসম) ইত্যাদি।
৫. অ, আ ভিন্ন অন্যান্য স্বরের পরস্থিত দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ তে পরিণত হয়। যেমন- ইষণ, ঈষ, উষর, উষা, এষণা, ঐষিক, ওষধি, ঔষধ, দূষণ ইত্যাদি।
৬. কোনো বিদেশি কিংবা অতৎসম শব্দে কখনও মূর্ধন্য ‘ষ’ হয় না। যেমন- স্টার, স্টোর, ফটোস্ট্যাট, ফসল, নকশা, মেশিন, রসদ, রসিদ ইত্যাদি। ব্যতিক্রম: কেবল একটি বিদেশি শব্দে ‘ষ’ এর ব্যবহার রয়েছে। শব্দটি হলো ‘খ্রিষ্ট’। কিন্তু যে যুক্তিতে এরূপ ‘বাংলা একাডেমি’ বানানটি লিখে থাকে তার ভিত খুব মজবুত নয়।
৭. ‘ইঃ’ বা ‘উঃ’ এর পরে ‘ক, খ, প, ফ’- থাকলে সন্ধিবদ্ধ হয়ে বিসর্গ স্থলে মূর্ধন্য ‘ষ’ বসে। যেমন- আবিঃ+কার= আবিষ্কার, নিঃ+কর= নিষ্কর, নিঃ+পত্র= নিষ্পত্র, চতুঃ+পদ= চতুষ্পদ, চতুঃ+কোণ= চুতষ্কোণ, নিঃ+ফল= নিষ্ফল ইত্যাদি।
৮. ‘অঃ কিংবা আঃ’ এর পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ (ঃ) - এর স্থলে মূর্ধন্য ‘ষ’ না হয়ে দন্ত্য ‘স’ হয়। যেমন- পুরঃ+কার= পুরস্কার, তিরঃ+কার= তিরস্কার, নমঃ+কার= নমস্কার, ভাঃ+কর= ভাস্কর ইত্যাদি।

(গ) বাংলা শব্দে  ই/,ি ঈ/ী, উ/ ু , ঊ ূ  এর ব্যবহার:
১. সকল প্রকার অতৎসম শব্দে (অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র) কেবল ই/ি ও উ/ ু হবে। যেমন- বাড়ি (তৎসম বাটী), হাতি (তৎসম হস্তী), চুড়ি, চুরি, দাড়ি, গাড়ি, ভারি (খুব অর্থে, কিন্তু তৎসম ‘ভারী’ শব্দটি ‘ওজনদার’ অর্থে ব্যবহৃত), মুলো (তৎসম মূলা), তুলো, ছুরি, ছুঁড়ি, উনিশ (তৎসম ঊনবিংশ), উনচল্লিশ, পুব (তৎসম পূর্ব), নিচু, কুমির, টুপি, দিদি, ইংরেজি, ফারসি, গ্রিক, ফিরিঙ্গি, আসমানি, কেরামতি, রেশমি, বিবি, ভুখা, জুন, জুবিলি ইত্যাদি।
ব্যতিক্রম : বাংলা একাডেমী ‘চীন’ এবং নিজের তথা ‘বাংলা একাডেমী’ বানানে যুক্তিহীনভাবে ‘ঈ’ কার ব্যবহার করবার বিধান রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি তার পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেনি। অবশ্য, শীঘ্রই এসব বানান যথানিয়মে খোদ বাংলা একাডেমিই (!) লিখবে বলে আমি নিশ্চিত।
২. যে সমস্ত তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয়ই শুদ্ধ, সে সমস্ত শব্দে কেবল ই বা উ হবে। যেমন- কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, পদবি, মাসি, লহরি, উর্ণা, উষা, মসি, সূচিপত্র ইত্যাদি।
৩. তবে কিছু স্ত্রীবাচক শব্দে কেবল ‘ঈ’ হবে। যেমন- রানী, পরী, গাভী, দেবী, নারী ইত্যাদি।
৪. তৎসম বিশেষ্যবাচক শব্দের শেষে ‘ ঈ’-কার যোগ করে বিশেষণ করা হয়। যথা- কর্মী, ঋণী, ত্যাগী, গৃহী, মৌনী, সুখী, লোভী, রোগী, বুদ্ধিজীবী, বিনয়ী, ধনী, উপযোগী, দায়ী, সহযোগী, ভোগী ইত্যাদি।
৫. ‘আলি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই কার হবে। যেমন- বর্ণালি, মিতালি, সোনালি, রূপালি, দীপালি, গীতালি, পুবালি, পূর্বালি, স্বর্ণালি, রাখালি, চৈতালি ইত্যাদি।
৬. প্রশ্নসূচক সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়াবিশেষণ রূপে ‘কী’ শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লিখতে হবে। যেমন- কী করছো ? তোমর নাম কী? কী খেলে ? এটা কী বই? কী করে যাবো ? কী ভাবছেন ?  কী আনন্দ! কী দুরাশা! ইত্যাদি।
আবার, প্রশ্নসূচক অব্যয়রূপে ব্যবহৃত হলে ‘কি’ লিখতে হবে। যেমন- তুমি কি যাবে ? সে কি এসেছিলো ? এটা কি আনন্দ নাকি দুরাশা ? খেলে কি ? ভেবেছো কি ?  এ সমস্ত ক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর হবে হ্যাঁ/না বোধক।

স্মর্তব্য : ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে করা যায় এমন প্রশ্ন ব্যতিরেকে বাকি সকল প্রকার প্রশ্নবোধক এবং প্রশ্নবহির্ভূত ‘কী’- তে ঈ-কার ( ী) ব্যবহার করতে হবে।
৭.  (ক)দূরত্ববাচক শব্দের ক্ষেত্রে ‘দূ’ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- দূর, দূরত্ব, দূরবীণ, দূরদেশ, দূরবাসী, দূরবর্তী, দূরবর্তিণী ইত্যাদি। ব্যতিক্রম: দূর্বা, দূত, দূষণ। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘দু’ হবে। যেমন- দুর্জয়, দুঃখ, দুষ্ট, দুধ, দুল, দুর্মতি ইত্যাদি।
     (খ) ‘রূপ’ সম্পর্কিত শব্দে ‘রূ’ হবে। যেমন- রূপ, রূপা, রূপালি, রূপবতী, রূপবান্, রূপকথা, রূপঙ্করইত্যাদি। অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘রু’ হবে। যেমন- রুটি, রুজি, রুষ্ট, রুমাল, রুটিন, রুহু, রুই ইত্যাদি।
৮. ‘ঈ’ কার যুক্ত বিশেষণ বাচক শব্দকে ইত্ব/ইত/ইতা/ইক/ইকা ইত্যাদি যোগে বিশেষ্য বাচক শব্দ তৈরি করবার সময়ে বিশেষণ বাচক শব্দের শেষের ‘ঈ’-কার ( ী) থাকলে তা ‘ই’-কার (ি ) হয়ে যাবে। যেমন- দায়ী>দায়িত্ব, মন্ত্রী>মন্ত্রিত্ব, স্থায়ী>স্থায়িত্ব, কৃতী>কৃতিত্ব, একাকী>একাকিত্ব (ব্যতিক্রম: সতীত্ব) ; পুষ্প>পুষ্পিত, ক্ষুধা>ক্ষুধিত, কল্পনা>কল্পিত ; উপকারী>উপকারিতা, সহযোগী>সহযোগিতা, বাগ্মী>বাগ্মিতা, পারদর্শী>পারদর্শিতা ; সমসময়>সমসাময়িক, ভূত>ভৌতিক, পথ>পথিক ; উপজীবী>উপজীবিকা, কালী (দেবী)>কালিকা (তুচ্ছার্থে কালীমাতার অপর নাম), দেবী>দেবিকা ইত্যাদি।

চলবে...

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর