বাঙলা ভাষার ইতিকথা ‘কতো নদী সরোবর’

মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮

হাজার বছর আগে জন্ম হয়েছিলো বাংলা ভাষার। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা মানুষের মুখেমুখে রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিলো এক মধুর-কোমল-বিদ্রোহী ‘প্রাকৃত’ ভাষা। নাম তার বাঙলা। তাকে কখনো বলা হয়েছে ‘প্রাকৃত’, কখনো বলা হয়েছে ‘গৌড়ীয় ভাষা’। কখনো বলা হয়েছে ‘বাঙ্গালা’, কখনো ‘বাঙ্গলা’। এখন বলি ‘বাঙলা’ বা ‘বাংলা’।

 

জন্মের সময় বাঙলা ভাষা স্নেহ পায় নি সমাজ প্রভুদের। কিন্তু তা হাজার বছর ধরে বইছে ও প্রকাশ করেছে কোটিকোটি সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ও বাস্তবতা। বৌদ্ধ বাউলেরা এ ভাষায় রচেছেন দুঃখের গীতিকা। বৈষ্ণব কবিরা ভালোবেসেছেন হাহাকার করেছেন এ ভাষায়। মঙ্গলকাব্যের কবিরা এ ভাষায় রচনা করেছেন লৌকিক মঙ্গলগান।

 

এ ভাষায় রচিত হয়েছে আধুনিক মানুষের কতো না উপাখ্যান। এ ভাষার জন্য উৎসর্গিত হয়েছে আমার ভাইয়ের রক্তিম বিদ্রোহী রক্ত। এ ভাষা দীর্ঘশ্বাস ফেললে চন্ডীদাসের কথা মনে পড়ে। তার উল্লাসে মনে পড়ে মধুসূদনের কথা। এ ভাষার থরোথরো ভালোবাসার নাম রবীন্দ্রনাথ। বিজন অশ্র“বিন্দুর নাম জীবনানন্দ। বিদ্রোহের নাম নজরুল। বাংলা আমাদের ভাষা। বাংলা ভাষা ছাড়া আমরা নিজেদের কথা কল্পনা করতে পারি না।

 

কিন্তু কীভাবে জন্ম নিল আমাদের বাংলা ভাষা? ভাষা কি জন্ম নেয় মানুষের মতো? বা যেমন বীজ থেকে গাছ জন্মে, তেমনভাবে জন্ম নেয় ভাষা? না, ভাষা মানুষ বা তর“র মতো জন্ম নেয় না। এখন আমরা যে বাংলা ভাষা বলি, এক হাজার বছর আগে তা ঠিক এমন ছিলো না। এক হাজার বছর পরও ঠিক এমন থাকবে না। বাংলা ভাষার আগেও এ দেশে ভাষা ছিলো। সে ভাষায় এ দেশের মানুষ কথা বলতো, গান গাইতো, কবিতা বানাতো।

 

ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া।

 

মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি। রূপ বদলে যায় শব্দের, বদল ঘটে অর্থের। অনেক দিন কেটে গেলে মনে হয়, ভাষাটি একটি নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষার আগেও এ দেশে ভাষা ছিলো। আর সে ভাষার বদল ঘটেই জন্ম হয়েছে বাংলা ভাষার।

 

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে গেলে বেশ অনুভবী হয়ে উঠবো। হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিলো এক মধুর-কোমল-বিদ্রোহী প্রাকৃত। তার নাম বাঙলা। ওই ভাষাকে কখনো বলা হয়েছে ‘প্রাকৃত’, কখনো বলা হয়েছে ‘গৌড়ীয় ভাষা’।

 

কখনো বলা হয়েছে ‘বাঙ্গালা’, বা ‘বাঙ্গলা’। এখন বলি ‘বাঙলা’ বা ‘বাংলা’। এ-ভাষায় লেখা হয় নি কোনো ঐশী শ্লোক। জন্মের সময় বাঙলা ভাষা স্নেহ পায় নি সমাজ প্রভুদের। কিন্তু তা হাজার বছর ধরে বইছে ও প্রকাশ করছে কোটি কোটি মানুষের মুখের ভাষার স্বপ্নকে।

 

“কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী” বাঙলা ভাষার জীবনের ইতিকথা। এই বইটিতে বাঙলা ভাষার ইতিহাস হুমায়ুন আজাদের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে কবিতার মতো মধুর, সুখকর ও সুন্দর।

একুশে বইমেলা ২০১৮