বাঙালি হাসির হুগোলয়েড

চয়ন খায়রুল হাবিব

প্রকাশিত : অক্টোবর ২১, ২০১৮

সিভিল সার্ভিস বা যে কোনো ক্যাডারভিত্তিক নিয়োগই হয় একটা প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত নবায়নের জন্য। বুড়োরাও চায় যে নতুনরা এসে তাদের চ্যালেঞ্জ করুক, উদ্দিপিত করুক। তা না হলে তো বুড়োরা রাজতন্ত্রই কায়েম রাখতো। কিন্তু ক্যাডার সার্ভিসের নতুনেরা বুড়োদের চেয়েও মান্ধাতার কলুপ আঁটা আচরণ করে। বিদেশে ডক্টরেট আমলা হলে তো কথাই নাই। উচ্ছ্বাসের বদলে জনতাকে মনে করে উচ্ছিষ্টের ভাগিদার। জনতাকে বলে আমজনতা।

সরকারি দলে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে কমিউনিস্টদের, সমাজতন্ত্রিদের বসানো হলো; এতেও কিন্তু নবায়নের, মৌলিক অধিকারবিত্তিক আন্দোলন সম্প্রসারণের সদিচ্ছা প্রকাশ পায়। কিন্তু দেখুন, কোনো তথ্যই স্পষ্টভাবে জানতে পারছি না আমরা; জামায়াতের কুক্ষিগত শিক্ষা কারিকুলামে যা কিছু নিষিদ্ধ্ব করা হয়েছি্ল, বিকৃত করা হয়েছিল, সে-ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো শ্বেতপত্র পাই নাই। ডারউইনসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ বিষয়গুলো আবার যুক্ত হয়েছে কীনা, তাও জানানো হয় নাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্রদের পিছনে প্রাইভেট সেক্টরকে আরো পুঁজি সরবরাহ করাতেও কোনো ভূমিকা রাখছে না এই মামদো-মার্ক্সিস্টেরা। নিজেরাই নামে-বেনামে এনজিও খুলে বসে আছে।

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সরাকারি লবিংয়ে শক্তিশালি হয়ে ওঠা `সাংস্কৃতিক জোট` ও `জাতীয় কবিতা পরিষদ` একেক সরকারের সময় একেক ভোলে ভেল্কি দেখাচ্ছে। `বেঙ্গলে` অনুষ্ঠান করে কন্যা আলেয়া শরাফির সামনে সদ্যমৃত কলিম শরাফিকে কটুকাটব্য করছে `বেঙ্গলের` বেতনভূক প্রাগ্রসরেরা। `জাতীয় কবিতা পরিষদ` এ মূল প্রবন্ধ পাঠের নামে গালাগাল করা হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা শামসুর রাহমানকে। তথাকথিত কোরাম ডেকে বহিস্কার করা হয়েছে মোহন রায়হানকে। এসব নিয়ে বলার বেলায় কথিত কবিতাসেবী, সংস্কৃতিজীবিরা ক্যাডার সার্ভিসের devide and rule মেধা-লোপাট-রাজনীতি। বোঝাই যাচ্ছে না কোনটা নেড়ি কুকুরের ডাক, কোনটা জাত কুকুরের স্কিতজোফ্রেনিয়ার বৈলক্ষণ।

ফরাসি সমাজতন্ত্রীদের বৈপরিত্য, বিশেষ করে বুর্জোয়া আচরণের প্রতি সহানুভূতিকে ব্যঙ্গ করতে ফরাসি-রোমানিয়ান উদ্ভট নাট্যকার আয়োনেস্কো কট্টর সমাজতন্ত্রী ভিক্টর হুগোকে স্যাটায়ার করে লিখেছিল, `হগোলয়েড`! তার আগে অবশ্য `গণ্ডার’ নাটকে কমিউনিস্টদের ফ্যাসিবাদে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা নিয়ে লিখেছিল আয়োনেস্কো। এসব লেখাই সমাজতন্ত্রীদের আরো গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। অবশ্য কমিউনিস্টদের অবস্থা সেই কয়লা ধুলেও ময়লা না যাওয়া...

সৈয়দ শামসুল হক, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, নির্মলেন্দু গুণ, তিনজনকে নিয়েই `বাঙালি হাসির হুগোলয়েড` হতে পারে। অবশ্য বাঙালি আয়োনেস্কো এখনো নিখোঁজ!