বিজয়ের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭

আজ মহান বিজয় দিবস। এ দিবস বাঙালির আত্মঅহংকার। এ জাতির গৌরব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এদিনে অসংখ্য বাঙালি তার মনোভাব জানাচ্ছে। ছাড়পত্র সেখান থেকে কয়েকজন কবির উচ্ছ্বাস তুলে ধরছে

আবু হাসান শাহরিয়ার

ফারুক কমাণ্ডারের অধীন একাত্তরে আমি সশস্ত্র কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। ট্রেনিংও আছে। নিজে রণাঙ্গনে অস্ত্রহাতে পাকহানাদার বাহিনির মোকাবিলা করার আগেই ১৬ ডিসেম্বর ভৌগোলিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বাঙালির। অস্ত্র জমা দিলেও স্বপ্ন ও ট্রেনিং হাতছাড়া করিনি। চূড়ান্ত বিজয় আজও অর্জিত হওয়ার বাকি। অগণন সাধারণের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত যুদ্ধের মাঠ ছাড়ছি না। সনদের পরোয়া করি না। নিকুচি করি দলকানাদের। মানুষে মানুষে বিভাজন সৃষ্টিকারী ধর্মান্ধদের করি ঘৃণা। তাবৎ অসুন্দরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার আমার কলম।
জয় বাঙলা।

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

একাত্তরের এ রাতেও কেউ আঁচ করতে পারেনি আগামীকাল পাকিস্তানি সৈন্যদল আত্মসমর্পন করবে। বিজয় আসবে।
আমাদের রাতও ছিলো নয় মাসেরর অন্যান্য রাতের মতো দুশ্চিন্তার রাত।
আব্বা (এডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান, এমএনএ এবং ৭ ও ৬ নং সেক্টর (অর্ধেক) এর লেঃ জেঃ পদমর্যাদায় সিভিল এফেয়ার্স এডভাইজার) মিত্র বাহিনীর সাথে ৪ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁ মুক্ত করে দিনাজপুরের রণাঙ্গনে অবস্থান করছিলো।
বরাবরের মতো আম্মার সাথে আমরা সেই রাতে রাইগঞ্জের মোহনবাটি বাজারের বাসায় আব্বার নিরাপত্তার কথা ভেবে মন খারাপ করে সময় পার করেছি।
কিন্তু আগামীকালের সূর্যটা আলাদা ছিলো। ছিলো বিজয়ের প্রভাত আনা সূর্য।

তুষার গায়েন

ঋতু পরিক্রমার মত, উদযাপনের সব চিহ্ন নিয়ে প্রতি বছর বিজয় দিবস আসে। সেই গান, সেই ফুল, সেই পতাকা, সেই থরথর রক্ত-আবেগের তীব্রতায় মাখা আনন্দ আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে। শুধু সেই প্রতিজ্ঞা ও প্রত্যয় ফিরে আসে না, সেই বিশ্বাস ও আদর্শ ফিরে আসে না। যে অন্ধকার ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এই বিজয়প্রাপ্তি, সেই অন্ধকার ও অমানবিকতা বিভিন্ন বর্গে বিস্তৃত হয়ে দন্ত বিকশিত করে আসে, আমাদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করে হাসে। আমরা যা চেয়েছিলাম চেতন-অবচেতনের আলো-অন্ধকারে, তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারি নি, আত্মাহুতি দিতে পেরেছি, কিন্তু অধিকার করতে পারি নি। তাই পদে পদে এত বাঁধা, সংশয় আর সংহারের জালে বন্দী জাতির জীবন। অনেক বিভ্রান্তি এবং ব্যর্থতার পর, আত্মোপলব্ধির আগুনে পুড়ে একদিন প্রকৃত বিজয়ের আস্বাদ বাঙালি গ্রহণ করতে পারবে, এই প্রত্যাশা নিশ্চয়ই করা যায়।
আজকের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা, সেই অনাগত কালের বিজয় দিবসের আনন্দকে স্পর্শ করুক!

তুষার রায়

জীবনের দামে কেনা স্বাধীনতা ৪৬ বছর পার করলো। তবু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূরের বাতিঘর। প্রতিষ্ঠা পায়নি সাম্য। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ আজো স্বপ্ন।৭১-এ সংখ্যালঘু শরণার্থীর উত্তরপুরুষেরা আজো হেঁটে চলে সীমান্তের পথে। অবিরাম। নি:শব্দে। তাদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না।। বিশ্বজুড়ে সংখ্যালঘুদের কোনো দেশ নেই, মাটি নেই। শুধু নিরন্তর নীড় খুঁজে চলা। শেষে অসীম শূন্যতা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম- কাফেলা দীর্ঘই হয়।
পৃথিবীর কোনো সংখ্যালঘু কোনোদিন ঠিকঠাক বুঝতে পারে না কখন মুখ বদলে যায় মুখোশে আর কখনই বা মুখোশ হয়ে ওঠে মুখ। এর মাঝেও মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সকলকে। অনন্ত শ্রদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের সকল নিপীড়িত বীরকে। আজ থেকে প্রত্যেক মৌলবাদীর মুখ হয়ে উঠুক একটি জাগ্রত বাংলাদেশ।