বিদায় ‘কলকাতার যিশু’

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮

যিশুর জন্মদিন। কলকাতা সেজে উঠেছে আলোতে। বাংলাদেশের ৯০ দশকের অন্যতম প্রধান কবি চঞ্চল আশরাফ এবং পশ্চিমবঙ্গের আরেক গুরুত্বপূর্ণ কবি অতনু সিংহ চায়ের দাওয়াত দিলেন, এক বাক্যে রাজি হলাম। সন্ধ্যায় কলকাতার নন্দনে আড্ডা হবে, পরিকল্পনা পাকা। সাথে ছিল কলকাতার বন্ধু পৌশালী মিত্র।

পার্ক স্ট্রিট হয়ে নন্দনে যেতেই শুনলাম, যিশুর জন্মদিনে প্রস্থান করেছেন ‘কলকাতার যিশু’। খুব প্রিয় একজন কবি, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তার কবিতা ভয়াবহ প্রিয়। খবরটা শুনে রীতিমতো ধাক্কা খেলাম।

কিছুটা মানসিক অস্থিরতা নিয়েই আড্ডা এগোচ্ছিল। বারবার নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা আর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েই আলাপ উঠছিল। এমন সময় দেখি, নন্দনে পুলিশ রাস্তার দুই পাশের মানুষকে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো ভিআইপি আসছে। তাই আগ্রহ দেখাইনি আমরা কেউই। তারপর বন্ধু পৌশালী জানালো, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মরদেহ যাচ্ছে। আমরা শুধু চুপ করে বসে থাকলাম, এক মহান কবির শেষযাত্রার সাক্ষি হয়ে।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন তিনি। গত ৯ তারিখ তাকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার, হার্ট অ্যাটাক হয় বলে জানান চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার, বেলা বারোটা পঁচিশ নাগাদ হাসপাতাল থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তবে অসুস্থতা তাকে কাবু করতে পারিনি কোনো কালেই। সাম্প্রতিক সাহিত্য ও রাজনীতি নিয়েও তিনি সজাগ ছিলেন।

‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’ কিংবা ‘উলঙ্গ রাজা’র মতো কবিতার স্রষ্টাকে নিয়ে আর কিছুই বলার নাই। তার কবিতা আজও মুক্তিকামী মানুষের জন্য অন্ধকারের আলোর মতো। নিমতলা মহাশশ্মানে সম্পন্ন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শেষকৃত্য।

কলকাতা, শীতকাল, ২০১৮