অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

বিবেকের ব্যবচ্ছেদ

চৌধুরী মুহাম্মদ রাশেদ

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৪, ২০১৮

চীনের দক্ষিণ প্রদেশ ক্যান্টনে পুরুষরা শারীরিক শক্তি বাড়াতে ভ্রূণ খেয়ে থাকে।  এ সাব-কন্টিনেন্টে যেমন হার্বাল মেডিসিন নিয়ে খুব হৈ চৈ তেমনি ওই প্রদেশে পাবেন হার্বাল বেবি স্যুপ, যা অপূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ দিয়ে তৈরি। তাইওয়ানে মৃত শিশুরা ৭০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয় এবং তাদের দিয়ে তৈরি হয় গ্রিল। আমরা চিকেন গ্রিল খাই আর তারা খায় বেবি গ্রিল। হংকং এর Next ম্যাগাজিনে এমন তথ্যই প্রকাশ্যে এসেছিল।
ভ্রূণ হত্যায় বিশ্বে চীন ও ভারত হলো কুখ্যাত। ১৯৭১ সালের পর থেকে চীনে প্রায় ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য মতে, ভারতে প্রতিবছর প্রায় ১১ লাখ ভ্রূণ হত্যা করা হয়। এছাড়া গর্ভপাত ঘটানোয় প্রায় ৮০ হাজার নারীর মৃত্যু ঘটে। গবেষণা সংস্থা গাটমেচারের জরিপে, এ দেশে বছরে প্রায় ৬ লাখ ৪৬ হাজারের অধিক অ্যাবর্শান হয়। এ অ্যাবর্শান করা বা আবর্শানোত্তর সংক্রমণে প্রায় ৭ হাজার নারীর মৃত্যু হয়।
আমি একে অ্যাবর্শান বা গর্ভপাত কোনোটাই বলি না? বলি নৃশংস হত্যা। এই নৃশংসতার বেশ ক`টি প্রক্রিয়া রয়েছে। ভ্রুণের বয়স ১৩ সপ্তাহের কম হলে সাকশন অ্যান্ড অ্যাসপিরেশন পদ্ধতিতে জরায়ুতে সাকশন ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয়। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের চেয়ে প্রায় ২৯ গুণ বেশি চাপ প্রয়োগ করা এই টিউব ক্ষণিকের মধ্যেই ভ্রূণ শুষে আনে। ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ বা তার বেশি হলে তখন এ পদ্ধতি আর কার্যকর হয় না। সেক্ষেত্রে ডায়ালেশন অ্যান্ড ইভাকুয়েশন পদ্ধতিতে প্রায় ১৩ সে.মি লম্বা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি সোফার ক্ল্যাম্প নামক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটি অনেকটা লম্বা কাঁচির মতো, মাথা সূক্ষ্ম খাঁজকাঁটা এবং বেশ ধারালো। এই সোফার ক্ল্যাম্প ইউটেরাসে প্রবেশের পর শিশুর প্রতিটি অঙ্গ আলাদা আলাদা করে কেটে টেনে হিঁচড়ে বের করা হয়। মাথা বের করা বেশ কঠিন তাই সোফার ক্ল্যাম্প দিয়ে মাথা ঠিক ততক্ষণ চেপে ধরে রাখা হয় যতক্ষণ ভেঙে চুর্মার না হয়। এরপর বের করা হয়। এছাড়া পোস্টাগ্ল্যান্ডিন হরমোন ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রসব ব্যথা তৈরি করে প্রথমে শিশুটি জীবিত প্রসব করিয়ে এরপর মেরে ফেলা হয়। এভাবে একটা নৃশংস হত্যার সমাপ্তি ঘটে।
যদি ভেবে থাকেন যে, শিশু জন্মগ্রহণ করেনি, তাই সে বোধয় ব্যথা অনুভব করতে পারে না, তবে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ব্যথা অনুভব করার
পুরো ক্ষমতা তাদের থাকে। এটা প্রথম প্রমাণ করেন ডা. বার্নার্ড নাথানসন। The Silent Scream নামক ২৮ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তিনি তৈরি করেন, যা ইউটিউবে পাবেন।
কথা হলো, চীনে না হয় এতদিন এক শিশুনীতি নির্ধারিত ছিল, তাই হত্যার সংখ্যা এত বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে এই নৃশংসতা বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? কারণটা সবার জানা, শুধু স্বীকার করতে দ্বিধা হয়। যে সমাজে বিয়েকে কঠিন করা হয়, ছেলেরা মনে করে এটা জঞ্জাল আর মেয়েরা ভাবে পরাধীনতা। উভয়ই মনে করি, এতে ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে। বলে রাখা ভালো, এ ৬ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি গর্ভপাতই ঘটে পবিত্র (?) প্রেমের কারণে। বর্তমান প্রেম, লিভ টুগেদার, অবাধ নষ্টামি যতটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে উল্টোদিকে বিয়েকে মনে করা হচ্ছে ব্যাকডেটেট কোনও মাধ্যম। কিছুদিন আগে এক মেয়ে লিখেছিল, বিয়ে আর ধর্ষণের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।
জানি না, সেই মেয়ে নিজের বাবাকে ধর্ষক মনে করে কিনা? বিয়ে মানে বিশ্বাস, আস্থা, পবিত্রতা এবং ইবাদতের অন্যতম মাধ্যম।
অনেক বিবাহিতা আছে, ক্যারিয়ারের কথা ভেবে হামেশাই গর্ভের সন্তান খুন করে। আবার কিছু দম্পতি, বোল্ডলি অ্যাবর্শানকে সমর্থন করে এই জন্যে যে, বিয়ে হয়েছে মাত্র কটা দিন এখনই বেবি! বলে রাখা ভালো, এর পরিণাম কখনই শুভ হয় না। এ দেশে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার নারীর মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও দীর্ঘায়িত রক্তক্ষরণ, ইনফেকশন আবার কারও ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক হয়ে আজীবনের জন্য বন্ধ্যা হয়ে যেতে হয়। মাতৃত্ব, পিতৃত্ব হলো আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত। এর মর্ম যারা না বোঝে তারা পাপী। মূর্খ। বিয়েকে যতই পরাধীনতার শৃঙ্খল মনে করি না কেন, একটা নির্দিষ্ট বয়স পর মা ডাক শোনার আকুলতা যতই থাকুক না কেন, তা আদৌ সম্ভব না। যে নারীর এ আকুলতা নেই, আমি তাকে নারী বলেই মানি না। অনেকে এটা ভাবেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমি সংসার করতে বলছি, ব্যাপারটা তা নয়। দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য থেকে পিছপা হতে চাই না, কাউকে পিছপা হতে বলছি না। বলছি বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিতে। কঠিন বাস্তবতা হলো নারী-পুরুষ বয়স বাড়ার সাথে আগামী প্রজন্ম ক্রোমোসোমাল অ্যাবনর্মালিটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং এটাও বলছি, কুরুচিপূর্ণ লাইফস্টাইলকে সমর্থন না জানানো। ডাস্টবিনে, ড্রেনে যখন কুকুর বিড়াল নিষ্পাপ প্রাণগুলো কুড়ে কুড়ে খায় তখন কোথায় থাকে বিয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে লিভ টুগেদার, রুম ডেটকে সমর্থন জানানো আধুনিক মানব-মানবীরা? তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা কেন হবে না? এমন লাইফস্টাইলের ফলেই নির্মম হত্যার শিকার হয় এসব নিষ্পাপ প্রাণগুলো।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শেষ কোথায়, কে জানে! নিজের সন্তান নিজে হত্যার দায় আজীবন বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা আছে তো? বিয়ে বহির্ভূত শরীরী আনন্দ যখন জিনার মতো মারাত্মক পাপে কনভার্ট হয়, তখন আল্লাহর কাছে হিসাবটা দিতে পারবেন তো?
বিবেক কী বলে, শুনুন।