বিয়েবাড়ি, তারাবাত্তি ও রাজ্জাক-শাবানা

রাজীব জবরজং

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৬, ২০১৮

উনিশশো কত সাল যেন, মনে নাই।
তখন আমরা একটা মফস্বল শহরে ভাড়া বাসায় থাকি । বাসার পাশেই বেলাল ভাইয়ের দোকান । দোকানের সবচেয়ে দামি কাস্টমার হিসেবে তারসাথে আমাদের সখ্য গড়ে উঠেছিল । সে সুবাদে তার বিয়েতে আমাদের পুরো পরিবার দাওয়াত পায়। তার বিয়েতে তাদের বাড়ির রাস্তায় তারাবাত্তি (আলোকসজ্জা) লাগায় । গায়ে হলুদের দিন তপন চৌধুরীর গান বাজে ডেকসেটে। আমি হেঁটে যাচ্ছি। তারাবাত্তি জ্বলে আর নেভে। ব্যাকগ্রাউন্ডে তপন চৌধুরীর গান। নিজেরে খুব দামি দামি লাগতে শুরু করলো।
আমি রাস্তা ধরে বারবার হেঁটে যাই আর নিজেরে মনে মনে জগতের বাদশা ভাবতে শুরু করলাম।
কিছুক্ষণ পর ভেতরে গেলাম। মানুষজন হলুদ লাগাচ্ছে বেলাল ভাইয়ের গালে। বেলাল ভাইয়ের ছোটভাই খোকন ভাইয়ের বন্ধু মিয়াভাই ছবি তুলছেন ক্যামেরায়। আমার কাছে তখনকার চূড়ান্ত আগ্রহ গিয়ে ঠেকলো মিয়াভাইয়ের হাতের ক্যামেরায়। কিছুক্ষণ পর আর মিয়াভাইকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
রাত বাড়তে থাকলো। একদিকে বেলাল ভাইয়ের হাতে মেহেদি লাগাচ্ছে তার আত্মীয়রা, আরদিকে ভিসিআরে সিনেমা দেখাচ্ছে বাড়ির উঠানে। আমিও সিনেমা দেখতে বসে গেলাম। সিনেমার নাম অন্ধ বিশ্বাস। নায়ক দুজন, নায়িকাও দুজন। আলমগীর, রাজ্জাক, নূতন ও শাবানা।
সিনেমা দেখতে দেখতে আমি মনে মনে খালি তারাবাত্তির রাস্তায় চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কিভাবে যেন সিনেমায় ডুবে গেলাম। একবার আমি রাজ্জাক তো খানিক পরেই আলমগীর।
গায়ে হলুদের রাত আরও বাড়তে থাকে। হঠাৎ আম্মা এসে বললো, চল বাসায় যাই। আমার বাসায় যেতে ইচ্ছা করলো না, এরপরও বাসায় গেলাম। প্রায় ভোর হবার আগপর্যন্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে একবার তারাবাত্তি একবার রাজ্জাক-শাবানা, একবার ছবি তোলার ক্যামেরা একবার আলমগীর-নূতন...