বুদ্ধিবৃত্তির স্তর

অমিতাভ পাল

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২২, ২০১৮

বুদ্ধিবৃত্তির স্তর কখনোই এক জায়গায় স্থির থাকে না। গুহায় বাস করতো যে মানুষ, তার বুদ্ধিবৃত্তির স্তরে ইলেকট্রিসিটি বিষয়টি ছিল না। আর আজ বুদ্ধিবৃত্তির তলানি মানে একেবারে ভিত্তিস্তরে এর অবস্থান। ভাতের মতোই বিদ্যুৎ আমাদের মৌলিক চাহিদার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তেমনি আজ যাকে বুদ্ধিবৃত্তির স্তর বলছি আমরা, একশ বছর পরে তা হয়তো ভিত্তি হয়ে যাবে। গুহার যুগে মানুষ যা ভেবেছিল, জ্ঞানের শক্তির কারণে তা আজকাল আমরা আর ভাবি না, এগিয়ে গেছি কয়েক ধাপ। এই এগিয়ে যাওয়ার লক্ষণ হলো, এখন জীবনযাপনে কায়িক পরিশ্রম করতেই হয় না মানুষকে। অবশ্য কৃত্রিম বৈষম্য সৃষ্টি করে আমরা বাধ্য করি কাউকে কাউকে কায়িক পরিশ্রমে। কিন্তু গুহাযুগের তুলনায় সেই পরিশ্রম অঙ্কের ভাষায় নেগলিজিবল।

অর্থাৎ বলা যায়, অতীত মানুষের চিন্তা আমাদের পথচলা শুরু করতে সাহায্য করেছে বটে কিন্তু আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারেনি। তাই মানুষকে বুদ্ধি ও জ্ঞানের চর্চা করতে হয়েছে জীবনকে সহজ করবার জন্য। আর জীবন যতে সহজ হয়েছে, পরিষ্কার হয়েছে, প্রাচীন চিন্তা পিছনে পড়েছে ততে।

অধ্যাত্মবাদও প্রাচীন মানুষেরই ভাবনাজাত। আমরা যা বুঝতে পারতাম না, তাকে বোঝার জন্য একদল যেমন চারপাশ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার পথ বেছে নিয়েছিল, আরেকদল তেমনি বিষয়টাকে পরিশ্রমের কঠিন পথে না নেমে অজানা এক শক্তির কল্পনা করে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমাদের পথ চলা শুরুর সময় এইরকম কল্পনার দরকার ছিল। কারণ এই কল্পনা আমাদের অজানাকে খুঁজতে সাহায্য করেছে। আর খুঁজতে খুঁজতে আমরা পৌঁছে গেছি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির গূঢ়তায়। আর সেখানে পৌঁছে আমরা অন্তত বুঝেছি, আমাদের নিয়ন্ত্রক আমরাই।

কিন্তু মানুষ যেহেতু কৌতূহলী, তাই অজানাকে আরো অজানা বানানোর চেষ্টাও থেমে থাকেনি, দেখিতো এপথে সত্যিই কিছু পাওয়া যায় কিনা— এই ভেবে। সেইসঙ্গে অজানাকে অজানা বানিয়ে রাখতে পারলে যেকোনো অর্থ দিয়ে এটাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করা যায়, এটাও বুঝেছিল কেউ কেউ। তাই এদের তৈরি করা গোলকধাঁধায় ঘুরছে কিছু মানুষ।

অবশ্য এই গোলকধাঁধার মধ্য হাবুডুবু খেতে খেতে মাথা তুলেছে প্রতিভা। কারণ প্রতিভা একটা টুল এবং সে জানে না তাকে কোথায় ব্যবহার করা হবে। যেকোনো ভালো যন্ত্রের মতোই যে কাজে তাকে লাগানো হবে, সেটাই সুষ্ঠুভাবে করবে সে। ফলে অধ্যাত্মবাদের গোলকধাঁধাতেও ফুটেছিল কিছু মনোমুগ্ধকর ফুল। কিন্তু দিন যতোই গেছে ততেই স্পষ্ট হয়েছ, মনের ঘরে এদের সাজিয়ে রাখা যায় কিন্তু এই বিরূপ মহাশূন্যে এর আর কোনো প্রয়োজনই নেই। কিন্তু গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকা মানুষগুলিকে সেটা বুঝতে দেয় না অজানাকে অজানা হিসাবে রেখে দিয়ে নিজের স্বার্থের কাজে লাগানো সেই গোষ্ঠীটা। ফলে গোলকধাঁধা আছেই আর আমরাও ঘুরে মরছি এক অদ্ভুত চিন্তাহীন সান্ত্বনায়।

এখন আমি চিন্তা করতে পারি না বা আমার এইটা ভালো লাগে, পৃথিবীতো এইপর্যন্ত সীমিত না!

লেখক: কবি