সংগৃহীত

সংগৃহীত

বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৬

সরদার মেহেদি হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ০১, ২০১৮

মানুষের ভাবনার পরিধি অসীম
ভাবনার রং কখনও তিতা, কখনও মিষ্টি আকাশের রংধনুর মতো। অনেকটা কার্ভ, আমরা কার্ভকৃত রেখার মতো বাঁকিয়ে চলতে কতই না পছন্দ করি। আপনি জানেন ধূমপান বিষপান। তারপরও আপনি অবাধে সিগারেট পান করেই চলেছেন। চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। আপনি জানেন, এইডস একটি মরণ ব্যাধি। তারপরও মানুষ অবাধে পতিতাপল্লীতে যাচ্ছে প্রটেকশন ছাড়াই বসার জন্য। যদিও দেশের প্রতিটি পতিতাপল্লীতে কঠোরভাবে একটি জিনিস মেনে চলতে হয়, তা হচ্ছে, বসার সময় প্রটেকশন ব্যবহার করতে হবে। এ কাজটি করার জন্য বেশ কয়েকটি এনজিও কর্মকৌশল করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। একদিন এক যৌনকর্মীকে প্রশ্ন করলাম, তুমি দিনে কতজন খদ্দের নিতে পারো?
সে জবাব দিল, প্রচুর কষ্ট হয়, তারপরও পেটের দায়ে দিনে অন্তত ১০/১২ জন নিতে পারি।
আজকে কতজন নিয়েছো?
সে তার ঘরের কোণে রাখা একটি ছোট্ট কৌটা দেখিয়ে বলল, গুনে দেখো।
বলো কি!
আমি যতগুলো খদ্দের নিয়েছি, ততগুলো কনডম এ কৌটাতে আছে।
এই নোংরা জিনিসগুলো কৌটাতে রাখার কি দরকার?
দিনশেষে এনজিওর আপারা আসে এবং গুনে নিয়ে চলে যায়।
তাতে তোমার লাভ কি?
আমার লাভ, যতগুলো কনডম তারা নিয়ে যায়, ততগুলো নতুন কনডম ফ্রি আমাদেরকে দিয়ে যায়। আরও সুন্দর সুন্দর জিনিস দেয়। আমরা এইডস থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারছি, এগুলো যত্রতত্র ফেলে দিলে আমাদের ছোট শিশুরা খেলার ছলে মুখে তুলে নিতে পারে। কিন্তু এর ফলে শিশুগুলো নিরাপদে থাকবে।
আচ্ছা, তোমরা কনডমকে কি যেন বল?
টুপি বলি। কনডম কথাটা বলতে কিংবা শুনতে লজ্জা লাগে।
টুপি কেন? অন্য শব্দও তো ব্যবহার করা যেত।
তা জানি না। সবাই বলে, আমিও বলি।
কেউ যদি প্রটেকশন ব্যবহার করতে না চায়, তাহলে কি করো?
লাত্থি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেই।
কেউ যদি টাকার লোভ দেখায়?
তাতেও আমি নেই না। তবে কাউকে কাউকে নেই, আমার কি? আদা খাবে, ঝালে বুঝবে!
আচ্ছা, আমি যদি তোমার সাথে প্রটেকশন ছাড়া বসতে চাই?
তুমি তো খদ্দের নও। তারপরও বসতে দিব না।
বলো কি? আমার জন্যও!
কি? বইতে ইচ্ছা করছে?
ধরে নাও করছে, এখন কি করবা?
তোমাকে নিয়ে গিয়ে ব্লাড টেস্ট করে নিয়ে আসবো।
বলো কি? ব্লাড টেস্ট করবা কোথায়?
কেন? আমাদের এখানে স্বাস্থ্য ক্যাম্প আছে। সেখানে ব্লাড টেস্ট করা যায়।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
তোমাদের বাবুদের কি ব্লাড টেস্ট করা থাকে?
হ্যাঁ। তারা তো স্বামীর মতো। তারা প্রটেকশন নেয় না। তাদের আগেই ব্লাড টেস্ট করা থাকে।
তোমাদের এখানে এইডস রোগী আছে ক’জন?
জানি না।
জানো না? নাকি বলবা না?
ক্যামনে কই? জানি না তো।
আচ্ছা ঠিকাছে।

সোনার বাংলা চিল্ড্রেন হোমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চাদের ভর্তি করানো যায়। ভর্তির পর থেকে পড়ালেখা, বিয়ে দেয়ার আগপর্যন্ত সব দায়িত্ব এ হোমের। আমার প্রশ্ন, এখানে ভর্তি আসন ছেলেমেয়ে দিয়ে প্রায় একশো। পল্লীর বাচ্চার সংখ্যা তো অনেক। সেক্ষেত্রে এ পল্লীর মায়েরা যদি তিন-চার বছরের বাচ্চাকে এনে বলে, তার বয়স পাঁচ-ছয় বছর, তাহলে?
হোমের উত্তর: বাচ্চার ডান হাত দিয়ে মাথার পিছন দিক দিয়ে ঘুড়িয়ে বাম কান ধরতে বলব। পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা এভাবে কান ধরতে পারে না।
হা হা হা... দারুণ পদ্ধতি।
হোমে ভর্তির পর থেকে মায়েরা কখনও দেখা করার জন্য পল্লীতে নিতে পারে না। বরং মাসের একটা নির্দিষ্ট দিন হোমে গিয়ে দেখা করতে পারে। এরকম আরো অনেক নিয়মাবলি আছে।
আপনার-আমার বোন কিংবা সন্তান একটু সাবালিকা হতেই যদি বলে, বাবা নাও, আমার জীবনের প্রথম দেহ ব্যবসার টাকা তোমার হাতে তুলে দিলাম। তখন আমাদের এ সভ্য জগতের বাবারা কি বলবেন? আর সেখানে তো মা তার সন্তানকে বড় করে তুলছে। কবে মেয়ে তার শরীর বিক্রির টাকা তার হাতে তুলে দেবে। এটাই মনে হচ্ছে আমাদের থেকে তাদের মূল্যবোধের পার্থক্য।

চলবে...