বেশ্যাকন্যা

পর্ব ২৪

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ২০, ২০১৮

ঝুমু মেয়েটি অনেক সাদাসিধে মন-মানসিকতার। সে সব কথা অন্যের মুখের উপর অবলীলায় ছুড়ে দিতে পারে। এটি তার সহজাত অভ্যাস। ওড়নাটা কেন জানি তার বুকের ওপর থাকতেই চায় না। মানুষ কতই না স্বপ্ন দেখে, আহারে! আমি যদি মেয়েটির ঠোঁটের লিপিস্টিক হতে পারতাম! মেয়েটির পরনের ওই...টি যদি হতে পারতাম! কিন্তু বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন। এখন কেউ আর শখ করে বলবে না, আহারে আমি যদি মেয়েটির বুকের ওড়না হতে পারতাম! কারণ ইদানীং ওড়না নারী অঙ্গের কাঁধের ওপর যেভাবে অবহেলায় তাচ্ছিল্যভাবে পড়ে থাকে, তাতে ওড়না হবার ইচ্ছা কারও মনে জাগবে না।
জিজ্ঞেস করলাম, কি, অশান্ত বুকের অব্যক্ত চাউনি ঢাকবে কে?
ঝুমু বলল, বুঝলাম না।
তোমরা নারীরা বরাবরই অবুঝ। নাকি ইচ্ছা করেই বোঝো না?
তুমি মিডিয়ার মানুষ, কি কও বুঝি না।
আমি কি দেখছি?
তুমি আমার বুকের দিকে তাকায়ে আছো।
কেন তাকায়ে আছি? তোমারটা কি...
ঝুমু এবার নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে বলল, ও আচ্ছা। বললেই হতো বুকের ওপর ওড়না নেই।
ওড়না ঠিক করতে করতে সে জিজ্ঞেস করল, আমি কি দেখতে খুব খারাপ?
আমি কি বলেছি?
তুমি কি আমাকে ভালবাসবে?
ভালো তো বাসিই।
বিয়ে করবা?
তা করা যেতে পারে।
তোমার পরিবার মেনে নিবে?
মনে হয় না। তোমার পরিবার তোমাকে এখন মেনে নেয় বা নিবে?
তারা আমাকে মেনে নিতে চায় না, আমি খারাপ, আমি বেশ্যা।
এখন বুঝতে পারছো? সমস্যা তোমার কিংবা আমার ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, সমস্যা সমাজের। সমস্যা আদি অনন্তকালের প্রবাহমান সময়ের। এটা থেকে বের হতে হলে সমাজকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। তোমাকে সুযোগ করে দিতে হবে এই পেশা থেকে বের হবার জন্য। তবেই হয়তো সম্ভব কিছু একটা ভাবার। কিছু একটা করার।
তুমি অনেক ভালো মানুষ।
কে?
তুমি।
আমি?
হ্যাঁ, তুমি।
কি দেখে মনে হলো, আমি ভালো মানুষ?
তোমার কি মনে হয়, আমরা খোঁজ-খবর রাখি না? তোমাকে নিয়ে এ পল্লীর, কোনও মেয়েই কটু কথা কইবার পারে না। তুমি কারও সাথে বসো না। আমার বান্ধবী শেফালি তোমারে চিনে।
শেফালি কে?
শেফালি টাঙ্গাইলের পতিতাপল্লীতে থাকত, এখন আমার পাশের বাড়িতেই থাকে, সে-ও বলছে তুমি খুব ভালো মানুষ।
হা হা হা...
হাসো কেন?
হা হা হা... বেশ্যাদের নিয়ে কাজ করি। ভালো মানুষ হলাম কি করে?
তুমি বেশ্যাদের নিয়ে কাজ করো,  বইতে তো আর আসো না।
কারও সাথে বসি না, তা তুমি কিভাবে বুঝলা?
আমাদের পল্লীর এ মাথা হতে অপর মাথা পর্যন্ত যত ঘর আছে, যেটাতেই কোনও মেয়ের সাথে বসো না কেন, আমরা জানতে পারি। কারণ তোমাদের মতো মিডিয়ার মানুষদের সাথে আমরা যারা বইতে পারি, তারা নিজের ভাব দেখানোর জন্য অন্য দশজন মেয়েরে অবলীলায় বলে দিই। এতে আমাদের মতো মেয়েদের দাম বাড়ে। অন্য খদ্দেরদের বলতে পারি, আজকে অমুকের সাথে বইছি, তমুকের সাথে বইছি।
বলো কি? এরকম হয় নাকি?
হয় মানে? অবশ্যই হয়। শোনও বন্ধু, তুমি এখন থেকে সুমির ঘরে যাবা না।
কেন? সুমির কি সমস্যা?
আর বইলো না। কিছু দিন আগে আমাদের অফিসের সামনে এক নাটকের শুটিং হইছে। সে একটা ছবিতে (দৃশ্যে) অভিনয় করছিল। সে নাটকের এক পোলার সাথে বইছিল। আর ওইডা আমাগোরে কইয়া ভাব লয়।
বাহ! বেশ মজার ঘটনা, তাহলে তোমাদের মধ্যে খদ্দের নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়?
হবে না আবার... কে কয়বার বইছে, কিভাবে বইছে, কার লগে বইছে...কত কথা... কত ভাব...
বাহ। বন্ধু, তোমাকে একটা কথা বলব?
কথা বলবা কি? কথা তো তখন থাইকা কইতেই আছো।
না, বিষয়টা তা না। আমি তোমাকে কিছু টাকা দেই?
কেন? আমার লগে বইতে ইচ্ছা করতাছে?
ইচ্ছা আমার কেন, অন্য যে কারোরই করবে, তোমার যা...
কি?
হা হা হা... কিছু না। আমি তোমাকে কিছু টাকা দেই তুমি ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে আস।
হা হা হা...আমি বেশ্যা বলে তুমি করুণা করতিছো?
আমি যদি এ পল্লীতে এসে বিপদে পড়ি, ধরো, আমার মানিব্যাগ হারিয়ে গেল, তখন তুমি কি করবে?
কি আর করব? যেহেতু তুমি ভালো মানুষ, আমার ভালো বন্ধু, সেহেতু আমি যা পারি তা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করব।
তখন তো আমার মনে হতে পারে তুমি আমাকে করুণা করছো।

চলবে...