বেশ্যাকন্যা

পর্ব ২৫

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ২১, ২০১৮

ঝুমু বলল, করুণা করব কেন? বন্ধু হিসেবে তোমাকে সাহায্য করলাম।
হেসে দিয়ে আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এই নাও। টাকাটা রাখো। ডাক্তার দ্যাখাও।
ঝুমুও হেসে উঠল, হা হা হা। শেষপর্যন্ত আমার হাতে টাকা ধরিয়ে দিলে?
হ্যাঁ দিলাম।
মাল খাবা?
কি ধরনের মাল?
মালের আবার প্রকার আছে নাকি?
নারীর থাকলে মালের থাকবে না কেন?
হা হা হা, ওরে সোনা যাদু, মদ খাবা? মদ?
মদ? ওরে বাবা! ওইটা তো তোমার চেয়েও কড়া।
কেন? তুমি মদ খাও না?
না। আমার কোনও প্রকার মাদকের নেশা নেই।
তাহলে মিডিয়াতে কাজ করো কেন?
মিডিয়াতে কাজ করতে হলে মদ খেতে হয় নাকি?
তা জানি না। তবে শুনি তো, তাই।
শোনও, মিডিয়াতে কাজ করা মানেই খারাপ নয়। মিডিয়াতে যারা কাজ করে তারা সবাই মদ-নারীতে আসক্ত, তা ভাবার কোনও কারণ নেই। মিডিয়ার অধিকাংশ মানুষ ভালো বলেই এখনও সমাজের সকল প্রান্তের সংবাদ বস্তুনিষ্ঠভাবেই জনগণ সহজে জানতে পারছে। কিছু ব্যতিক্রম থাকতেই পারে।
ঠিক আছে। এখন বলো, কী খাবে।
জুস খাওয়া যেতে পারে।
ঝুমু দোকান থেকে জুস আনতে বের হলো। আমি ঘরে খাটের ওপর বসে আছি। ভাবছি। ভাবনাগুলো বেশ বিস্তর। মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিদেশ তথা দেশের বাইরে পাড়ি দেয়। থাকে বছরের পর বছর। কেউবা স্থায়ীভাবে বিদেশকে করে নিয়েছে নিজের আবাস্থল। বিদেশে থেকে অর্জন করছে মিলিয়ন-বিলিয়ন অর্থ। সেই অর্থ দেশের মাটি ও মানুষদের করছে সমৃদ্ধ। কেউবা জীবনের শখ হিসেবেই ধরে নিয়েছে বিদেশ ভ্রমণ। কেউবা নিয়েছে শিক্ষার উপযুক্ত স্থান হিসেবে। কেউ আবার নিয়েছে অর্থ-উপার্জনের প্রধান স্থান বিবেচ্য করে। আরো বহু কাজেই যাচ্ছে মানুষ বিদেশে। দেশের মধ্যে দেশ, ছোট্ট একটি গ্রাম সদৃশ অন্ধকার পৃথিবী। এখানে সূর্য ওঠে প্রতিনিয়ত। পাখিরা মধুর সুরে গান করে গাছের পাতার আড়ালে-আবডালে। রাতের বিদ্যুতের উদ্ভাসিত আলোতে ঝিকিমিকি করে ওঠে গ্রামের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত। বিকেলের সূর্যাস্তের মতো পৃথিবী সৃষ্টির আদি নিয়মেই এখানকার মানুষদের মাথার উপর উঁকি দেয় রাতের উজ্বল চাঁদ। রাতের চাঁদের কলঙ্ক যেন মিশে যেতে চায় এ পল্লীর মানুষদের কলঙ্কিত জীবনের সাথে। চাঁদের বুড়ির খবর নিতে মানুষ যেমন কষ্ট করে পাড়ি দেয় চাঁদে, তেমনি এ পল্লীর মানুষদের জীবনের উপাখ্যান তৈরি করতে পাড়ি দেয় অসংখ্য মিডিয়া কর্মী।

ঠিক মনে পড়ছে না, সম্ভবত নাম আব্দুল কুদ্দুস, সবাই ডাকে কুদ্দুস বলে, বিয়ে করেছে নিজ এলাকাতেই, বাড়ী ময়মনসিংহ। কুদ্দুস বছর পাঁচেক হচ্ছে এ দৌলতদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীতেই থাকে। বছরে বেশ কয়েকবার যায় বাকিড়তে। সেখানকার খরচপাতি তাকেই বহন করতে হয়। তাই তো সে এখানে দিয়েছে মনোহারির দোকান। তার দোকানে সব কিছুই পাওয়া যায়। এখানে বেচাবিক্রি ভালোই হয়। পল্লীর ভিতরেই একটা রুম ভাড়া নিয়ে সে থাকে। তার মতো অনেকেই আছে, যারা সভ্য সমাজ থেকে এখানে এসে বাবসা-বাণিজ্য করছে। প্রথমে একটু মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল। এখন আর কোনও প্রকার সমস্যা অনুধাবন করে না সে। নিজেকে সে এ পল্লীরই সদস্য বলে মনে করে। সমাজের কথা চিন্তা করলে তো পেট ভরবে না। পেট ভরাতে অর্থ দরকার। খাবার দরকার। যেখানে দু-বেলা দু-মুঠো ভাত পাবে সেখাই আবাস গড়ে তুলবে সমাজের নিঃগৃহীত বুভুক্ষু মানুষ। তাই তো বিদেশ যাবার পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এখানেই ব্যবসা গেড়ে বসেছে দেশের প্রান্তিক কিছু মানুষজন। কুদ্দুস বয়সের ভারে ভারস্ত না হলেও বড়-সর ভুড়ির কারনে কিছুটা গাম্ভীর্যভাব অর্জন করে নিতে পেরেছে। সে অনেকটাই মজার লোক। সে ছোটবেলা থেকে এলাকার ছোট ছোট নাট্যদলের সাথে কাজ করেছে। আর সেই সুবাদে সে আমার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছিল। সে অভিনয় করতে চায়। অভিনয়ের প্রতি তার যথেষ্ট দুর্বলতা।

চলবে...