বেশ্যাকন্যা

পর্ব ২৭

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ২৩, ২০১৮

দেখতে দেখতে প্রায় সাত-আট মাস হতে চলল, এখনও কাজের কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। মর্জিনা আপার সাথে প্রায় দিনই দেখা হচ্ছে। মোবাইলে কথা হচ্ছে। দিনের পর দিন জায়গাটির প্রতি কেমন জানি মায়া জমে যাচ্ছে। এ পল্লীর অজস্র নারীর সাথে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে বন্ধুত্বের বন্ধন। যত দিন যাচ্ছে, জানার পরিধি ততই বাড়ছে। তারাও কেন জানি আমাকে তাদের একজন করে ভাবছে। ছি ছি, একি বলছি আমি!

তারা আমাকে তাদের একজন ভাববে কেন? আমার একটা সামাজিক স্ট্যাটাস আছে না? আরে বাবা, ভাবুক না। ওদের ঘরে তো প্রচুর অর্থ নেই। যা খরচ করে ঘরে অ্যালসেসিয়ান কুকুর রেখে তাকে ভালোবাসবে। নিজেই খেতে পায় না, আবার কুকুর! আমার না হয় কিছুটা সামাজিক সম্মান বিনষ্ট হলো, তাতে কি? সমাজের নিগৃহীত কিছু মানুষদের স্বপ্ন দেখার পরিধি কিছুটা হলেও বিস্তার ঘটল, তাতেই বা ক্ষতি কি? তাদেরকে পল্লী থেকে বের করে আনতে না পারলেও তাদের জীবনে ভালোবাসার বন্ধুত্বের যে বীজ স্থাপন করতে পারছি, তাতেই বা কম কি? ঝুমুর মতো এদেশের অসংখ্য নারী হচ্ছে গৃহপরিত্যক্ত নিশিকুটুম। তাদেরকে নিয়ে ডকুমেন্টরি তৈরি করব। যাক, আরও কিছুটা সময় যাক। আমার চিন্তা-চেতনা দিনকে দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক পরিচালকই আগে যৌনকর্মীদের ডকুমেন্টরি তৈরি করেছেন। এসব পল্লীর ভিতরে তৈরি হয়েছে বহু নাটক। আমার চাহিদা একটু ভিন্ন। টাঙ্গাইলের নিষিদ্ধ পল্লী নিয়ে তৈরি করেছি ডকুমেন্টরি। এখানেও ডকুমেন্টরি তৈরি করব দুটি। তাহলে ভিন্ন কি করলাম?

অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্তে এলাম, এ পল্লীর মানুষদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে নির্মাণ করব ডকু-ড্রামা। এ নাটকের সকল অভিনেতা-অভিনেত্রী হবে এ পল্লীতেই বসবাসকারী নারী-পুরুষ। বাইরের কোনও অভিনয় শিল্পী নাটকে ব্যবহার করব না। কোনও মেকাপ থাকবে না। কোনও সেট নির্মাণের কাজ হবে না। কোনও রূপসজ্জা থাকবে না। থাকবে শুধুই বাস্তবতা। থাকবে শুধু তাদের জীবনের বাস্তবতার জীবন্ত চলমান চিত্র, যা আগে বাংলাদেশে কোনও দিনই নির্মিত হয়নি। এটা বাংলাদেশে তৈরি করা সম্ভব কীনা, জানি না। আমি এ বিষয়ে এ পল্লীর সভানেত্রী মর্জিনা আপার সাথে কথা বললাম। বললাম আমার পরিকল্পনার কথা। মর্জিনা আপা বললেন, মেহেদী ভাই, আপনার পরিকল্পনা অনেক সুন্দর। কেউ তো আপনার মতো আমাদেরকে নিয়ে ভেবে কাজ করতে চায় না। এখানে যেসব মানুষ নাটকের শুটিং করতে আসে তারা আমার কাছে আসে। আমি তাদেরকে নিজে থেকে আমার অফিসের পাশেই শুটিংয়ের ব্যবস্থা করে দেই। যারা নিউজের জন্য আসে, বাইরে থেকে শুটিং করে। আমাদের লোকজনের কিছু কথা রেকর্ড করে। এরপর চলে যায়। মেহেদী ভাই, আপনে যা করতে চাচ্ছেন তা করতে যা কিছু সহযোগিতা লাগে আমরা দিব। যে কয়দিন লাগে শুটিং করেন। আমার লোক সব সময় আপনার সাথে থাকবে। আপনে যেহেতু ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদেরকে নিয়ে বছরের পর বছর ধরের কাজ করছেন, কোনও প্রকার আর্থিক সহযোগিতা আমার কিংবা কোনও এনজিওর নিচ্ছেন না, সেহেতু যেটাই করেন ভেবেচিন্তে করেন। আপনাকে আমার ছোট ভাইয়ের মতো দেখি, আপনি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এখানে শুটিং করেন, কোনও সমস্যা নেই। এরপরে রাতে ভিতরে শুটিং করার পার্মিশন আমি দিতে পারি না, কারণ সেটি খুবই রিস্কি।

কিন্তু আমার তো রাতদিন শুটিং করতে হবে। সময় লাগবে অন্তত টানা সাত দিন। যেভাবেই হোক, আমাকে আমার মতো করে শুটিং করতে হবে। আমি মর্জিনা আপাকে সাতদিন ভিতরে শুটিংয়ের জন্য অনুমতি দেবার জন্য অনুরোধ করলাম। এবং রাতে শুটিংয়ের ব্যাপারে সকল দায় দায়িত্ব আমি আমার কাঁধের তু্লে নিলাম। যদিও বিষয়টি কঠিন থেকে কঠিনতর হবে আমার জন্য। তারপরও আমি আমার সকল প্রকার দায়ের ভার নিজ মাথায় নিয়ে দুটি ক্যামেরা ইউনিটসহ প্রায় পঁচিশজনের একটা শুটিং ইউনিটের জন্য রাতদিন শুটিংয়ের পরিকল্পনা করে ফেললাম। ডকু-ড্রামার স্ক্রিপ্ট আমি লিখতে শুরু করলাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমার ডকু-ড্রামার নায়ক-নায়িকার চরিত্রে অভিনয় কে করবে?

চলবে...