বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৫১

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৩, ২০১৮

সিমলার একজন বাবু আছে। সে ঢাকায় থাকে। মাঝে মধ্যেই একা কিংবা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সে এখানে আসে। সিমলা সারাক্ষণ কারও না কারও সাথে মোবাইলে প্যান প্যান করতেই থাকে। বিষয়টি আমার কাছে প্যান প্যানানি মনে হলেও এটি সিমলার কাছে ফোনসেক্স।

রাতিয়া সিমলাকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে এলো। বলল, আপনার দোস্ত রুমে নাই।
কোথায়?
মনে হয় গেট করতে গেছে।
এখন?
এখন যাবে না তো কখন যাবে? সারারাত ঘরে খদ্দের ছিল। কিছুক্ষণ আগেই খদ্দের বিদায় হলো।
তাই নাকি? তাহলে তো তার সাথে আজকে আর দেখা হবে না।
তার সাথে দেখা না করেই চলে যাবেন? সে তো আপনারে খুব পছন্দ করে।
কে আমাকে পছন্দ করে না?
হা হা হা... আসলেই, সবাই আপনাকে খুব পছন্দ করে।
কেন পছন্দ করে?
ভালো মানুষকে সবাই পছন্দ করে।
হা হা হা... ভালো মানুষ হলাম কবে থেকে?
নিজেকে খারাপ ভাবছেন কেন?
খারাপ মানুষের সঙ্গে চলছি, কথা বলছি, তাদেরকে নিয়ে কাজ করছি, খারাপ মানুষ না হলে করি কিভাবে?
খারাপকে ভালো করতে গেলেই সমস্যা। খারাপ আরও বেশি খারাপ হোক। খারাপে ভরে উঠুক সারা দেশ। সেটাই তো আমরা চাই। সবাই ভালোকে ভালো করার জন্য ছোটে। খারাপকে ভালো করার জন্য ক’জন ছোটে?
হুম। তা ঠিক। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। তাহলে আজকে যাওয়া যাক...
চলেই যাবেন? এখন মনে হচ্ছে, এতদিন আপনার সাথে কথা না বলে লস হইছে।
লস! তোমার? কেন?
না, তেমন কিছু না। খারাপ পরিবেশে খারাপ মানুষদের সাথে চলে চলে, খারাপ কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয় গেছে। আজকে আপনার সাথে কথা বলে নিজেকে অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা অনেক বড় ও সুন্দর।

রাতিয়ারা আসলে অন্ধকারাচ্ছন্ন পানিশূন্য গভীর কূপের গহ্বরে দাঁড়িয়ে মুখ উঁচিয়ে সুন্দর আকাশের চন্দ্রাকার তিল পরিমান সৌন্দর্য দেখে অভ্যস্ত। তাদের চোখের সামনে সমগ্র পৃথিবীর জন্মভূমি সদৃশ মানচিত্রের সৌন্দর্যের বিশালতা কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের চেয়ে বড় হবে, সেটিই স্বাভাবিক। আজকে রাতিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম মর্জিনা আপার অফিসের দিকে। মর্জিনা আপার অফিসে ঢোকার ঠিক আগমুহূর্তে দেখা হলো এখানকার পিডিবির এক কর্মকর্তার সাথে। তিনি এ পল্লীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। শুরুতেই কুশল বিনিময়ের পর আমরা একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করতে করতে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। উনি আমাকে আমার শুটিংয়ের সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি শিঘ্রই একটি সময়ের কথা জানালাম। আমি ওনাকে টানা সাতদিনসহ ভিতরের একটি ঝিলপাড়ে শুটিংয়ের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেবার জন্য অনুরোধ করলাম। তিনি আমাকে মর্জিনা আপার অফিসের নিকটেই শুটিং করার পরামর্শ দিলেন। কারণ সেখানেই এরপূর্বে সবার শুটিং হয়েছে এবং বিদ্যুতের লাইনের একটা ব্যবস্থা করা রয়েছে। কিন্তু আমি তাকে ঝিলপাড়সহ শিউলির ও আলেয়া আপার বাড়িতে মধ্যরাত পর্যন্ত শুটিং করার চিন্তার কথা জানালাম। তিনি আমাকে উপর মহলের অনুমতি নেবার জন্য পরামর্শ দিলেন এবং পরে আমি রাজবাড়ি পিডিবি অফিসে অনুরোধ করে অতিরিক্ত ক্যাবল নিয়ে এসে শুটিং করার জন্য অনুমতি লাভ করলাম। কথা থাকে যে, বিদ্যুৎ অফিসের এই মোটা ক্যাবলগুলো অনেক দামি হওয়ায় সেগুলি চুরি যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু আমার প্রয়োজনীয়তার কারণে তা নিতে এবং চুরি হলে ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিলাম। যাই হোক, অনেক ফলপ্রসূ আলাপ সেরে আমরা চলে গেলাম মর্জিনা আপার অফিসে মর্জিনা আপার সাথে শুটিংয়ের বিষয়ে আলোচনার জন্য।

চলবে