বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৫২

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০১৮

দু’এক সপ্তাহ পরে ফের গেলাম দৌলতদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীতে। পল্লীতে ঢুকে প্রথমেই আমি চলে গেলাম মায়ার ঘরে। এর মধ্যে রশিদ ভাইকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বললাম। মায়ার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দিলাম। মায়া ঘরে আছে দেখে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এরমধ্যে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়ার পাশের ঘরের একটি মেয়ে আবারও দরজায় নক করলো এবং আমার আসার কথা জানালো।

আমি অপেক্ষা করছি... এর মধ্যে রশিদ ভাই চলে এলেন। তিনি আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়া ঘর থেকে বেরোলো। কেন জানি, আকাশের নীল রঙটাকে বিবর্ণ করেছে ধূসর কালো মেঘ। সূর্যের আলো কিছুটা আড়াল করে রেখেছে ওই মেঘ। মায়ার সুন্দর মুখের কোথাও কোথাও কালো দাগ। আমরা অবাক হলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোনও সমস্যা মায়া?
মায়া জবাব দিল, না তো। তেমন কিছু না।
উঁহু, সমস্যা তো একটা আছে। তোমার চেহারায় ওইসব কালো দাগ কীসের?
মায়ার মুখে কথা নেই।
বাবু কি তোমার শরীরে হাত তুলেছে?
চুউপ।
কেন? বলবে না আমাকে?
গতরাতে বাবু এসেছিল।
সে কি তোমাকে মেরেছে?
হ্যাঁ।
কেন?
সে তোমার নাটক করতে দিতে নিষেধ করে। আমি তার কথা শুনতে চাইনি, তাই...
তাই তোমাকে মেরেছে? ওই শুয়োরের বাচ্চাটা কোথায়?
তোমার আজকে আসার কথা শুনে চলে গেছে।
এটা কোনও কথা হলো? তোমার কাছে আমার ফোন নম্বর আছে। তুমি আমাকে ফোন করলে না কেন? সে এখান থেকে পালায় কিভাবে?
মায়া কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
রশিদ ভাই বললেন, সে যদি এবার এখানে আসে, তাহলে তারে তুই ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখে আমাকে খবর দিবি। এরপর ওই শুয়োরের বাচ্চার যা ব্যবস্থা করতে হয়, আমিই করবো।
মায়া বলল, সে তোমাদেরকে ভালোভাবেই জানে। সে সহজে আর এদিকে আসবে না। তাছাড়া তার মতো বাবু আমার দরকার নাই। আমি কথা দিয়েছি তোমার নাটক করব। তোমার নাটক আমি করবই। সে যদি এরপর আবার এখানে এসে আমাকে তোমার কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমিই তারে কচুকাটা করব।

তাড়াতাড়ি আমি বললাম, না না, তোমার কোনও স্টেপ নেয়ার দরকার নেই। তার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা তো আছি। তাছাড়া এ বিষয়টা নিয়ে মর্জিনা আপার সাথে কথা বলে রাখব। চলো, আজকের মুডটাই খারাপ হয়ে গেল। চলো, আজকে ঘরে ভিতর যাব না। বাইরে চা খেয়ে একটু ঘুরবো।
মায়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, হুম, চলো। কোথায় যাবে?
যেখানে গেলে কষ্টের পরিধির সীমানা সংকুচিত হবে, সেখানে যাই। আচ্ছা, ওই ঝিলপাড় থেকে ঘুরে আসি। সেখানে তো আমাদের শুটিং হবে।
আচ্ছা চলো। তার আগে একটু চা খেয়ে নেই। সাথে একটা সিগারেট।
সিগারেট? সিগারেট খাবে কেন?
ধুর, মাথাডা ঝিমঝিম করতাছে। একটু চা খেয়ে সিগারেট টানলে ভালো লাগবে।
তাই? সারারাত মাল খেয়েছো?
কী আর করব? খদ্দের চাইলে, আমার কি করার আছে?

আমাদের দেশের প্রতিটি নিষিদ্ধ পল্লীতেই চলে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। যৌন ব্যবসার মাঝেই গড়ে ওঠে বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবসায়ীদের মাদক ব্যবসা। দেশের এমন কোনও মাদক নেই, যা এ সমস্ত পল্লীগুলোতে পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যেই পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় হলেও থেমে থাকে না এ ব্যবসা। তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তর। কোনোভাবেই থামানো যায় না। মাদক যে কোনও নিষিদ্ধ পল্লীর মুদ্রার এপিট-ওপিট। মাদক ছাড়া যেন জমে না নিষিদ্ধ পল্লীর দিনপঞ্জিকা।

আমি বললাম, ঠিকাছে চলো। আগে চা খেয়ে নেই।
মায়া বলল, চলো।
জিজ্ঞেস করলাম, এভাবেই যাবে?
সমস্যা কি?
নিজের শরীরের দিকে তাকিয়েছো?
ও আচ্ছা... হা হা হা!
হাসছো কেন?
সরি বন্ধু, এভাবে তোমার সঙ্গে বের হওয়া যাবে না। দাঁড়াও, ড্রেস চেঞ্জ করে আসি।
কাপড় বদলাতে মায়া গেল রুমের ভিতর। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।

চলবে