বোধিসত্ত্ব

পর্ব ১

ছায়াবীথি শ্যামলিমা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১০, ২০১৯

মহাযান বৌদ্ধধর্মে বোধিসত্ত্ব জীবন ও সাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: মহাযান ধর্মদর্শন বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৌদ্ধধর্মের উৎকর্ষের কালপর্বে মহাযান বৌদ্ধধর্মের উদ্ভব। মহাযান অত্যন্ত বৃহৎ; দর্শনে তারা শূন্যবাদী ও আদর্শবাদী, নীতিতে করুণাবাদী ও উদারপন্থী। মহাযানীদের লক্ষে সর্বসাধারণের মুক্তি। মহাযান মতাদর্শ মতে, বোধিসত্ত্ব জীবন মুক্তির সোপান। বোধিসত্ত্বের মহত্বকে মহাযান ধর্মদর্শনে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। বোধিসত্ত্ব জীবন বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভের পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধাপ; বুদ্ধত্ব লাভই পরিপূর্ণতা। এ জীবন পরিগ্রহণের মধ্য দিয়ে বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ করা যায়। মহাযানে বোধিসত্ত্ব অসংখ্য। যে কোন ব্যক্তি যদি বোধিচিত্ত উৎপাদন করেন, তিনি বোধিসত্ত্ব হতে পারেন। এ প্রবন্ধে মহাযান বৌদ্ধধর্মের আলোকে বোধিসত্ত্ব জীবন ও সাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা: বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধের প্রচারিত ধর্মবাণী ও জ্ঞানদর্শন নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বৌদ্ধধর্ম। বুদ্ধ মতবাদ ও বিনয় কর্মের বিধি বিধানকে ভিত্তি করে কালক্রমে হীনযান (থেরবাদ) ও মহাযান (মহাসাংঘিক) এ দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়। হীনযান মতাদর্শীরা হলো রশীল ও প্রাচীনপন্থী এবং মহাযানীরা সংস্কারবাদী ও উদারপন্থী। মহাযানীরা বুদ্ধের সর্বজনীন মৈত্রী ও জীবমুক্তির উপর গুরুত্ব দেন। মহাযানী মতে জগত দুঃখময় নয়; পরন্তু তারা আশাবাদী। বোধিসত্ত্ব নীতি অনুসরণ করে বুদ্ধত্ব লাভ করতে প্রয়াসী হন। তারা পুদ্গল নৈরাত্ম্য ছাড়াও ধর্মনৈরাত্ম্যে বিশ্বাসী। এর অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো কল্পনা অর্থাৎ বুদ্ধের তিন কায়রূপ ধারণা, যেমন- নির্মাণকায়, সম্ভোগকায় ও ধর্মকায়। মহাযানে বোধিসত্ত্ব জীবনে পরহিত ব্রতে আত্মনিয়োগ এবং দৃঢ় সংকল্প ও অনুশীলনে গুরুত্ব আরোপ করা। তাদের জীবনীশক্তি অধিক। এতে ষট্ পারমিতা একটি বীর্য (বীরত্ব বা উৎসাহ)। মহাযানে বোধিসত্ত্ব জীবন অন্যতম আদর্শ।

মহাযান ধর্মদর্শনের বিবর্তন: মহাযান ধর্মদর্শনের বিবর্তনের ইতিহাস অত্যন্ত বিস্তৃত। এ ধর্মদর্শন এক কালে ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। সম্মতীয়বাদ, সর্বাস্তিবাদ, মহাসাংঘিকবাদ প্রভৃতি মতবাদকে নিয়ে মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসার লাভ করেছিল। এ কথা সপ্তম শতকে বাংলায় পর্যটনকারী য়ুয়ান্-চোয়াঙ্, ইৎ সিঙ্ প্রভৃতি চীনা পরিব্রাজক ভিুগণ তাঁদের ভ্রমণ বিবরণে উল্লেখ করেছেন। অষ্টম হতে দ্বাদশ শতক এই চারশত বৎসরের বাংলার বৌদ্ধধর্মের প্রভাব পরিলতি হয়। এ সময় মহাযান বৌদ্ধধর্মে তান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা ও কল্পনার বিকাশ ঘটে এবং এর ফলে বৌদ্ধধর্মে গুহ্য সাধনতত্ত্ব, নীতিপদ্ধতি, বিভিন্ন দেবদেবী ও পূজাচারের প্রচলন হয়েছিল। এই গুহ্য সাধনার ধ্যান-কল্পনা কোথা হতে কী করে মহাযান দেহে প্রবেশ করে বৌদ্ধধর্মের রূপান্তর ঘটে এবং বিভিন্ন ধারার সৃষ্টি হল বলা কঠিন। মহাযানের মধ্যে তার বীজ সুপ্ত ছিল কিনা তাও নি:সংশয়ে বলা যায় না। বৌদ্ধ ঐতিহ্যে আচার্য অসঙ্গ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, পর্বত-কান্তারবাসী সুবৃহৎ কৌম সমাজকে বৌদ্ধধর্মের সীমার মধ্যে আকর্ষণ করার জন্য ভূত, প্রেত, যোগিনী, ডাকিনী, পিশাচ ও মাতৃকাতন্ত্রের নানা দেবী প্রভৃতিকে অসঙ্গ মহাযান দেবায়তনে স্থান দান করেছিলেন। নানা গুহ্য, মন্ত্র, যন্ত্র, ধারণী প্রভৃতিও প্রবেশ করেছিল মহাযান ধ্যান-কল্পনায়, পূজাচারে, আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকর্মে এবং তাও অসঙ্গেরই অনুমোদনে। তবে এই সব গুহ্য, রহস্যময়, স্বার্থকযন্ত্র, মন্ত্র, ধারণী, বীজ, মণ্ডল প্রভৃতি সমস্তই আদিম কৌম সমাজের যাদুশক্তিতে বিশ্বাস হতেই উদ্ভুত। সহজ সমাজতান্ত্রিক যুক্তিতেই বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম উভয়েরই ভাব-কল্পনায় ও ধর্মগত আচারানুষ্ঠানে ইহাদের প্রবেশ লাভ কিছু অস্বাভাবিক নয়। উভয়কেই নিজ নিজ প্রভাবের সীমা বিস্তৃত করার নিম্নতর স্তরগুলিতে যে সুবৃহৎ মানবগোষ্ঠি ক্রমশ এসে ভিড় করতেছিল তাঁরা তো ক্রমহ্রাসমান আদিবাসী সমাজেরই জনসাধারণ। তাঁরা তো নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, দেবদেবী নিয়েই বৌদ্ধ বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মে এসে আশ্রয় নিতে ছিলেন। অন্যদিকে, বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মেরও চেষ্টা ছিল নিজ নিজ ধ্যান-ধারণা ও ভাব-কল্পনা অনুযায়ী, নিজ নিজ শক্তি ও প্রয়োজনানুযায়ী সদ্যোক্ত আদিম ধর্মবিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, দেবদেবী ইত্যাদির রূপ ও মর্ম কিছু রেখে কিছু ছেড়ে, শোধিত ও রূপান্তরিত করে নিল। অসঙ্গের সময় হতেই হয়তো বৌদ্ধধর্মে এই রূপান্তরের সূচনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সন্দেহ নেই যে, বাংলা বিহারে, এক কথায় পূর্ব-ভারতের বৌদ্ধধর্মে এই ধরণের রূপান্তরের একটি গতি অষ্টম-নবম শতকেই ধরা পড়েছিল। ইহার মূলে ঐতিহাসিক একটা কার্যকারণ সম্বন্ধ নিশ্বয়ই ছিল; সে কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবু এই পর্বের বাংলা বিহারে বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য উভয় ধর্মেরই এই বিরাট বিবর্তনের (তান্ত্রিক বিবর্তন) কারণ সম্বন্ধে একটু অনুমান বোধ হয় করা চলে।

সপ্তম শতকের পূর্ব-বাংলার খড়গ রাজবংশ শাসনামলে তন্ত্রযান ও মন্ত্রযানের সৃষ্টি ও প্রসার এ কালপর্বের স্রোতেরই দান। ধর্মপাল ও দেবপালের কালে এই যোগাযোগ আরও বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্র্তীকালে তান্ত্রিক ধর্ম তার একটা দিক তন্ত্রধর্মের প্রসার বাংলায় বহুলভাবে হয়েছিল তা ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়।

মহাযান মতবাদ বিশ্লেষণ: বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বুদ্ধোত্তর কালের অন্যতম ধারা হল মহাযান। ‘মহা’ অর্থ মহৎ বা উৎকৃষ্ট এবং ‘যান’ অর্থ মার্গ, উপায় বা শকট। বুদ্ধ নির্দেশিত নির্বাণে উপনীত হতে যে মহৎ মার্গ বা উপায় অবলম্বন করা হয় তারই নাম মহাযান। বুদ্ধের পরিনির্বাণের পরে বৌদ্ধ সংঘে সংঘাত শুরু হয়। তাঁরা থেরবাদ এবং মহাসাংঘিক এ দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে এ দুটি ধারা থেকে আবার মোট আঠারোটি ধারার উদ্ভব হয়, যার একটি মহাযানপন্থা। এটি মহাসাংঘিক ধারার অন্তর্ভুক্ত। মহাযানীরা বোধিসত্ত্ব মতবাদে বিশ্বাসী। বোধিসত্ত্ব হচ্ছেন তিনি, যিনি বারবার জন্মগ্রহণ করেন এবং অপরের পাপ ও দুঃখভার গ্রহণ করে তাদের আর্তি দূর করেন। তিনি একা নির্বাণ বা মুক্তি লাভ না করে বরং জগতের সকলের মুক্তির জন্য কাজ করেন এবং প্রত্যে জীবের মুক্তি অর্জনের পর তিনি পরিনির্বাপিত হন। মহাযানের প্রধান ল্যই হচ্ছে এই ধারার বোধিসত্ত্বের আদর্শ অর্জন করা।

মহাযান এবং হীনযান এ দু’টি প্রধান সম্প্রদায় ও দার্শনিক মতাদর্শ। মহাযানীরাই প্রাচীনদের অর্থাৎ গোঁড়া রণশীল বৌদ্ধদের হীনযান বলেন। হীনযানীরা নিজেদের কখনও হীনযান বলে মনে করেন। তাঁরা নিজেদের স্থবিরবাদী (থেরবাদী) বলে অভিহিত করেন। হীনযানকে কেন হীন বলা হয় তা খ্যাতনামা মহাযানী আচার্য অসঙ্গের সূত্রালঙ্কার গ্রন্থে আছে। নিম্নলিখিত বিষয়ে এ দুটি সম্প্রদায়ের প্রভেদগুলি উল্লেখযোগ্য ক. আশয় উপদেশের আকাক্সা, খ. উপদেশ, গ. প্রয়োগ: উপদেশের প্রয়োগ, ঘ. আলম্বন সাধনার সামগ্রী, ঙ. সাধনার কার্যসিদ্ধির সময়।

মহাযানের উদার মনোভাবের জন্য সাধারণ মানুষের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ইহার ফলে স্থানীয় ধর্মমতগুলোর ন্যায় তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের অনুপ্রবেশ করে তান্ত্রিক মহাযানের সৃষ্টি। মহাযান বৌদ্ধধর্মে তন্ত্রের প্রবেশ করে মহাসাংঘিকদের ধারণী পিটকে মন্ত্রের বিধি প্রবর্তিত ছিল। শুধু মন্ত্র নয়, ধারণী, মণ্ডল ও মুদ্রা বিষয়ও ছিল। যোগাচার বিজ্ঞানবাদের প্রবক্তা অসঙ্গ সর্বপ্রথম বৌদ্ধধর্মে তন্ত্রের প্রবর্তন করেন। মূলত যোগদর্শন থেকে তন্ত্রে পরিণত হয়। মাধ্যমিক শূন্যবাদের প্রবক্তা নাগার্জুন গুহ্যতন্ত্রেরও প্রবর্তক। মহাযান বৌদ্ধধর্মে তান্ত্রিকতা প্রবেশ করার ফলে বৌদ্ধ ধ্যান ধারণায় পুজা পদ্ধতিতে গুহ্যতন্ত্রের রীতি নীতি প্রসার লাভ করে। মহাযান তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে নানা বোধিসত্ত্ব ও নানা দেবদেবীর ছড়াছড়ি। সেই সাথে নিরীশ্বরবাদী বৌদ্ধধর্মে বিভিন্ন তন্ত্র মন্ত্র, আর অলৌকিকত্ব স্থান লাভ করে। মহাসাংঘিকেরা সাতটি দলে বিভক্ত। এসব শাখাগুলি মহাযান মতবাদের ক্রমবিকাশে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। এরপর আবার ক্রমে ক্রমে অনেকগুলি মহাযান হয়ে দাঁড়ান। তাই মহাসাংঘিকেরা মহাযানের প্রথম পথপ্রদর্শক। পণ্ডিতপ্রবর রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, মহাযান সম্প্রদায় মহাসাংঘিক বা অন্য কোন বিশেষ সম্প্রদায় হতে উদ্ভূত নহে, তিনি মনে এই রূপান্তরিত মহাযান হতে মন্ত্রযানের সৃষ্টি হয়। আবার বজ্রযান, সহজযান, কালচক্রযান এই তিনটি ভাবধারার উদ্ভব হয় এই মন্ত্রযান হতে। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতক হতে অষ্টম শতক পর্যন্ত মহাযান এবং খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতক হতে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত তন্ত্রযান। ইতিহাসে দেখা যায় মহাযান হতে তন্ত্রযানে রূপান্তরিত হয়।

মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রধানত মাধ্যমিক শূন্যবাদ এবং যোগাচার বিজ্ঞানবাদ এ দুটি ভাগে বিভক্ত। মাধ্যমিক শূন্যবাদে বাহ্যিকভাবে যাকে জীবন বলা হয় তার কোন পারমার্থিক অস্তিত্ব নেই; প্রত্যেক বস্তু এক নিঃসার ভ্রান্তিমাত্র। দার্শনিক নাগার্জুন এ মতের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। আর যোগাচার বিজ্ঞানবাদে বলা হয়েছে যে, সকল বাহ্যবস্তুই ভ্রান্তিমাত্র, অসৎকল্পিত; একমাত্র বিজ্ঞানই সৎ। এছাড়া মহাযানের মধ্যে বহু তান্ত্রিক শাখা বিদ্যমান। যেমন- মন্ত্রযান, তন্ত্রযান, বজ্রযান, কালচক্রযান, সহজযান ইত্যাদি। তত্ত্বগত দিক থেকে এগুলো মৌলিক কোন মতবাদ নয়। এগুলো মূলত বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের সংমিশ্রণে উদ্ভূত ধর্মদর্শনভিত্তিক কতগুলো গৌণ মতবাদ।

এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলা পিডিয়ায় ড. রেবতপ্রিয় বড়ুয়া বলেছেন, মহাযানীদের মতে বুদ্ধ হচ্ছেন ঈশ্বর এবং সিদ্ধার্থ গৌতম তাঁর প্রতিভূ। তাঁদের মতে, গৌতম বুদ্ধের আগে ২৬ জন বুদ্ধ অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সিদ্ধার্থ ২৭তম বুদ্ধ এবং ২৮তম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটবে। ধর্মরূপে তিনি বিশ্বের নিয়ন্তা এবং জীবের মুক্তির জন্য তিনি বারবার পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। তাই মহাযানে বোধিসত্ত্ব ধারণা এবং দর্শনের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রাধান্য লাভ করেছে।

মহাযানের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য: মহাযান ধর্মদর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো: ১. সর্বশূন্যতা ও সর্বনৈরাত্ম্যের উপদেশ। ২. একাধিক বুদ্ধের ধারণা বদ্ধমূল। ৩. মহাকারুণিক বোধিসত্ত্বের আদর্শ। ৪. পারমিতাসমূহের তাৎপর্য ও আব্যশকতা। ৫. বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব এবং অন্যান্য দেব-দেবীর পূজা-আরাধনা। ৬. মুক্তিলাভের জন্য ধারণী এবং মন্ত্রসমূহের ব্যবহার। ৭. গ্রন্থ রচনার জন্য সংস্কৃত ও মিশ্র সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার। ৮. বোধিচিত্তের উন্নতি সাধনের েেত্র মঠবাসী এবং গৃহস্থের মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। ৯. বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির প্রসারে গৃহস্থের অসাধারণ ভূমিকা। ১০. তথাগতের ত্রিকায় কল্পনা।

আবার স্যার চালর্স ইলিয়ট মহাযানের সংজ্ঞা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এভাবে দিয়েছেন: ক. বহু বোধিসত্ত্বে বিশ্বাস এবং প্রত্যেক মানুষের মত আছে বোধিসত্ত্ব হওয়ার। খ. মহাযান শিক্ষা দেয় যে প্রত্যেক মানুষের উচিত জগতের কল্যাণ জন্য কিছু ভাল কাজ করা এবং নিজের অর্জিত পুণ্যাংশ সকলের হিতের জন্য দান করা। গ. ধর্মীয় জীবন যাপনের মূল ল্য হচ্ছে বোধিসত্ত্ব হওয়া, অর্হৎ হওয়া নয়। ঘ. পালি ত্রিপিটকের পরে সংস্কৃত ত্রিপিটক রচিত হয়েছে এবং এই সংস্কৃত ত্রিপিটকই হচ্ছে মহাযানের প্রথম দিককার শাস্ত্র। ঙ. মূর্তিপূজা, তন্ত্র-মন্ত্র ও পূজা আচার মহাযানে স্বাভাবিকভাবেই চলে এসেছে। মন্ত্র-তন্ত্রে আস্থা বিপজ্জনক হলেও মহাযানে প্রচলিত আছে। চ. বুদ্ধের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন মুক্তি, বিশেষত অমিতাভ বুদ্ধের নামকীর্তনের ধারাই মুক্তি মহাযান ধর্ম শিক্ষা দেয়।

চলবে