indo-american art council

indo-american art council

‘ভালো মেয়ে’টাই কাল আমার জীবনে

জাতবেদা মিশ্র

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২২, ২০১৮

সরস্বতী পুজো বলতে আগের দিন থেকে ঝুড়ি উল্টে তার পিছনে ঘষে ঘষে পরের দিনের বাঁধাকপির তরকারির আলুর খোসা ছাড়ানো এবং খই আর আর কাগজের মালা গাঁথা, অনেক রাত অব্দি স্কুল সাজানো, ফল কাটা আর পরেরদিন দধিকর্মা মাখা ছাড়া বিশেষ কিছু টানে না।
কোনোদিন সরস্বতীর কাছে বই রাখিনি। পরেরদিন ভোরবেলা ছোড়দি (হস্টেল সুপার) জোর করে বেলপাতায় সরস্বতী নাম লিখতে পাঠাতেন। তার কথা অমান্য করার ইচ্ছে করেনি কোনোদিন। তবে বেশ ক`বার অঞ্জলি থেকে কেটে পড়েছি চুপচাপ। পুজো পাঠের অংশটুকু ছাড়া বাকি সবটুকু দারুণ আগ্রহ আর ভালবাসায় করতাম।
ছোটবেলায় দুর্গাপুজো মানেই লালশালু ঘেরা স্টলে নতুন বই। কোনোদিন ঠাকুর দেখিনি ঘুরে ঘুরে। ইচ্ছেই করেনি, তবে ওই ভেঁপু আর বেলুন খুব টানতো, কিন্তু বায়না করিনি কোনোদিন তাই পাইওনি। সবাই জানতো, ‘ওর কোনো বায়না নেই, খুব ভালো মেয়ে’। এই ‘ভালো মেয়ে’টাই কাল আমার জীবনে। সবাই দিতেই ভুলে গেল আমায়। আর আমিও ওই তকমায় খুশি হয়ে সব ইচ্ছেগুলো চেপে রাখতে শিখলাম।
পরবর্তী জীবনে দুর্গা পুজোতেও সেজেগুজে খেতে বেরোনো ছাড়া আর কিছু করিনি। ঘরে বসেই মানুষের কথাবার্তা আনন্দ শুনতে আর বেরোলে ওই আনন্দের ঢল দেখতে বেশ লাগতো।
এক সময় শুনতে হয়েছে, ছেলেদের কাজলের টিপ, কোমরে কালো কার এইসব পরাই না কেন? কেমন মা? যে ছেলেদের মঙ্গলার্থে কোনো পুজো পাঠ করে না। বড়ছেলে জন্ম থেকেই অসুস্থ হওয়ায় এটাও শুনতে হয়েছে, কী নিষ্ঠুর মা বাপু, ছেলের জন্যেও ভগবানকে ডাকে না। ডাকো ডাকো... ডাকতে হয়...
জীবন সহজ পথ দেয়নি আমায়। প্রতি মুহূর্তে ভগবানকে(?) ডাকার নানা মুহূর্ত উপস্থিত করেছে। বিশ্বাস ভেঙেছে বারবার তবু করিনি পুজো। অথচ আমি খুব নরম মনের।
মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে আবার মানুষকেই আঁকড়ে ধরেছি, আবার বিশ্বাস করেছি ভাঙবে জেনেও। আজও সেটাই করি। তবে সরস্বতী পুজো হলেই বড্ডো স্কুল আর হস্টেলের সেই আবহ, আর খই এর মালা, ভোরবেলা স্নান আর ছোড়দির কথা মনে পড়ে। ছোড়দি যে বছর মারা গেলেন (২০১৪) সেই বছরই আমার সরস্বতী পুজো শেষ হয়ে গেছে। ছোড়দি অনেক কিছু সঙ্গে নিয়ে চলে গেছেন।