সংগৃহিত

সংগৃহিত

ভালোবাসা নেবেন মঁসিও আর্সেন ওয়েংগার

সৈয়দ ফাইজ আহমেদ

প্রকাশিত : এপ্রিল ২১, ২০১৮

একটা ব্রিজ প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত ছিলাম সেসময় খবরটা পেলাম। একজন সত্যিকারের লিজেন্ড ফুটবল থেকে বিদায় নিচ্ছেন।

 

অনেক লম্বা কোচিং ক্যারিয়ারে হাতে গোনা কয়েকটা ট্রফি, তাহলে উনাকে ট্রু লিজেন্ড বলা হচ্ছে কেন?

 

কারন শেলফ ভর্তি ট্রফি অনেক কোচেরই থাকে কিন্তু বিরাট বড় হৃদয় আর পুরো খেলাটাকেই অন্য স্তরে নিয়ে যাবার মতো মানুষ সবযুগে আসে না।

 

এই উচ্চশিক্ষিত ফরাসী ভদ্রলোক ইংলিশ ফুটবলে কোচিং করাতে আসার আগে ফুটবলের প্রফেশনালিজম ছিলো নামকাওয়াস্তে। তিনিই এসে দেখালেন কেবল মাঠের খেলা আর প্র্যাকটিস নয়, একজন ফুটবলারের জীবনে আদ্যপান্ত শৃংখলা জরুরী।

 

যের যুগে সারারাত বেহেড মাতাল হয়ে খেলোয়াড়রা খেলতে আসতো, ট্রেনিং বলতে ছিলো কেবল স্কিল ট্রেনিং, তিনি দেখালেন কোচ কেবল ট্রেনিং দেবেন না, তিনি খেলার মৌসুমে খেলোয়াড়ের রুটিন, ফিজিকাল স্ট্যামিনা ম্যানেজমেন্ট আর ডায়েট পর্যন্ত ঠিক করে দেবেন। এক ঝটকায় ইংলিশ ফুটবল হয়ে উঠলো সত্যিকারের প্রফেশনাল আর মর্ডার্ণ।

 

শুধু কি তাই? অর্থনীতির স্নাতকোত্তর এই মানুষটি ফুটবল ব্যবসা বোঝাদের মধ্যে উপরের দিকে থাকা একজন মানুষ। ধুকতে থাকা একটা ক্লাবের জন্য তিনি এক দুর্দান্ত ইকোনমিক মডেল বানিয়ে দেন। ইংল্যান্ডে যেখানে ক্লাবগুলো চ্যারিটির উপর ভর করে চলতো, তিনিই দেখালেন ক্লাবও ব্যাবসা করতে পারে। আর সেই মডেল এর আদলে ফুটবল ক্লাবের ধারনাটাই তিনি অনেকটা পালটে দিলেন। কেবল এর জন্যই তাঁকে লিজেন্ড বলা যায়।

 

ব্যাপারটা সেখানেই থামেনি। তরুন খেলোয়াড়দের গ্রেট বানানোর ব্যাপারে এই দ্রোনাচার্যের যে ভূমিকা সেটিও তাঁকে লিজেন্ডের আসরে স্থান দেবে। ডেনিস বার্গক্যাম্প, থিয়েরি অরি, জর্জ উইয়াহ, প্যাট্রিক ভিয়েরী সহ এই সংখ্যা অনেক।

 

উইয়াহর ব্যাপারটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, লাইবেরিয়ার লাজুক ছেলেটি এই মহান কোচের অধীনে কেবল খেলাটিই শেখেনি, নিজেকে পরিণত করেছে এক পর্বতসম ব্যক্তিত্বে, যে ব্যাক্তিত্বের প্রভাবে তার দেশের যুদ্ধ থেকে যায়, তিনি হন দেশটির প্রেসিডেন্ট, শান্তি আর আশাবাদের প্রতীক। কথাটা একটু বিতর্কিত শোনালেও, আমার ধারনা কৃষ্ণাঙ্গ আর আফ্রিকান খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা এই কোচ ইংলিশ ফুটবলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এক নীরব সেনাপতি। এর প্রভাব পুরো বিশ্বফুটবলেই ইতিবাচক।

 

উনার সমন্ধে এতো এতো লিজেন্ডারি কথা বলার পরেও একটা ঘটনার কথা না বলে থাকা যায়না। নিজের দলের খেলোয়াড়ের অনৈতিক আচরণ থেকে পাওয়া এক জয় এই কোচ অস্বীকার করে নতুন করে সেই খেলাটি আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। ফুটবল স্পিরিটের এই রকম উদাহরণ স্থাপন করে এই লিজেন্ড নিজেকে অমর করে ফেলেছেন। ফলে উনি কোচিং থেকে বিদায় নিলেও তাঁকে ফুটবলপ্রেমীরা আজীবন স্যালুট করবেন।

 

ভালোবাসা নেবেন মঁসিও আর্সেন ওয়েংগার।