‘ভূত বিলাসের ঘর’ মিথ্যে বিলাস নয়

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : জুন ১০, ২০১৮

`ভূত বিলাসের ঘর` লিখতে চেয়েছিলাম এই আলো অন্ধকারময় জীবনে আমার বিমুগ্ধতা আর বিভিন্ন ঘটনার সাপেক্ষে আমার অনুভবকে তুলে ধরবো বলে। কখনোই কাউকে হীন-নিচ প্রতিপন্ন করবো বলে নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই অনেক চরিত্রের পার্সোনাল আইডেন্টিটি আমি গোপন করেছি। কারণ এর প্রতিটি চরিত্রই প্রতীকী। এরা আমার বোধ আর উপলব্ধিকে কতখানি সঞ্জীবিত করতে পেরেছে, শুধু এটুকুই প্রাসঙ্গিক।

তবু লেখার পরেই আমার কাছে অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্ন এসেছে যে, বাবুই কে? মেঘ কে? ইত্যাদি। কিন্তু আমি তাদের সরাসরি বলেছি যে, এর উত্তর আমি দেব না। গোপনেও নয়। কোনো ডিফেমেশনের অভিসন্ধি ছিল না আমার। আমি একটি গঠনমূলক লেখা লিখতে চেয়েছিলাম। যেখানে জীবনের অন্ধকারগুলোও আলো হয়ে ঝলসে উঠবে, আর সে আলো স্পর্শ করবে সবার মন। মেঘ কে, তা কেউই বুঝতে পারেনি, শুধুমাত্র তারা ছাড়া যারা এ ঘটনার সত্যতার সাথে জড়িত। কারণ মেঘ একটি প্রতীকী চরিত্র। কিন্তু এই লেখাটি লেখার পর থেকেই শুনলাম, কোনো একজন বেশ কিছু লেখার তর্জমা বানিয়ে সবার দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে এক ফার্স্ট গার্ল সম্পর্কে অনেক ব্যক্তিগত স্তরের নিচ কথাবার্তা লেখা হয়েছে, যা `ভূত বিলাসের ঘর` এ লেখা আমার জীবন অভিজ্ঞতাকে আক্রমণ করেই লেখা, এবং তা বেশ স্পষ্ট। আমি এ সমস্ত অপবাদকে সত্যি ধরে নিয়েই দু’একটা কথা বলতে চাই।

দেখো, আমি কোনো কালে কোনো স্কুলের ফার্স্ট গার্ল ছিলাম, সে আমার বড় অহংকারের বিষয় নয়। কিন্তু এখানে যেহেতু আমি আমার জীবন অভিজ্ঞতার কথা বলছি, সেহেতু কোন জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে আমি তা দেখেছি, সে কথা তো আমাকে বলতেই হবে। যেমন ধরো, যদি আমি কোনো পাহাড়ের টপ থেকে কোনো ভিউ নিয়ে থাকি, সেতো আমাকে বলতে হবে যে, আমি অমুক জায়গা থেকে দেখেছিলাম। তেমনই।

আমার মা কোনো মহিয়সী, আমি তা বলিনি। তার কিছু দোষ থাকতেই পারে। এমনকি অনেক দোষ থাকতে পারে। কিন্তু তিনি যেমনই হোন না কেন, যদি তিনি জীবনে অনেক ভুল করে থাকেন, যদি তিনি দুশ্চরিত্রা হন, যা-ই হন না কেন, তাতে আমার জীবনে তার গুরুত্ব বা স্থান কিছুই বদলায় না, আর তাতে তার লড়াইও খাটো হয়ে যায় না। তিনি জীবনে অনেক ভুল করেছেন। আর তার ভুলের মধ্যে দিয়েই আমি ঠিকটাকে চিনতে শিখেছি।

আমার মা যদি আমার বাবাকে কেবল টাকার জন্যেই ধরে রাখতে চেয়ে থাকেন, আমি তার মধ্যে কোনো অন্যায় দেখি না। কারণ তিনি অসহায় ছিলেন। তিনি একজন সিংহী হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি দুর্বল ছিলেন। তিনি ভীত ছিলেন। এ তার কোনো অপরাধ নয়। তারপর আরো যা যা লেখা হয়েছে তার মধ্যে আছে চুরির অপবাদ, কোনো পরীক্ষার্থীকে ভুল উত্তর বলে দেয়া, কারোর শরীর খারাপ ছিল, সে কথা বলা হয়নি। ইত্যাদি।

যদিও এসব আমার স্মৃতিতে নেই, তবু যদি এমন করে থেকে থাকি, খারাপই করেছি নিশ্চয়ই। যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে আই সুড বি সরি ফর দ্যাট! হ্যাঁ, কি যেন, বয়ঃসন্ধিতে সেক্সের বাড়বাড়ন্ত না কীসব বলা হয়েছে। তো সে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি না হয় বিজ্ঞানে কাঁচা, স্কুল ভুল করেই প্রাইজ দিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু যারা বিজ্ঞানে ভালো তাদের তো জানা উচিত যে, ওই বয়সে শরীরে অনেক রকম হরমোনের পরিবর্তন হয়, ছেলেদের ভালো লাগে, সবারই লাগে কমবেশি, না লাগাটা খুবই চিন্তার বিষয়। হ্যাঁ, বলবো তো, সে গল্প বলবো।

এরপর এলো ডিপ্রেশন। এ নিয়ে মুখ লোকানোর কীই বা আছে! অনেক বড় বড় মানুষদেরও ওটা আছে। তারাও রেগুলার কাউন্সেলিং করায়। হ্যাঁ, আমাকেও যেতে হয়েছিল কোনো সময় বৈকি। সে কথাও বলবো।

কিন্তু বলো তো, এসবের সাথে আমার `ভূত বিলাসের ঘর` এর কি সম্পর্ক? আমি ওই মেঘের জীবনের ছোট-বড় অনেক প্রায় সবটাই জানি। তা বলে কি এখন সেসব ছেলেভুলানো গল্প বলতে বসবো? না। আমি ততটুকুই বলেছি যতটা প্রাসঙ্গিক। যার মধ্যে কিছু অন্তত সামাজিক শিক্ষা আছে। আমার দরজায় এসে যতই কড়া নাড়ুক, আমি বলিনি। বলতে চাইওনি মেঘ কে।

কিন্তু সেই মেয়েটিতো নিজের অবস্থান নিজেই স্পষ্ট করে দিলো। সে দেখিয়ে দিলো, তার মনের ভেতর কি কি আছে। আমি যা বলতে চেয়েছিলাম, তার সত্যতা সে নিজেই প্রমাণ করে দিলো। না, সে এখানেও থামবে না। যতক্ষণ না তার দগদগে ইগোখানা শান্ত হচ্ছে, সে এসব জানা-অজানা অনেক তথ্য এনে প্রমাণ করতে চাইবে, মেঘের রচয়িতা আসলে কত খারাপ।

আমি এসব কোনোকিছুই ডিসপ্রুভ করতে চাই না। চাইবোও না। যে বন্ধুকে ভালোবেসেছিলাম, তার প্রতিটা শব্দ আজ অলঙ্কারের মতো ধারণ করলাম। শেষে বলি, আমি মানুষটা খুব ভালো এমন দাবি কোথাও করিনি। তোমাদের মতোই আলো-আঁধারিতে ভরা। হয়তো খারাপের পাল্লাটাই ভারি। সে ব্যক্তি মানুষটা যেমনই হোই না কেন, দাম্ভিক নাকউঁচু চরিত্রহীন চোর সে যত খারাপ অভিধাই আমাকে দাও না কেন, এ জীবনকে আমি যে চোখ দিয়ে দেখতে শিখেছি তা বড় মন্দ নয়। যদি আমার লেখায় সে সুগন্ধ পাও, যদি মনে হয় এ মানুষটা মিথ্যে বলতে পারে না, যদি মনে হয়, এ মানুষটা তোমাকে নতুন কোনো পথের দিশা দিতে চাইছে, যদি মনে হয় এ মানুষটার লেখার মধ্যে কোনো আশ্রয় পাচ্ছো, তবে পোড়ো। আমি তোমাদের জন্যই এ লেখা শুরু করেছিলাম। সাথে থেকো।

আমার ‘ভূত বিলাসের ঘর’ কোনো মিথ্যে বিলাস নয়। আমার প্রতিটা যন্ত্রণা সত্যি। প্রতিটা দাগ সত্যি। আর সেইসব কষ্টের অববাহিকা পার করে আমি তোমাকে সাথে নিয়ে কোনো অজানা আলোর জগতে উত্তীর্ণ হতে চাই।