চিত্রকর্ম: কাইয়ূম চৌধুরী

চিত্রকর্ম: কাইয়ূম চৌধুরী

মাসুদ পথিকের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৩, ২০১৮

স্পেস

অথবা হাওয়ার ভেতর ধাওয়া করছে
গু শালিক
কেননা এই স্পেসের মাঝে লাফিয়ে পড়ছে
জলফড়িং

স্পেসের ভিতর উড়ছে ফোকফিউশন
আর দুলে আউশ আমন

ধানের নলীন দুধ খেয়েই বাঁচি
হাওয়ার ভেতর আমরা দুজন

আমরা দুজন আমরা সুজন
থাকি হাওয়া ও জলের কাছাকাছি

আমার জন্ম, আর

অতএব জন্মই আমার আজন্ম পাপ কিংবা আজন্ম পূণ্য
এই বাক্যের পেটের ভেতর থেকে জন্মালো আজকের ভোর
এই দিন

আর ট্যাবুর যতো সাপ, বিধি ও পরিধি, আর

আমি তো চাইনি এমন মহৎ কিংবা নোংরা জন্ম
কেবল ইচ্ছে হয়
আমার কেবল ইচ্ছে কালিজিরা ধানের ক্ষেত হতে
ধানভরা নৌকায় পাল তুলে ভাটির গাঁয়ের দিকে যেতে

এমন দৃশ্য হয়ে যদি জন্মাতাম, আহা!... যদি হতাম
তবে তো সকল অশুভ বাক্য সকল শুভবোধ থেকে দূরে

নিভৃতে,

ধানের ক্ষেতে দোয়েলটি দুলতো আমি হয়ে আমি হয়ে
তবে তো
জন্মের চেয়ে মৃত্যুই সুন্দর আর সৃজনশীল জেনে!

আমি আমার জন্মদিনটি খেয়ে নিয়েছি
এই মানুষ জন্মকে কবেই করেছি লোপাট

এখন আমি অজন্ম, কালিজিরার সম্ভাব্য বংশধর কোনো

আর আমি নই কেনো প্যারাডক্স; নই জন্ম ও মৃত্যুর অধীন, বুনো

মেঘ ও কবিতা

তথাপি যখন যখন যাই কবিতার বাড়ি
মেঘকে নিয়ে যাই সঙ্গে
মেঘ মুখভার করে থাকে, ফলে আমি
তাকে আদর করি বুকে রাখি

কবিতার সঙ্গে কথা বলি খুনসুঁটি করি

কখনো জাপটে ধরি
কখনো কবিতার গহীনে যাই
কবিতার বর্ণ শব্দ ধ্বনি নাড়াচাড়া করি;
মেঘ তা বাক্যের মতো দূরে দাঁড়িয়ে দেখে

আমি আরো কিছু করি কবিতা সঙ্গে
কেননা কবিতাকে চুমো খাই স্তনে হাত রাখি
মেঘ চেয়ে দেখে আমার অস্বস্তি হয় কেবলি

মেঘ আমার ছোট মেয়ে
মা মরা মেয়ে আমার
ওকে ফেলে যেতে পারি না কবিতার ঘরে
আর আরো কেনো গভীরে

আকাশ জুড়ে মেখলা বাক্যের বাড়াবাড়ি
মাটির ঘরে হয় বৃষ্টির শব্দগুলি, শীৎকার

জন্মদাতার জৈব তাড়া মেঘ দেখে মুখভার করে
রোদের কোলে মেঘ আজ ছন্নছাড়া!
মেঘ টুকরো টুকরো হয়, হয় বৃষ্টির ধারা...

পুষি বেড়াল

মেঘ খেয়ে খেয়ে বেড়ে ওঠা পুষি বেড়াল
রোদ্দুরের ঘরে ঘুমায়
লোমের ভেতর তার ভোরের নদী
নিরুপায় নিরুপায়

বাতাসে তাড়া খাওয়া মাছের ভয়
রোদ্দুরে নখের আঁচড়ের শব্দ হয়

মেয়ে ও কবিতা

জেনো শৈশব থেকে একটু ভেতরের দিক
যেখানে ভাটিয়ালি নদীর বাঁক

তিন সন্ধ্যার মুখে তিনটি হালিককে
উড়িয়ে দিলাম মৃত্যুর ঠিক ভেতর

সেখানে কোমল হয়ে আছে আকাশ
কঠিনকে বুকে নিয়ে

সম্পর্কের সব বিষাদ
সংসারের বোরিংনেস থেকে সৃজিত চিঠি দিলাম বেঁধে
এই সময়-হালিকের রঙিন ঠোঁটে

মৃত্যুর ভেতর নিশ্চয় করবে পাঠ
মৃত্যুর নতুন প্রজন্ম এসে
শিখবে জীবনের বিবিধ গ্লানি, আরো
কিভাবে হারিয়ে যায় সব ভালোবাসার বাণী!
উঁচুনিচু গরম মাংসের ভাঁপে

কেউ হঠাৎ কোনো নতুন ভোরে দেখতেই পারে
খাদ্যে মিশ্রিত বিষ খেয়ে
মরে পড়ে আছে এই তিনটি হালিক

তিনটি আলাদা সময় অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ