মাহমুদ দারবিশের কবিতা ‘যখন শহিদেরা ঘুমোতে যায়’

অনুবাদ: আসাদুল হক খোকন

প্রকাশিত : জুন ০৪, ২০১৮

যখন শহিদেরা ঘুমোতে যায়,
গতানুগতিক শোকার্তদের কবল থেকে
তাদের রক্ষার জন্য আমি জেগে থাকি।

তাদেরকে বলি, নিশ্চিত এক নতুন দেশে
একদিন তোমাদের ঘুম ভাঙবে
যে দেশে থাকবে- মেঘ, বৃক্ষ, মৃগতৃষ্ণিকা ও জল।

আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাই
কেননা তারা অবিশ্বাস্য এক ঘটনা থেকে
হত্যাযজ্ঞের উদ্বৃত্ত মূল্য থেকে নিজেদের বাঁচাতে পেরেছে

সময় ক্ষেপণ করি—
ওরা সময়ের কব্জা থেকে আমাকে যেন টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়
তবে আমরা কি সবাই শহিদ?

কানে কানে বলি—
বন্ধুরা, একটি দেয়াল অন্তত আস্ত রেখো...
কাপড় শুকাতে হবে
আর সংগীতের জন্য অন্তত একটি রাত।

তোমাদের যেমন ইচ্ছে সবখানে টাঙিয়ে রাখবো তোমাদের নাম!
এই অবসরে একটু ঘুমিয়ে নাও
টক আঙুর গাছের খানিক উঁচু মাচানের বিছানায়।

রক্ষীদের ছোরা ও নবিদের বিরুদ্ধে কেতাবের ষড়যন্ত্র থেকে
তোমাদের সমুদয় স্বপ্নকে রাখবো বিনিদ্র পাহারায়
আজ রাতে যখন ঘুমোতে যাবে—
গানহীন মানুষগুলোর গান হয়ে থেকো যেন চারপাশে!

বলছি শোন—
আশা করি নতুন একটি দেশে তোমাদের ঘুম ভাঙবে
তবে দেশটিকে দ্রুতগামী একটি ঘোটকির পিঠে
তুলে দিতে ভুলো না আবার!

চুপিচুপি বলি—
বন্ধুরা, আমাদের মতো হবার সে ভাগ্য তোমাদের নেই
আমরা এক অজানা ফাঁসির রজ্জুর মতো ঝুলে আছি বহুকাল!

 

ফিলিস্তিনের বিপ্লবী কবি মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ পশ্চিম গ্যালিলির আল বিরওয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। নির্যাতিত ফিলিস্তিনীদের মুক্তির স্বপ্নে কলম তুলে নেন হাতে, নিজ বুকে ধারণ করেন ফিলিস্তিনের হৃৎপিণ্ড। মাহমুদ দারবিশ আরব দুনিয়ায় ফিলিস্তিনের `জাতীয় কবি` হিসেবেই বিবেচিত। ৩০টির বেশি কবিতার বই, আর ৮টি গদ্য গ্রন্থের প্রণেতা এই কবি মাতৃভূমি ফিলিস্তিনের প্রতি তার গভীর আবেগের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু শুধু `কবি`-এই পরিচয়েই দারবিশকে সীমাবদ্ধ রাখা অন্যায় হবে। কারণ ফিলিস্তিনের মানুষের অবরুদ্ধ ভাষাকে তিনি মূর্ত করেছেন কবিতায়। আকার দিয়েছেন তাদের আত্মোপলব্ধিকে। দারবিশের কবিতার লাইন জেগে উঠেছে গাজা ভূখণ্ডের বাসিন্দা আরব রমণীর সূচিকর্মে, তরুণের টি-শার্টে লোগো হয়ে জোরালো করেছে ইহুদিবিরোধী প্রতিবাদের ভাষাকে। সেই শৈশব থেকে ইহুদিদের হামলার মুখে বিভিন্ন আরব দেশে কেটেছে তার নির্বাসিত জীবন।