মির্জা গালিবের আজ ২২০তম জন্মাদিন

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭

ইশ্‌ক প্যর জোর নেহি হ্যয়
ওয়োহ আতশ
গালিবকে ল্যগায়ে ন্য লাগে
অওর বুঝায়ে না ব্যনে।

প্রেমে খাটবে না কোনো জোর,
এ যে জ্বলন্ত আগুন,
গালিব জ্বলবে না জ্বালালেই
নিভবে না কোনও দিন নেভালেও।

জীবনযন্ত্রণার তীব্র দহনে পুড়তে পুড়তেও দ্বিধাহীন স্বরে যে মানুষটি বলতে পারেন যে, জ্বালালেই তিনি জ্বলবেন না, আজ সেই মহান মানুষটির ২২০তম দিন। তিনি মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব।
তার ডাকনাম এর আগে ছিল আসাদ, এর অর্থ সিংহ। তিনি বৃটিশ ঔপনেবিশক আমলের ভারত উপমহাদেশের চিরায়ত উর্দু ও ফার্সি ভাষার কবি। দক্ষিণ এশিয়ায় তাকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়।
শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয়, সাড়া বিশ্বেই রয়েছে গালিবের জনপ্রিয়তা। গালিব কখনও তার জীবিকার জন্য কাজ করেন নি। সারা জীবনই তিনি হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ধার কর্য করে, নতুবা কোনও বন্ধুর উদারতায় জীবনযাপন করেছেন। তার খ্যাতি আসে মূলত তার মৃত্যুর পর।
তিনি তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দেবে। উর্দু কবিদের মধ্যে গালিবই এখনও পর্যন্ত বেশি আলোচিত কবি।
গালিব ১৭৯৭ সালে আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। চার বছর বয়সে তার পিতা আবদুল্লাহ বেগ খানের মৃত্যু হয়। মির্জা গালিবের পিতা আগ্রার এক অভিজাত পরিবারে বিয়ে করেছিলেন সৈনিক জীবনের অনিশ্চয়তার কারণে তিনি তার স্ত্রীকে আগ্রায় পিতার পরিবারেই অবস্থানের অনুমতি দেন।
মামার বাড়িতেই গালিবের জন্ম এবং তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক শৈশব কাটান মির্জা গালিব। তিনি যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র ও অধিবিদ্যা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশুনা করেন৷কিন্তু তার ঝোঁক ছিল ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি।
আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ আবদুস সামাদ নামের এক জ্ঞানী ব্যক্তি আগ্রা সফর করেন এসময়ে। গালিব তার শিষ্য হয়ে যান। গালিবের মামার বাড়িতে আবদুস সামাদ দুই বছর কাটান। গালিব কখনো কাউকে তার `উস্তাদ` বলে স্বীকার না করলেও পরবর্তীকালে আবদুস সামাদের নাম উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার সাথে৷
৯ বছর বয়সেই গালিব ফার্সিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন। পুরো জীবন ধরে তিনি ফার্সিকে তার প্রথম প্রেম বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি তার কবিতা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার হৃদয়ের আগুন থেকেই আলো দিচ্ছে আমার কবিতা। আমি যা লিখছি তাতে একটি আঙুল দেয়ার সাধ্য নেই কারও।’
গালিব নিজেকে দিল্লির অভিজাতদের মধ্যে গণ্য করতেন এবং সেভাবে চলতে ফিরতে ও আচার আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন। কবি আলতাফ হোসেন হালী গালিবের স্মৃতি বইতে লেখেন, গালিব কখনও পালকি ছাড়া কোথায়ও যেতেন না। ধর্মের প্রতি তার বিশেষ আবেগ ছিল না, কিন্তু তার কবিতায় ধর্মীয় শব্দাবলি বিভিন্ন সময় ওঠে এসেছে প্রতীকী অর্থে। এক কবিতায় তিনি লিখছেন, ‘কা`বা তওয়াফের প্রয়োজন নেই আমার/আমাকে জমজম কূপের কাছে থামতে হবে/কারণ আমার ইহরাম সুরায় ভিজে গেছে/গতরাতে আমি জমজমের পাশে বসে আকণ্ঠ সুরা পান করেছি/প্রথম আলো ফুটতেই ইহরাম থেকে সুরার দাগ ধুয়ে ফেলতে হবে।
গালিবের আরেকটি দুর্বলতা ছিল জুয়া খেলার প্রতি। এ ব্যাপারে তার কোনও রাখঢাক ছিল না। জুয়াখেলার কারণে ১৮৪১ সালে গালিবকে সতর্ক করে দেয়া হয় এবং ১০০ রুপি জরিমানাও করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দিল্লির কোতোয়াল ফৈয়াজ হাসান খান গালিবের বাড়িতে হানা দিয়ে জুয়া খেলারত অবস্থায় তাকে পাকড়াও করেন এবং বিচারে তাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুশো রুপি জরিমানা করা হয়।
১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মহান কবি গালিব ইন্তেকাল করেন। দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে পারিবারিক গোরস্তানে গালিবকে দাফন করা হয়।

গ্রন্থনা: ফারুক ইমন