মেহেদী হাসান তামিমের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : আগস্ট ১৪, ২০১৮

দে ছুট, ছুটব কোথায়

ছুটি মানেই ছুটির মতো
ছুটি মানেই দে ছুট।
গায়ের পথে সবুজ ঘাসে, রোদের পাশে
ছুটতে ছুটতে নামলে দুপুর, মেঠোপথে শীতল পুকুর
পরশ তার বুলিয়ে নিয়ে— আকাশঘুড়ি নাটাই সুতো পাখপাখালি ডিগবাজিতে উল্টোঝাপ
সোঁদাগন্ধ কাদামাটি; নাড়ির টানে ফিরছি বাড়ি।
মাখব গায়ে শান্ত বিকেল শান্তিবায়ু অতল সবুজ, বাঁশের পাতা স্নিগ্ধসলিল।
আজব তবু! আজব যেন, আজব ভীষণ
বাজছে বুকে দুরুদুরু, সূর্য শেষ
ফিরতে হয় ফিরে সবাই, মাখিয়ে গায়ে অসীম চাওয়া
ফেলেই যাব সকল মায়া।
ছুটিই তবু দেয় জানান, সময় শেষ, ফিরতে হবে
ফিরতে হয় ছুটতে ফের
ছুটব জানি, ফিরি হেথায়
ছুটব সেথায় খাঁচার ভেতর জেলের সীমায়।
ছুটতে হবে ছুটব শুধু ছুটব জানি
ছুটব কোথায় নেই তো জানা!

দুঃসময়

ড্যাডাং ড্যাডাং চললে কোথায়?
বেরুবার আগে
বুকের বোতামটি লাগিয়ে নিয়ো
রান্না... আজ কি রেঁধেছো?
রোজ একি সে সেদ্ধ ফুলকপি আর উচ্ছে, অখাদ্য!
ওগো, জিবটা বুঝি হারিয়ে যাচ্ছে
সময় তো ছিল, নিত্যি মাংস সাথে বকাবাদ্য
দাও না, দেবে ভেজে ডুবোতেলে একটা শুকনো লংকা
ফিরবার পথে, পারলে এনো দুটো ডিম, ক`টা আলু
খুশিতে বাজাব তবে ডমরু ডংকা।
দেবে আশি টাকা মাত্রই
কয়টি টাকাই তো!
কবে থেকে যে চেয়েই যাচ্ছি।
মনে নেই? নেই সত্যি মনে! সত্যিই!
একদিন কোঁচা ভরে কতশত জ্যোছনা দিয়েছি
রোজই তো করো অমন
না হয় আজ নাই বা বললে, তুই মর বুড়ো।
হয় না, না বললে কী হয়!
কিছু তো পাবে পরিত্রাণ পরাণ
কিছু তো হবে অক্ষমের জয়।
কি গো, বলছ না কিচ্ছু
নাকি দরজা ভেজিয়েই বেরুচ্ছো!

অবশেষে

খুব বেশি ভালো থেকো তুমি
অথবা খুব বেশি ভুলে থেকো।
ভুলে যেও ফুল, ভুলো সব ভুল;
জ্যোছনাভূমি, তপ্ত ঠোঁট, স্পর্শ— অমোঘ চঞ্চল
ভুলেই যেও, তুমি থেকো দীপ্র অবিচল।
উড়বে ভেসে ভেসে, মেঘেদের দেশে
ব্যথাহত বুক থাকুক আমারই;
তবু তুমি হয়ো সুখি, হও সুখি অবশেষে!

আমি জীবন

তথাপি থাকেন জগতে কেউ কেউ এমন, জীবনানন্দ দাশ ছিলেন যেমন। আছেন এখনো।
ভালো লাগে না শব্দ। লাগে না ভালো মঞ্চ। লাল-নীল আলো-আঁধারি, কৃত্রিম আলো। ভালোবাসে না ভিড়, কোলাহল মুখর জীবন; যান্ত্রিক আস্ফালন আর ভালো লাগে না তার।
নীরবতা তার কোলাহল। নির্জনতাই তার উপভোগ্য, সার্থক বোধজীবন— ভাসিয়ে মনপবন,
সঙ্গীহীনতাকেই করেছে আপন, সে-ই তার বিশ্বস্ত সঙ্গী, প্রিয় স্বজন।
ভালো লাগে ফু্ল, পাখির গান; ভালো লাগে বাঁশি, স্বপ্নচারী পুরনো অশ্বথের ডালপালা ছড়ানো মুচকি হাসি।
ভালো লাগে তার মেঘেদের ভেসে চলা, আলোর লুকোচুরি; ভালোবাসে নদী, ভালোবাসে বন,
সবচেয়ে ভালোবাসে শূন্যতা, ধুধু বিরানভূমি, আর জ্যোছনার কোলে শুধু একাকিত্ব নির্জনতাই।

ধ্বংসবীণা

ধুলোবালিদের মাতাল লুটোপুটি, ক`ফোঁটা জলের পতন
মেঘেদের গুড়ুগুড়ু ধ্বনি;
জানাচ্ছে কি গত পলাতকা বোশেখের বার্তা আগমনী!
অবহেলে পড়ে থাকা ধুলোকণাদের উঠেছে মাতম
একি রূপ, অবিনাশী নেশা সেই পরম;
লক্ষ্যহীন পথভ্রষ্ট ওড়ে দিক্বিদিক
মর্মর পত্রপল্লবদল;
মেলে অন্ধ ডানা তার; অশান্ত ঝড়া বকুল।
ব্যাকুলতা আজি চুমিছে গগন
কেশরাজি ছড়ানো ছিটানো—
যেন অগোছালো এলোমেলো আহত বন!
কী অভিমানে বাজিছে বীণা ভয়ার্ত এমন
আঁখিকোণে কি ঝলকায় অশ্রুজল, ছলছল্!
এ কী রূপ টালমাটাল স্বপন!

কখনো জীবন

নীলোর্মি নীলোৎপল নীলাকাশ নিশ্চলা চঞ্চল
আজিকে এ মেঘমন জলসাথে ভেসে
জলচল ভীষণ নির্মল ছলছল!
চকিতে জাগে পাখি, গেয়ে ওঠে বিমূর্ত কোনো গান
ছোঁয়াচ দূরেই বাজে দলছাড়া শ্রুতি টুংটাং
উপোস জলে লালশালুর মন্ময় হেঁটে চলা বিছান
কী খোঁজে আঁখি চারিদিক, শুদ্ধান্ত কোন্ চিকচিক
পা বাড়ে পথ কভু দিক যেথা বিদিক দিশেহারা
বনহংসী মন নেচে নেচে ভাসো মা হারা নেই ত্বরা
জীবন কখনো এমন—
তন্দ্রাচ্ছন্ন স্বপ্নালু মনোহর মায়াকাড়া
কভু থেকে থেকে আশা জাগানিয়া!