মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশন

আরিফ মঈনুদ্দিন

প্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০১৮

বাংলাদেশের অনেক মেয়ে ইউরিন ইনফেকশানে ভোগে। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয় খুব অল্প বয়সে। কারণটা কি কেউ জানে? আমার মনে হয়, জানে। কিন্তু Acknowledge করে না। কিছু বিষয়ে আসলে সত্যিকারের শক্ত মুভমেন্ট দরকার। দৃষ্টিভঙ্গি একদিক থেকে বদলাবো, অন্যদিকটা অন্ধকারে রেখে দেব, এভাবে হয় না।

সিম্পলি গ্রাউন্ড থেকে শুরু করি। আমরা ট্যুরে দুর্গম এলাকার ঝরণায় গেলাম। প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার হাঁটার পথ। আমরা ছেলেরা রওনা দেয়ার আগে পানি খাচ্ছি, সাথে পানি নিচ্ছি। আমার মেয়ে বান্ধবীটি পানি খেলো না। তার ভয়, পথিমধ্যে যদি ওয়াশরুমে যেতে হয়? আমি নিজে যাওয়া-আসার মধ্যপথে তিনবার ইউরিনেট করলাম। কিন্তু মেয়েটা সেই সকাল ছয়টা থেকে রাত ৯টায় বাসায় যাওয়ার আগপর্যন্ত ওয়াশরুমে যেতে পারলো না। আমি পথে হোটেলে, পাহাড়ের ঝোপে, যেখানে পারলাম পেচ্ছাব করলাম। মেয়েটার সে সুযোগ নেই।

আমি খোলামেলা ভাবেই বলছি, কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হবেন না আশা করি। একটা মেয়ের ব্যবহার করার মতো পাবলিক ওয়াশরুম আমাদের শহরে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ বিজনেস প্লেস, যেমন- হোটেল, রেস্তোরাঁ বা অন্য যেকোনও প্রতিষ্ঠান যাদের কাস্টমার বা ভোক্তাদের জন্য ওয়াশরুম আছে, সেখানে নারীদের জন্য অবশ্যই, আই মিন ইট, অবশ্যই আলাদা ওয়াশরুম থাকতে হবে। ওই নিয়ম পর্যন্তই, আছে কয়টিতে? এ সমস্যা ঘরে ঘরে। রাস্তায় পেচ্ছাব পাবার ভয়ে পানি কম খেয়েছে, এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। এ ধরণের কোনও মেয়ে এদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।

বরং পানি কম খেতে খেতে কিডনির মিসফাংশানিং, ইউরিন ইনফেকশন, এসব রোগে মেয়েরা আক্রান্ত হচ্ছে হরদম। দেখা যায়, কেউ বাসায় বলে, আর কেউ কেউ না বলেই সহ্য করে যায় বছরের পর বছর। সেইফ, ক্লিন এবং আলাদা ওয়াশরুম, এটা মেয়েদের প্রাপ্য প্রিভিলেজ। আমরা সত্যিই কি সেটা তাদেরকে দিচ্ছি? আমাদের সরকার প্রধান একজন নারী। তিনি শহরে শহরে মেয়েদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেট স্থাপনে কি ভূমিকা রাখতে পারেন না?

পারেন।  তবে আমাদের দিক থেকে কোনও দাবি নেই। আমরা জেগে জেগে ঘুমাই। যেমন নারী অধিকারে ব্যতিব্যস্ত নারীরা পিরিয়ড নিয়ে ট্যাবু ভাঙার জন্য ফেসবুকে সরব। তারা পিরিয়ডের চেয়েও হালকা, সাবলীল এবং প্রাকৃতিক এই বিষয়টা নিয়ে কথা যদি বলতেন, মুভমেন্টে যেতেন, আমার সত্যি ভালো লাগতো। পিরিয়ড মাতৃত্বের প্রতীক। কিন্তু একজন মা এদেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে, অফিস, ব্যাংকে তার সন্তানকে স্তনদান করার ক্ষেত্রে পর্যন্ত যে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়, নারী অধিকার কর্মীরা সেই সব ট্যাবু ভাঙার ক্ষেত্রে নীরব কেন? বাংলাদেশে স্যানিটারি ন্যাপকিনের অপ্রতুলতার কারণে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়াল জেনিটাল ইনফেকশানের চেয়েও কি ইইরিন ইনফেকশানে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বেশি নয়?

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো দারিদ্রসীমার নিচের মেয়েদের জন্য স্যানিটারী প্যাড সাশ্রয়ী করতে পারিনি। কিন্তু ওয়াশরুমের সমস্যায় দরিদ্র-বিত্তবান, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই-ই সমানভাবে ভিকটিম। আমাকে একটু কেউ ভুল প্রমাণ করে দিন, প্লিজ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো নারীকে আমরা সব অধিকার দিতে চাই ঠিকই, তবে পিরিয়ড যেমন সেখানে ট্যাবু নয়, তারা সেখানে কিন্তু ঠিকই নারীর জন্য সমান সমান আলাদা পাবলিক ওয়াশরুম রেখেছে, নারীর স্তনদানে স্বাধীনতা রেখেছে।

আমরা কতোটা পিছিয়ে আছি, সেটা কি আমরা বুঝি? চলুন শেয়ার করি, Let`s Spread The Awareness... Let`s Ensure Women Their Deserving Privilege. অন্তত রক্তাক্ত প্যাডের ছবি আপলোডের চেয়েও এটা বেশি দরকারি প্রজেক্ট। হ্যাশট্যাগের পাশে বসিয়ে দিন, লিখুন: Public washroom for women

আপনাদের অধিকারের জন্য আপনারা কথা না বললে, কেউ দিবে না। I Swear, কেউ না। আর প্রতিটা পুরুষ, আপনার মা, আপনার বোন, আপনার স্ত্রী বা প্রেমিকা... কাউকেই যেন ইউরিন ইনফেকশান বা কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগতে না হয়.. দায়িত্ব কিন্তু আপনারও।