ম্যাড সাইন্টিস্ট

পাপিয়া জেরিন

প্রকাশিত : মার্চ ২২, ২০১৮

আপনি নয়টা০পাঁচটা অফিস করেন। অফিস শেষ হইলে গোয়ালঘরে ফিরা যান। এরপর টকশো, নিউজ বা ডেইলি সোপ দেখতে দেখতে জাবর কাটেন। তারপর ঘুম। আর সে ঘুম ভাঙে কাঁটায় কাঁটায়। ছকবাঁধা এ জীবনে আপনি অনেক বিস্ময়কর জিনিস ও অদ্ভুত মানুষ দেখছেন। দেখে ভাবার সময় পান নাই। একঝলক দেখে আপনার মনে হইছে, সেগুলা আসলে কি বা সেই মানুষগুলি বা কেমন! যা দেখছেন তা হেলুসিনেশন বলে চালায়ে দিতেছেন আর অদ্ভুত মানুষগুলাকে আপনি এক কাতারে নামায়ে রেখে বলতেছেন, এরা উন্মাদ।

ধরেন, একজন মানুষ তার খাবারগুলাকে একটা প্যাটার্নে সাজায়ে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমানে খায়। খাওয়ার আগে বিশেষ সংখ্যক ন্যাপকিন ব্যবহার করে। হোটেলে থাকার জন্য এমন একটা রুম বাইছা নেয় যার নম্বর (রুম নম্বর) তিন দিয়া বিভাজ্য। রুমে ঢুইকা ঠিক গুইনা ১৮টা (৩ ইনটু ৬) তোয়ালে চায়। এ লোকটাকে দেইখা আপনি কি ভাববেন? ভাববেন, এ মানুষটা Obsessive Compulsive Disorder এ ভুগতেছে! আবার যখন দেখবেন, এ মানুষটি কারো স্পর্শ এড়ায়ে চলতেছে। ভদ্রতার খাতিরে হ্যান্ডশেক করে। পরমুহূর্তেই দৌড়ায়ে গিয়া হাত ধুয়ে নিতেছে। আপনি আরো নিশ্চিত যে, কিছু গড়বড় তো আছেই। তাই না?

আপনারা সবকয়টা গোয়ালের পশু। ঘড়ি ও নিয়মের তোয়াক্কা কইরা এমন একটি মানুষকে উন্মাদ ভাইবা এড়ায়ে যাবেন। কেউ কেউ আগায়ে আইসা জানতে চাইবেন, আগ্রহ দেখাইবেন। তারপর জানা বুঝা শেষ হইলে (আসলে না জাইনা-বুইঝা) উপহাস করতে থাকবেন। এমনি এক ছকে বাঁধা গোয়াল ঘরের মতো আজব পৃথিবীতে জন্ম নিছিলেন নিকোলাই টেসলা। তিনি ছিলেন তার সময়ের চাইতেও অগ্রগামী। তিনি যা দেখতে পাইতেন, আমরা সাধারণ চর্মচক্ষুতে (যেটা সন্মোহিত আছে অন্যের মতবাদে) দেখি না। টেসলা তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়া হঠাৎ থামতেন, বিষাদে নিমজ্জিত হইতেন। কারণ উনি জানতেন, সেটা ভাষায় বোঝানো যায় না। আর যদি যায়ও শ্রোতা তা বুইঝা নিতে অক্ষম।

টেসলা কিছুক্ষণ পরপর চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ দেখতেন। দেখতেন আঙুলে বিদ্যুতের ঝলক। ঠিকরাইয়া পড়া আলো। তিনি এ বিশ্বে ব্যাপ্ত শক্তিগুলিরে একসাথে অনুভব করতে শিখছিলেন পালাক্রমে। তার কাছে Universe: Sea of energy vibrating at different frequencies. তিনি এও দাবি করতেন যে, ভিনগ্রহবাসীদের থেইকা তিনি মেসেজও পান। এগুলা যে শুধুমাত্র হেলুসিনেশন টার্মটা ব্যবহার কইরা উড়ায়ে দেয়ার বিষয় না, সেটাও তিনি প্রমাণ করছিলেন একদিন।

হ্যাঁ উনি টেসলা। উনি আপনার চোখে উন্মাদ। কিন্তু উনার বদৌলতে আপনারা আজকে রিমোট কন্ট্রোলারে পরিচালিত প্রযুক্তি পাইছেন। অল্টারনেটিং কারেন্টের (A.C) সাপ্লাই সিস্টেম কেমনে হয়, তার সুবিধাও নিতে পারছেন। রাডারের বেইজ নকশা পাইছেন। ফ্লুরোসেন্ট বাত্তি চোখে দেখছেন। ভাবলে অবাক লাগে যে, তিনি মার্কনির দশ বছর আগে রেডিও সিগন্যাল ও শব্দ নিয়া সফল গবেষণা করছেন। আর বিদ্যুৎ ও পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়া কি করছেন, তা আপনে ভাবতেও পারবেন না। আমি জানি, টেসলাকে এখনও চিনতে পারেন নাই। নামও শুনেন নাই অনেকে। তবেযারা নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে গেছিলেন, সেখানে হয়তো তার ঝুঁইকা থাকা একটা ভাস্কর্য দেইখা ভ্রু কুঁচকাইছিলেন, এইডা কেডা!

হ কাকা, ইনিই নিকোলাই টেসলা। নয়াগ্রা ফল্সে উনিই হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট বসাইছিলেন।