যিয়াদ বিন সাঈদের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ৩০, ২০১৮

লাভ ইউ মোহাম্মাদ

আমি তো সিজদায় যাই
এত বড় কাজ্জাব সিজদাবনত হলে পাপের বোঝা মাটিতে লেপ্টে যায়
গেঁথে যায় জায়নামাজের সুতোয়
সিজদায় আমি গন্ধ পাই বকুলের
কিংবা নরোম শিউলির
মাঝেমাঝে আমি পাই কাঁটাঅলা গোলাপের ঘ্রাণ
একদিন সেজদায় গেলে মনে লাগে আমার
মোহাম্মাদের চাঁদর আলতোভাবে ছুঁয়ে গেল এপাশে
ওপাশে খটখট শব্দ হয় মাটিতে লাঠির আঘাতে
ভাবি একবার, চলে এলো মোহাম্মাদ
আবারো ভাবি যেন রওজার কিনারায় সিজদাবনত আমি
আমার কানে বিরতিহীন বাজছে,
`নাফসিল ফিদাউ লিকাবরিন, ওয়া আনতা সাকিনুহু`
এই বুঝি হাত উঠে এলো মোহাম্মাদের
রওজার কিনারায় এ বিরাট ফাজেরের উজুদ
অনুভব করেও কেনবা তিনি
আমাকে ভালোবাসতে দ্বিধা করবেন?

পাপের বোঝা কাঁধে চেপে হলেও আমি
সিজদায় গেলে মোহাম্মাদের ঘ্রাণ পাই
খুশবুদার চাঁদরের ছোঁয়া পাই
পাই আমি মৃদুমধুর স্বাপ্নিক অবয়ব
তবে তো মোহাম্মাদ ভালোবাসে আমারে
আমি কাজ্জাব তারে যে ভালবাসি,
এ কথা বুঝাই কী করে?

মা ইয়ারতাহু বিহি লাবীব

ছুটির ঘণ্টা বেজে গেলে
শহরবন্দি মেঘের ছায়ায়
একটি সবুজ সর্পের মতো ট্রেন—
যে পথটি ধরে ছুটে চলে মায়াভরে ছন্দে
তারই বুকটিতে পা ফেলে আমি আর বন্ধু
কোথায় হারাতে চাই, জানি না
নিরুদ্দিষ্ট আমাদের পথে ঝড় না এলেও
ঝড় উঠে যায় চায়ের কেটলিতে
আবহমান কুয়াশার মাঝে লুকিয়ে
উড়িয়ে ফেলি নিকোটিন— কেউ জানে না

পথের পাঁজরে এলোমেলো জীবন্ত হাওয়া
অজস্র শঙ্খচিল, ঝিম ঝিম রোদ্দুরে মেলে দেয় ডানা
এসব দেখার ফাঁকে—
আমাদের যেন নেই দু`দণ্ড অখণ্ড অবসর
হাঁটছি, হাঁটছিই যেন, কোথায়, কোন সুদূরে
পুরনো হাওয়ায় বাজিয়ে নগ্ন পদধ্বনি

অথচ আমাদের এইসব চলাচলে
হঠাৎ করে কোত্থেকে উড়ে আসে একদল প্রজাপতি
অজানা দুঃখের সাইরেন বাজিয়ে চলে যায় একটি শালিক
পথে বন্ধুর সঙ্গে, `কী হলো কী হলো করে`—
শব্দ হয় হাত থেকে ভেঙে পড়া একটি গ্লাশের
ঝমঝম করে
হাতের তালুতে
ভাঙা কাঁচের টুকরা,
দীর্ঘশ্বাস এবং এক বিন্দু রক্তের দাগ
এই পথে আমার এবং বন্ধুর মাঝে
তৈরি করতে চায় যেন এক সুবিশাল হ্রদ
ফরক ফরক করে নির্মাণ হয় সুপ্রসারিত একটি প্রাচীর

আরে, এগুলো তো ছেলেপনা
শৈশবে যে ছেলেপনা এসে ধরা দিতো ঘুড়ির সুতোয়
উড়ে যেত ডানামেলা সালওয়ার মতো
অথবা পড়ে থাকতো মান্নার মতো শিশিরকণায়
এখন পালটে গিয়ে আসে সে নতুন মোড়কে
ঘুড়ির কাগজে লিখে দিতে ইচ্ছে করে অবসাদ।

আঙুলে আঙুল রেখে

প্রেমিকা, আপনার নামে শুরু করা কবিতায় কালি শেষ হয়ে গেছে সেই তো কখন
যেনবা এমন অপরাধে অদ্যকার রাত্রি
শুয়োরের মতো বসিয়ে দিচ্ছে আঁকড়ানো ক্লাচ
ফিলহাল নিবিড় পরিবেশে নিবাসে চারপাশ
এখানেই শুধু অল্প আলোয় জ্বলছে নিভছে কবিতার সবক`টি সেরাজ

কখনোবা ছাত্রাবাসের দেয়াল খামচে ধরে রেখেছি জেদের ছলে
এলোমেলো গচ্ছিত পায়রার পালক দিয়ে আঁকছি আবার প্রেমিকার স্কেচ
মুখ থেঁতলে গেছে
ভস্ম হয়ে গেছে উড়তে থাকা এলোকেশ
যেখানটা চুমু খাবার মোকাম—
ওইখানে ঠিক উইলোগাছের মতো নমনীয় ছেঁড়াপাতার ঝাঁক
কাঁপছে বিভিন্ন রঙে, একে একে তিরতির
প্রতিবাদী পক্ষের আমি ডানামেলা সুরের রিনিঝিনি
অভিনবে কখনো কখনো গাইছি মুক্তির গান
‘কৃষ্ণচূড়া এভাবেই তো ঝরে পড়ে ঝাঁট দেয়া তীর্থে
প্রতি সন্ধ্যায়, আহা বিদীর্ণ রাতটায়’

এখানে যে আছে এক সুরম্য বারান্দা
মাঝেমাঝে শার্শিতে বসে থাকে হলুদ ডানার পাখিগুলো
বিকেলে এলে দেখা যায় নীল অপরাজিতা শিকড়সমেত বেড়ে ওঠে ক্রমাগতই ওপরদিকে
কিন্তু কখনোই এ বারান্দাটিতে এলে
আমি দেখতে পাই না ঝুলে আছে আম্মাজানের কতিপয় হরেকপ্রদ শাড়িটি
দেখিনা কখনোই বাজছে কাকন সানন্দে
অথবা ও ঘর থেকে ডাকছে কেউ—
সন্ধে করেছে ঘরে আয়

এখান থেকে ছুটে পালাবার পথ খুঁজতেই
দেখি একই সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে আছি আমি
পালাবো কোথায়?