যুদ্ধবিরোধী কবিতা

পর্ব ৪

অনুবাদ: রথো রাফি

প্রকাশিত : জুন ০৮, ২০১৮

২০১৪ সালে যখন ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েল জলস্থলআকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করছিল, সারাবিশ্বে ইসরায়েলি বর্বরতার যখন ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল, সেসময়েই এ কবিতাগুলো ভাষান্তর করেছিলেন নব্বই দশকের মেধাবী কবি রথো রাফি। কিন্তু এরপর কবিতাগুলো কোথাও তিনি প্রকাশ করেননি। ছাড়পত্রের পাঠকদের জন্যে ধারাবাহিকভাবে কবিতাগুলো প্রকাশ করা হলো:

মোরিত বারগোতি (ফিলিস্তিন:১৯৪৪)

এওতো ভালো

একটা পরিচ্ছন্ন বালিশে
আর বন্ধু বেষ্টিত হয়ে
নিজের বিছানায় মরাও তো ভালো।

ক্ষতহীন, শেকলহীন, ব্যানারহীন
দাবি-দাওয়াহীন হয়ে
শূন্য ও বিবর্ণ
হাতদুটি বুকের উপর আমাদের একবার
আড়াআড়ি হয় যদি
এমন মরণও তো চমৎকার।

শার্টে কোনো ফুঁটো বা গর্ত নেই
আর বুকের হাড়ে কোনো প্রমাণ নেই
ধূলিবালিহীন এমন পরিচ্ছিন্ন মরণও তো চমৎকার।

আমাদের চিবুকের নিচে পথঘাট নয়, একটা সাদা বালিশ,
আর যাদের ভালোবাসি তাদের হাতের উপর আমাদের হাতদুটি,
আর হন্তদন্ত ডাক্তার আর নার্সদের বেষ্টনিতে,
শুধু বিদায়ের অপূর্ব এক স্মৃতি নিয়ে,
ইতিহাসের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে,
আর কেউ কোনো একদিন একে পাল্টে দেবে
তেমন আশা নিয়ে
পৃথিবীটা যেমন আছে তেমন ফেলে রেখে
মরে যাওয়াও তো ভালো

ইব্রাহিম নাসরাল্লাহ (জর্ডান, ১৯৫৪)

দিনকাল

প্রথম দিন
একটা কফিন বহন করেছিল আমার হাত দুটি
তারা আমাকে একখান ফুলের মালা পাঠালো
দ্বিতীয় দিন
ফুল তুলেছিল আমার হাতদুটি
তারা আমাকে একটা কফিন পাঠালো
আর তৃতীয়দিন আমি চেঁচিয়ে উঠলাম
বাঁচতে চাই আমি
তাই তারা একজন খুনিকে পাঠিয়ে দিলো।

স্বীকারোক্তি

হ্যাঁ
একটা জানালা আর একটা দরজাসহ
বাড়িটাই আসলে একটা কবর।
রাতের কম্বল একটা আধ-ঢাকা শরীর।
বিছানাটা কফিনেরই আধখানা।
আর নারী কেবল তুমিই
পাল্টে দাও দৃশ্যটা।

গাসান জাকতান (ফিলিস্তিন: ১৯৫৪)

বালিশ

তখনো কি সময় থাকে
তাকে বলার,
মা,
শুভ সন্ধ্যা,
বুলেট বিদ্ধ বুকে
ফিরে এসেছি আমি
ওই তো বালিশটা
শুয়ে পড়তে চাই আমি
আর নিতে চাই বিশ্রাম।
কখনো যদি যুদ্ধ এসে
কড়া নাড়ে,
তাদের বলো, বিশ্রাম
নিচ্ছে সে।

নিদা খৌরি (ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি, ১৯৫৯)

মরণ ঢেউ

মরণ আমার দিকে ছুটে আসে
আর আমাকে উপহার দেয় চুম্বন
এখানেই শেষ নয়
মরণ-পর্যন্ত চুম্বন করে যায় আমাকে
শরীরে হাজার চুম্বন এঁকে দেয়
আমার কোমরে আর আমার বুকেপিঠে
তার বীজগুলো রুয়ে দেয়
আমার পাগল প্রেমিক সে

মানুষজনের চোখের আড়ালে
টিয়ার-গ্যাসের গ্রেনেডগুলোর আড়ালে

ওর সঙ্গে, আমিও তো পান করি চুম্বনের অলিগলি
ঢেউয়ের উস্কানিতে মরণ নোঙর ফেলে আবার
মরণ সেই গম যাকে আমার দুর্ভোগের ভেতর
পেষাই করে চলি আমি

আর আমি হাঁটতে থাকি বিপ্লবের চুল্লির দিকে
আর হাঁটতে থাকি কারাগারের দরজার দিকে

চলবে