রংবাজ

উপন্যাস ১

আশিকুজ্জামান টুলু

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮

দুটো বাইক, একটা হোন্ডা হ্যানড্রেড টেন এবং আরেকটা লাল রঙের ইয়ামাহা হানড্রেড, প্রচণ্ড স্পীডে এসে বিসিসি রোড থেকে বনগ্রাম রোডে ডানে টার্ন করে চলতে থাকলো। লোকজন, রিকসা, কুকুর সবাই বাইকের আওয়াজের তোড়ে সরে যাচ্ছে গায়ে লাগার ভয়ে। একমাত্র বাবু, যে কিনা ভিশন ঘিঞ্জি এই বনগ্রাম রোডে এই স্পীডে বাইক চালাতে পারে, অসম্ভব স্কিল ও এরকম ব্যস্ত রাস্তায় চালানোর ব্যাপারে। দুই বাইকে ছয়জন উঠেছে ওরা। বাইক দুটো যোগিনগরে না ঢুকে সোজা চলে গেল বনগ্রাম রোড ধরে। বাবু বাইক চালানোর সময় জিক জ্যাক করে চালায় এবং সাথে থাকে এক্সেলেটারে মুহুর্মুহু রেস দেয়ার আওয়াজ। কী অদ্ভুত লাগে ওর চালনা! কি কন্ট্রোল বাইকে, সবাই ওর চালানোর দিকে তাকিয়ে থাকে। আজ অবধি কারো গায়ে উঠিয়ে দেয় নাই বা অ্যাকসিডেন্টও করেনি। নবদ্বীপ ক্লাব পার করে, জাফর ভাইয়ের পানের দোকানকে হাতের বাঁয়ে রেখে এগিয়ে যায় বাইক দুটো। কী উন্মাদনা, কী তারুণ্য বাইকের সওয়ারীদের! কোনো কিছুকেই ওরা পাত্তা দেয় না। ওদের এরকম চলাফেরায় অনেকেই কিছু বলে না ঝামেলা হওয়ার ভয়ে। ইয়াং ছেলেপেলে, কি বলতে কি বলে ফেলে বা কি করতে কি করে ফেলে, কিছুই বলা যায় না। হাওয়ার আগে এদের চলাফেরা, পান থেকে চুন খসলেই রেগে লাল হয়ে যায়, প্রয়োজনে দু’ঘা বসাতেও কার্পণ্য করে না। সবাই একধরনের ভয়ে থাকে ওদের ব্যাপারে।

বাবুর বাসা ১৩৬ নম্বর বনগ্রাম রোডে। বাসার সামনে এসে বাইকটা রেখে গলির ভিতরে ঢুকে যায়। পিছে পিছে ওর বন্ধুরা আসে। ওরা যেয়ে ঢুকে বাবুর রুমটায়। ঐ রুমটার একটা আলাদা দরজা আছে যেটা দিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে বাবুর রুমে যাওয়া যায়। ওদের বাসার ভিতরে ঢুকতে হয় না। কে এলো আর কে গেল বাবুর রুম থেকে, তা মোটেই বোঝা যায় না। অর্থাৎ বাসার কেউ বুঝতে পারে না। ঢুকেই রিপন বলে সাবুকে, ওই যা, এক প্যাকেট স্টার লইয়া আয়, মুদিরে কইস আমার কথা, পয়সা পরে দিয়া দিমু।
তোর বাপের চাকর আমি? আমি পারুম না, শালা দিমু দিমু কইরা ৯০ টাকা হইয়া গেছে। আমারে দেখলেই চায় মুদি। তোর বাকী তুই নিয়া আয়।
যাবি না তুই?
না।
মনে রাখিস, একটা সিগারেট চাইবি, ...য়া দিয়া দিমু সালার পো, দিল থেইকা উইঠা গেলি।
ছাগলের কানে ক গিয়া, তোর সিগারেটের... টকিও মারলাম না।
বাবু বলল, ফালতু প্যাচাল বাদ দে, কামের কথা কই। বাবুইল্লারে চিনস না তোরা?
রিপন: কোন বাবুইল্লা? ঐ সেলুনের পাশের বাসা?
বাবু: হ, ঐ হালারে আইজকা পিটামু।
সাবু: কেন কি হইছে?
বাবু: কাইলকা সিমা আইসিলো বাসায়, রিক্সা থেইকা নামার পর আইসা ঐ হালায় কইসে ভাড়া দিয়া দিমু নাকি। ক কেমন লাগে। এর আগে আরেকদিন ওরে দেইখা কইছিল, আয় যাই গা। ওরে আমি মারমুই।
রিপন: ও তো দেহি সারাদিন সেলুনের সামনে খাড়ায়া ১০/১৫টা পোলা লইয়া আড্ডা মারে। হালায় একটা ফাউল। দেকছস, আমাগো সামনে সিগারেট টানে, এতো জুনিওর পোলাপাইন, আমারও আর সহ্য হয় না, একটা ঝাড় দিতে হইবো ওগো।
বাবু: চল আইজকা দিয়া দি।
রিপন: খাড়া, কয়টা দিন যাইতে দে। ঈদের দিন ঝাড়ুম ওরে, ওইদিন ওগো পুরা ব্যাচ থাকবো, একলগে ২৫ টারে পিটামু।
বাবু: খোকনগো খবর দে।
রিপন: কাউরে লাগবো না, এই কয়টা ফাউল পোলাপাইনগো লেইগা আমরাই যথেষ্ট। তুই তোর বাসার সব কয়টা হকিস্টিক কাইল লইয়া আইবি, আমার বাসায় দুইটা আছে। হোন্ডা রাইখা আসুম সাবুর বাসায়, ব্যাস! তুই শুধু স্বামীবাগের জনিরে খবর দে, ওরে কইস মইনরে লইয়া আইতে, ঐ হালার একটা নান চাক্কু আছে, আর ঐ হালায় আবার ব্ল্যাক বেল্ট।
সাবু: আমরা ৮ জন, ওরা কিন্তু ২৫, মনে রাখিস।
বাবু: ঐ হালার পো, ডরাইছস? ডরাইলে আহিস না, মুরগির কলিজা লইয়া আমাগো লগে চলিস না। তোর মতো পোলা আমাগো ফ্রেন্ড ক্যামনে হইলো জানি না!
রিপন: ঐ ব্যাটা, ক তো, মাইরপিটের সময় আসল মাইরপিট কয়জন করে? জানোস? জানোস না। হালার পো, আসল মাইরপিট করে মাত্র ৫/৬ জন, বাকিগুলিতো হাতলা বাতলা বায়, দেহিস ঐ ২৫ জনের মইদ্ধে ১৮ জন দৌড় দিবো, থাকবো ৭ জন, তার মইদ্ধে ৩ জন খাইবো নাকে মুখে ধোলাই আর ৪ জন পা ধইরা মাফ চাইবো, বুজ্ঝস? আর আমাগো এই যে ৮ জন, এর মইদ্ধে ৭ জন ঝাড়বো সবাইরে আর একজন দৌড় দিবো ।
সাবু: দৌড় কোন হালায় দিবো?
রিপন: কে আবার, তুই হালায়।

বাবু: হা হা হা হা হা হাহ, মনের কথা কইছস। কয়দিন আগে সেলিমের বাসায় রাইতে বইয়া আড্ডা দিতাসি, রাইত তখন ৩টা, সিগারেট শেষ, হালার পোরে সারা বাড়ি পয়সা টোকায়া তিন টাকা জোগাড় কইরা পাঠাইলাম এক প্যাকেট স্টার আনতে, হালার পো কি করলো জানোস??
রিপন: কি?
বাবু: রানি পয়সা লইয়া বাসায় চইলা গেল। আমরা আধা ঘণ্টা ওয়েট কইরা বাইরাইয়া দেহি হালায় হাওয়া হইয়া গেছে। সারারাত সিগারেটের জ্বালায় মরছি। এইরকম পোলা করবো মাইরপিট, তাও আবার ২৫ জনের বিরুদ্ধে! হা হা হা...
সাবু: তোর নানিরে ইংলিশ।
রিপন: ঐ হালা, মুখ খারাপ করছ ক্যান!
সাবু: না, মুখ খারাপ করুম না, ওরে চুমা দিমু।

আড্ডা চলতে থাকে। খুব সহজেই ওদের প্ল্যান হয়ে যায় বাবুইল্লাদের পিটানোর জন্য। কারো কোনো ধরনের ভয়ভীতি নাই। ওদের দেখে মনে হচ্ছে, ওরা মনে মনে ডগমগ করছে খুশিতে। অনেকদিন পর ঝাড়পিট হবে। হকিস্টিক, নানচাক্কু, জনি, মইন সব অ্যারেঞ্জ হয়ে যায়। ওরা ওয়েট করতে থাকে ঈদের দিনের জন্য।

চলবে