অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

রওশন আরা মুক্তার গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২০, ২০১৮

যেভাবে হয় বিয়া

বড়লোক এক পোলা জিজ্ঞাসিল
আমার সাথে সেক্স করবা?
আমি বলিলাম তুমি আমারে টাকা দিবা?
টাকা-পয়সা ইজ দ্যা ভাইটাল থিং
হিসাব নিকাশ ছাড়া তা তুমি দেও আমারে
আমিও তোমার প্রস্তাব দেখব বিবেচনা ক’রে
এরপর সে-ছেলেটি লজ্জা পেয়ে যায়
এখন এসে সে আমাকে বিয়ে করতে চায়

পীরিত

এক ছুপা নারীবাদী কন্যা জিজ্ঞাসিল,
চুমু খাবা আমারে?
আমি বলিলাম,
তুমি রান্নাবাড়া কইরা খাওয়াইবা আমারে?
খাওয়া-খাদ্য ইজ দ্যা ভাইটাল থিং
তুমি সকাল-বিকাল নিমপাতা ভাইজা
পিছে পিছে ঘুইরা খাওয়াও তা আমারে
আমিও তোমার প্রস্তাব দেখব বিবেচনা করে
এ কথা শুনে সে-মেয়ে লজ্জা পেয়ে যায়
এখন এসে সে আমার সাথে প্রেম করতে চায়।

তোমার হাসি

এক টুকরা জানালার বাইরের দৃশ্য
অন্ধকার হয়ে গেল
আজকে বিকালের পর, আজকের সন্ধ্যায়
একটু-একটু ক’রে আঁধার নামল
তুমি হাসলে কত রকম, কত তীব্র রঙের হাসি
আঁধার নেমে এরপর এল শীতার্ত এক নিশি
শরীরের সব লোমের ভিতরে
জ’মে জ’মে গেল রস
রূপ গ’লে গেল
গন্ধ গেল উবে
এমন তীব্র রঙে
এমন হাসি হাসলে তুমি
এমন তীব্র , তীব্রতরো
কলিজা থেকে রক্ত ঝরে
ঝরঝরো, ঝরঝরো

শুক্লরাত্রে

আজকে আমি সত্যি সত্যি, যেতে যেতে
পিছনে ফেলে পেছানোর রাস্তা
উড়ে এসেছি বহুদূর
চাঁদের দেহ গড়ে উঠছিল
শুক্লপক্ষের রাতে
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি আকাশে তা
কত শত তারাজ্বলা রাত একসাথে
একসাথে ধরা দিল আমার চোখের কোণায়
কত মা জন্ম দিল শিশু
কত বাপ গেল হাটে
এমন আকাশের নীচে
এমনই আকাশের নীচে
হাজার হাজার বছর আগে
এমনই আকাশে উঠেছিল চাঁদ
জ্বলেছিল তারা, যুগ যুগান্তর ধ’রে,
ধরে ছিল মানুষেরা, শক্তভাবে
আপন লোকের হাত
রাত্রি ভেদ ক’রে দিন নামল,
ও আমার রাতের আকাশ!
অন্ধকার শুধু আলোটা দেখল
দেখল আমার নতুন আত্মপ্রকাশ।

নিজের ভিতর অপারেশন

অভিনয় শব্দটা দিয়া কি আর বুঝাইতে পারব আমি
আসলে অভিনয় কারে বলে
পুরা শহরকে সবুজ রঙে রাঙিয়ে দিয়ে
তুমি আর আমি কই হারাইয়া যাচ্ছি এবার?
কোনটারে কী বলে এই ভেদবিজ্ঞান
আমাকে অনেক শিখাইলা তুমি
শিখতে শিখতে শিখতে ক্লান্ত আমি বেবি। তাই
তোমার মনের কুয়ার ভিতর দিয়া এমন এক ছেঁদ আমি করব যে
যে পৌঁছাইয়া যাব তোমার আত্মার ভিতর।
হাত পা আমার রক্তে তবুও মাখব
যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত আমি থাকব। নিখোঁজ আত্মা হইতে
অভিনয়গুলা মস্ত এক অপারেশন ক’রে বের ক’রে আনব
কাঁচের বয়ামে অভিনয় আমি বন্দি ক’রে নিয়ে আসব
বাসায় এসে শীতল জলে গোসল ক’রে রক্তের দাগ ধুইব।
চা খাইতে খাইতে তোমার অভিনয়গুলা
দেখতে থাকব রাত্রি আর দিন
পাথর হইতে আমার লাগবেই বা আর কয় দিন!

সদানন্দময়

তরল বাক্যের ভিতরে
শব্দাদি, উজাইয়াছে মাছ
পাখ-পাখালি উড়ালে
পানিপথের যুদ্ধ
কালের পর কাল চলিলে
পানি পাইবে না বদ্ধজলা লোক
পীরের কেরামতি বাড়ল
ঝড়ে ঝ’রে পড়লে বক।
বাকীবকেয়া মুক্তাঞ্চলে ধাঁধা,
এক রত্তি ফেস তার
বুকের ভিতর অর্ধেক ক’রে সে বলেছিল কথা।

তোমার দুই কাঁধে

ডান দিকেরে লুকাইলে যাহা মায়াময়
বাম দিকের পুকুরে নিস্তেজ কলমে
নবীন শরীরের শতবর্ষ পুরান আত্মা
আত্মার কালিতে, বডির ভিতরের ওমে
যে-কালো রক্ত, রক্ত ছেনে বের করা বীর্য
বীর্যের বীজ, কত কত স্টোরিজ
স্টোর করা কিছু মুখ
মুখাবয়ব, মুখের মুখোশ
মুখোশের মধ্যে স্বর্ণ-পারদ আয়না হায়
আয়নার ভিতরে একটা মেয়েলোক
চাঁদের আলো কেটে কেটে যায়
মধ্যদেশেতে হলুদ বাল্ব জ্বলে
আকাশ হ’তে নামা নামা আলোক অন্তরায়
বাম দিকেতে অলুকায়িত
লুকানোর ছল, প্রেমের আবেশ
যৌন ছলাকলার পরিবেশ প্রতিবেশ
রেখার মাঝে বিন্দু দোলে
দোলার মধ্যখানে ঝুলনওদোলা
দোলে দোলে দোলে
একটা রশির একটি মাথা বেদমদার খোলা
মাকড়শার লেজে লেজে গান গাইবেন অরক্ষিত গায়েন
দেহরাষ্ট্রকোণে ঘর বিঁধিবে খানকিপাড়ার আইন