রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তলস্তয় ও গ্রীক পুরাণ

মতিন মোহাম্মাদ

প্রকাশিত : আগস্ট ১৪, ২০১৮

রাজনীতি হওয়া উচিত দেশের জন্য, নিজের জন্য নয়। আজ যে রাজনৈতিক পরিবেশ আমরা লক্ষ্য করছি, সেই রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যক্তিগত স্বার্থে। সেই স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

যে কারণে তারা হত্যা ও গুম করছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ারও চালাচ্ছে। রাজনীতির সাথে কী মানুষ হত্যার বিষয়টি যায়? রাজনীতি যদি মানুষের জন্যই হয়ে থাকে, তাহলে সেই রাজনীতি মানুষ হত্যা করতে পারে কীভাবে? সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, আজ যারা রাজনীতি করছে, তারা আর মানুষ নেই। এরা হয়েছে একেকটা মানুষরূপী আফ্রিকান জানোয়ার।

একটু পিছনের দিকে ফিরে যেতে চাই। সময় কাল ১৯০১ সাল। ইতালির রাজার উপর এক নৈরাজ্যবাদী আক্রমণ করেছিল। সেই সময় তলস্তয় নৈরাজ্যবাদীদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখেন। সে চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘হিংসার পথ যেমন নৈতিক দিক থেকে ভুল, তেমনি রাজনৈতিক দিক থেকেও অস্বার্থক।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন খুন হলে আর একজন তার সেই জায়গা নেবে। সত্যি বলতে, হিংসা সব সময় আরও ভয়ানক হিংসার জন্ম দেয়।’ এই ছিল ইতালির সাবেক গণতন্ত্রকামী তলস্তয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভিব্যক্তি। তলস্তয়ের এই অহিংস রাজনীতি ইতালিতে কি পরিবর্তন এনেছিল, তা আমাদের সকলেরই জানা।

অন্যদিকে, গ্রীক পুরাণে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকটি নিহত যোদ্ধার রক্ত থেকে ৯৯৯ জন যোদ্ধার জন্ম হয়। রাজনৈতিক হত্যায় গা ভাসানোর অর্থ হলো, ড্রাগনের দাঁতের বিষবৃক্ষ রোপণ করা।’ তাই স্বাভাবিকভাবেই বলতে চাই, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড রাজনীতিতে কোনো সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে না।

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডলো পরম্পরাভাবে চলতে থাকুক, এটা কি আমরা চাই? নিশ্চয়ই চাই না। তবে আসুন, যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন, প্রতিবাদ ও দাবি আদায়সহ সবকিছুই অহিংস পন্থায় পালন করি।