প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

লাইব্রেরির পরিবর্তে বাড়ছে মসজিদের সংখ্যা

স্বকৃত নোমান

প্রকাশিত : মে ২১, ২০১৮

মাদকাসক্তি ও মাদকের সহজলভ্যতার কারণগুলো চিহ্নিত না করে, ছিদ্রগুলো বন্ধ না করে, বড় বড় রাঘব-বোয়ালদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে, চুনোপুঁটি মাদক বিক্রেতাদের নির্বিচারে হত্যা করে মাদক-বিরোধী অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুদিনে আটজন মাদক চোরাকারবারীকে তথাকথিত ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে।

ভিক্টর হুগো বলেছিলেন, ‘একজন মানুষকে গিলোটিনের নিচে ফেলে দেয়ার অর্থ শুধু এই নয় যে, শুধু তাকেই হত্যা করা হলো। তার সঙ্গে হত্যা করা হলো তার পরিবারকেও।’ যেসব মাদক বিক্রেতাকে হত্যা করা হচ্ছে, শুধু তাকেই হত্যা করা হচ্ছে না, নিমেষেই ধুলিস্যাৎ করে দেয়া হচ্ছে একটি পরিবারকেও। এটা কোনো সমাধানের রাস্তা হতে পারে না।

খুব তো বুক ফুলিয়ে দাবি করা হয়, ৯০ পার্সেন্ট মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ। তাই যদি হয়, মাদকের বিরুদ্ধে ধর্মের ভূমিকা কোথায়? ধর্ম কেন পারছে না মানুষকে মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে? কারণ কিছুই না। ধর্মের আদর্শ যদি কিছু থেকে থাকে তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে চলানো হচ্ছে অধর্ম, চলানো হচ্ছে ধর্মব্যবসা। যার ফলে ধর্মগ্রন্থ কোরআনের পাতা কেটে তার ভেতরে ইয়াবা ঢুকিয়ে পাচার করার ঘটনাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

ধর্মনেতারা মসজিদে মাদকের বিরুদ্ধে বলবেন না, বলবেন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে। তাকেই তারা ধর্ম মনে করে। সুতরাং তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করে লাভ নেই।

একটা সময় গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় সংস্কৃতির চর্চা হতো, নাটক-সংগীতের চর্চা হতো, স্কুল-কলেজে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন। তার সবই এখন বন্ধ করা হয়েছে। ছাত্র রাজনীতিও চলে গেছে অস্ত্রবাজ আর লুটেরাদের দখলে। লাইব্রেরির পরিবর্তে বাড়ছে মসজিদের সংখ্যা। একজন তরুণ যে প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখবে, কোথাও গিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে, তার কোনো জায়গা নেই। স্বপ্ন দেখার, নিশ্বাস ফেলার সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে একটি সমাজ চলতে পারে না।

কতজনকে ক্রসফায়ার দেবেন? সাংবাদপত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, সতেরো কোটি মানুষের জন্য জনপ্রতি পাঁচটি করে ইয়াবা ঢুকছে দেশে। এই বিপুল সংখ্যক ইয়াবা পাচারের নেপথ্যে কত হাজার চোরাকারবারী? সবাইকে ক্রসফায়ারে দেয়া যাবে? মনে হয় না।

লেখক: কথাসাহিত্যিক