শত্রু চিনতে ভুল করলে মাসুল দিতে হবে

বেলায়াত হোসেন মামুন

প্রকাশিত : মার্চ ০৫, ২০১৮

অনেকেই দেখছি খুব অবাক হচ্ছেন কিছু মানুষের `উল্লাস` দেখে। হ্যাঁ, এটা সত্য মুহম্মদ জাফর ইকবাল আক্রান্ত হওয়ায় কিছু মানুষ খুব খুশি হয়েছে। তাই তারা `উল্লাস` প্রকাশ করছে... এতে আমি খুব অবাক হচ্ছি না... আমি বরং বলতে চাই, এই `কিছু মানুষ` কথাটা সত্য নয়। বরং বলা উচিত বহুমানুষ। হ্যাঁ, এটাই সত্য। চোখ বন্ধ করে রাখলেই এই সত্য আড়াল হবার নয়। এই দেশ এক সঙ্কটের ভেতরে আছে। সে সঙ্কট ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সঙ্কট। আজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণেই আক্রান্ত হয়েছেন। আর যারা তার আক্রান্ত হওয়াকে নিয়ে `উল্লাস` প্রকাশ করছে, তারাও এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মোহ এবং মায়ায় আচ্ছন্ন হয়েই তা করছেন। কেননা, জাফর ইকবাল সাহেব না তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন আর না তিনি এদের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো ক্ষতি করেছেন। তাহলে এই `উল্লাসকারী`রা কারা? কেন তারা এমন একজন সম্মানীত, সজ্জন মানুষের দুঃখে `আনন্দ` লাভ করে? কেন তারা জাফর ইকবাল সাহেবকে তাদের শত্রু মনে করে?

এই সব প্রশ্ন যখন মনে উদয় হয় তখন আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। কারণ বাংলাদেশের আজকের এই দশার জন্য আমাদের মূর্খ রাজনীতিবিদগুলোই দায়ী। প্রধান দায় তাদেরই। এরপর দেশের অর্ধ-শিক্ষিত গোঁড়া আমলা তথা রাষ্ট্রের কর্মচারীরা দায়ী। ধর্মের নামের এই ব্যবসায় এরা কেউ কারো থেকে পেছনে নয়। যখন যখন তরুণ কোনো লেখক আক্রান্ত হয়েছে তখন তখন সেই খুনের পেছনের কারণ অনুসন্ধান না করে আমাদের এসব লোকগুলো তরুণের লেখার স্বাধীনতাকেই আক্রমণ করেছে। লেখার স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে আইন তৈরি করেছে। কিন্তু পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেনি। এতে রাজনীতির ফায়দা হয়েছে। ক্ষমতার পায়া মজবুত হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি?

হবে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস। ইতিহাস বলে, এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেদক নেই। আর বর্তমান দুনিয়ার দিকে তাকালে এর উদাহরণ না-দেখার কোনো উপায় নেই। আগামীর এবং আজকের বাংলাদেশের প্রধান শত্রুকে চিনতে ভুল করলে অনেক প্রজন্মকে তার মাসুল দিতে হবে। যাদের ডাবল পাসপোর্ট আছে অথবা অপর কোনো দেশে বসবাসের সুরক্ষা আছে, তাদের এই ভয় তেমন নেই। কিন্তু যাদের কেবল এই বাংলাদেশটুকুই আছে তাদের এই ভাইরাস বিষয়ে ভাবা জরুরি। এ ভাবনা কেবল অস্তিত্ব বিষয়েই নয়, ইতিহাস বিষয়েও ভাবতে হবে...