শিক্ষাই কি এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী

নাঈমুল হাসান হিমেল

প্রকাশিত : আগস্ট ০৩, ২০১৮

কোন জাতিকে হুট করে উন্নত করা যায় না, কোন জাতিকে রাতারাতি শিক্ষিত বা মার্জিত করা যায় না। দরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ, দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ। আমরা যখন স্কুলে পড়া শুরু করি তখন খুব সূক্ষ্ণ ভাবে আমাদের মাথায় কিছু চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কমন একটা চিন্তা হচ্ছে আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হব । আমাদের মা বাবা এই শিক্ষাটাই দেয় স্কুলে প্রথম ক্লাসে যাওয়ার আগে।

আমরা স্বভাবত এটাই শিখে নিই। এরপর স্কুলে শুরু এর চর্চা যেমন ধরুন আপনি কোন প্রাথমিক বইয়ে বাংলাদেশে জাতীয় পোশাক পরিহিত কাউকে দেখবেন না, কোট টাই বা জিন্স আর বাচ্চাদের হাফপ্যান্ট, শার্ট। এর মানে কি চিন্তা করেছি কখনও? আমরা শার্ট প্যান্টকে স্মার্ট পোশাক হিসেবে চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছি। তাই আমার কৃষক বাবার বা চাচার পোশাকটা আমরা পরতে পছন্দ করছি না, তার পেশাকেও আমরা এড়িয়ে চলছি ফলে কৃষিতে ক্রমশ পিছিয়ে পরছি। শুধু কৃষি নয় আরও কয়েকটা পেশাকে আমরা এড়িয়ে চলতে শিখে গেছি ফলে বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষ তার শিশু বয়সের শিক্ষাটা অনেকেই ভুলতে পারে না। শিশু ফলজ বৃক্ষের মত, আপনি যেমন পরিচর্যা করবেন তেমন ফল পাবেন। আমরা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাই না, চিন্তাও করি না। কেন? সেই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার মার্কা চিন্তা রয়ে গেছে আমাদের। বাংলাদেশ যখন সদ্য নতুন কুড়ি ঠিক তখন সবার মাঝে একটা চিন্তা ছিল মেট্রিক পাশ করো আর বাড়ির পাশের স্কুলের শিক্ষক হয়ে যাও। তাই মেট্রিক পাশ করতে হবে যে কোন উপায়ে বাংলাদেশের ৮০ কিংবা ৯০ এর দশকটা ছিল নকলের মহোৎসব। নকল থেকে বের হতে পারলেও আমরা সেই পাশ করা শিক্ষকদের গন্ডি থেকে কি বের হতে পেরেছি? আমরা আমাদের প্রজন্মকে কাদের হাতে তুলে দিচ্ছি?

ঠিক এমনিভাবে যদি চিন্তা করা হয় বাংলাদেশের চালকদের কথা। আমরা এই পেশাকে খুব নিম্ন পর্যায়ে রেখে দিয়েছি। ওস্তাদের পাশে বসে কয়েক দিন দেখলাম আর টুকটাক একটু প্র‍্যাক্টিস আর স্টেয়ারিংয়ে হাত দিয়ে বসে গেলাম। গত মাসের উনিশ তারিখের ঘটনা। বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছি ফেনীর কিছু আগে আমাদের বাসের সামনেই ট্রাক এক্সিডেন্ট হয়। আগ্রহীদের পাশে আমিও গিয়ে দাড়াই। চালকের আসনে নিতান্তই এক গোবেচারা ছেলে, সন্দেহ হয়, যে লোকটা পাশে বসা ছিল তার বয়স হবে ৫০ এর কাছাকাছি। চালক মারা গেছে বলছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, পাশের লোকটা শুধু একটু আহত, পুলিশের জিজ্ঞাসায় সে স্বীকার করে সে চালক আর স্টেয়ারিং হাতে বসা ছিল তা হেলপার, ভোরে ক্লান্তিতে একটু বসতে চেয়েছিল। আর হেলপার বেচারা আরেকটা ট্রাকের পেছনে দেয় ধাক্কা বাস হেলপারেরর প্রাণ সংশয়। এমন শিক্ষিত হেলপারগণই রাস্তায় বেশি মৃত্যুর কারণ হয়। আমাদের ভবিষ্যত নিরাপদ করতে আরও সচেতন হওয়া উচিৎ। যারা দেশ গঠনের দায়িত্বে তাদের আরও সচেতন হওয়া উচিৎ। দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য তৈরি করা উচিৎ। দেশকে আপনি যতই অবকাঠামোগত চকচকে ঝকঝকে করুননা কেন লাভ খুব বেশি হবে না। যদি শিশু শিক্ষার প্রতি যত্নশীল না হোন। জাতিকে শিক্ষিত করুন কাজের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধাশীল করুন দেশের উন্নতি তখনই হবে।