শিখরে চীন

পর্ব ৪

সাজ্জাদ হায়দার

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৯, ২০১৮

শক্ত একটি অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের চীন। এ অবস্থায় পৌঁছতে এ জাতির রয়েছে নানা ত্যাগ ও পরিকল্পনা। পশ্চাৎপদ চীনা জনগোষ্ঠীকে সুসংবদ্ধ একটি অর্থনৈতিক পাটাতন পেতে যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তার বর্ণনা দিয়েছেন উ শিয়াওবো। শিখরে চীন শিরোনামে এটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাজ্জাদ হায়দার। আজ প্রকাশিত হলো পর্ব ৪

 

ভ´ভেগান প্রতিনিধদলের সাথে আগত দার স্পাইগেল পত্রিকার এক জার্মান সাংবাদিক হতাশা ব্যক্ত করে লিখলেন, একটি দ্বীপের মধ্যে ভ´ভেগান তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করতে যাচ্ছে। এখানে কার্যত, খুচরা যন্ত্রাংশের সরবরাহ নেই। চীনা শিল্পের উৎপাদন পদ্ধতি হলো, আমার দাদিমার আমলের।
চার্লস আবরাহাম নামের মার্কিন এক ব্যবসায়ী বরফ গলানোর কাজ প্রথম শুরু করলেন। ১৯৮০ সালে ফরচুন সাময়িকী তাকে বিত্তশালী হওয়ার জন্য চীনে যাওয়ার মার্কিন স্বপ্নদ্রষ্টাদের একজন প্রতিনিধি হিসাবে অবিহিত করল। ৫৭ বছর বয়সী নিউইর্য়কবাসী গৃহায়ান ব্যবসায়ী আবরাহাম চীনে একটি বানিজ্যিক কোম্পানি খুললেন এবং চল্লিশবার চীন ভ্রমণ করলেন। তার উপলব্ধি হলো, চীন ছিল একটা বিশাল কোম্পানির মতো। চীনা কর্মকর্তারা তাকে সাদরে গ্রহণ করল এবং তিনি অনেক রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠানের শ্বেতপত্র পেলেন। এমনটি দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কার্যাদেশ ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন। এরই ভিত্তিতে তিনি নিউইর্য়ক স্টক অ্যাকচেঞ্জ থেকে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেন। এক বছরের মধ্যেই চুক্তির অনেকগুলোই বাজে কাগজের টুকরোয় পরিণত হয়।
হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিশেষজ্ঞ জন কিং ফেয়ারব্যাংক লিখেছিলেন, প্রকল্পগুলোর জন্য বছরে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়া কোমোনমতেই বাস্তবসম্মত ছিল না। বছরের মধ্যেই নাটকীয়ভাবে চীন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ফেলে। অনেক চুক্তি বাতিল অথবা স্থগিত হয়। কারণ ওই পরিমান অর্থ পরিশোধের ক্ষমতা চীনের ছিল না।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব বুঝে দেং শিয়াও পিং দ্রুত কৌশল পাল্টালেন। তিনি হাজার হাজার রাষ্ট্রীয় কলকারখানা সংস্কারে উদ্যোগী হলেন। অধিক স্বায়ত্বশাসন দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর আশা করলেন। একই সময়ে তিনি বেইজিং থেকে অনেক দূর, যেখানে রাষ্টীয় অর্থনীতি দুর্বল সেই দক্ষিণ চীনে পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন শুরু করলেন। তিনি বৈদেশিক মূলধন ও প্রযুক্তি আর্কষণের জন্য ‘কার্যকর জানালা’ কাজে লাগালেন।

শেনঝেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল
১৯৭৯ সালে বসন্তকালে হংকংয়ের নিকটবর্তী দক্ষিণ চীনা সাগরের উপকূলবর্তী একটি ছোট জেলে পল্লীর  ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়ার সূত্রপাত হয়। আগে এই পল্লীর মানচিত্রে স্থান ছিল না। তখন কেউ ভাবতেই পারেনি শিঘ্রই এই ক্ষুদে এলাকাটা চীনের ‘অর্থনৈতিক ইঞ্জিনে’ পরিণত হতে চলছে। এই এলাকাকে দেং শিয়াও পিং ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ হিসাবে অবিহিত করলেন।
দেং শিয়াও পিং এই এলাকাকে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ হিসাবে নূতন নামে অবিহিত করলেন। অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে এই এলাকা বাড়তি সুবিধা পাবে। আর আগেই ১৯৭৮ সালে, দেং শিয়াওপিং ‘আগে কিছু নগরকে ধনী হতে দাও’ তত্ত্বকে সঠিক বলে ঘোষণা করেছিলেন। যখন তিনি এক ডজন এলাকার নাম উল্লেখ করেন, তখন প্রথমেই আসে শেনঝেনের নাম। খুব কম লোকের কাছেই এ এলাকা পরিচিত। একটি ক্ষুদ্র নদী শেনঝেনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুঁজিবাদী নগরী হংকং থেকে আলাদা করেছে। দেং শিয়াও পিংয়ে এলাকাকে নির্বাচিত করে নিংসন্দেহে নুতন একটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বিষয়টি ‘নদী পেরুতে গেলে পায়ের তলায় পাথরের ঘষা লাগে’ এই চীনা প্রবাদের উদারহণও বটে।
‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এর ধারণা ছিল, চীনা ধারার ক্রমাগত সংস্কারের সূচনা মাত্র। যুদ্ধের জন্য দুই শয়তানের মধ্যে ছোটটিকে বেছে নেয়ার কৌশলও বটে। স্বর্গ অনেক ওপরে ও সম্রাট অনেক দূরে, প্রবাদের মতো মূল ভুখণ্ড থেকে দূরবর্তী দক্ষিণ-পুবের এ এলাকাটিতে ‘নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি’র প্রভাব কম। পরীক্ষার জন্য এ এলাকা বেছে নেয়ার কারণ হলো, পরীক্ষা ব্যর্থ হলে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে না। সারা চীন থেকে যারা প্রথম এ এলাকায় ভাগ্য অন্বেষণে এসেছিল নাটকীয়ভাবে পরবর্তীতে তাদের জীবন পাল্টে যায়।

চলবে...