সংগৃহীত

সংগৃহীত

শেখ শাহরিয়ারের দুটি কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ০৫, ২০১৮

সিরিয়ার নিহত শিশুদের উদ্দেশে

আর্তনাদ

আর কত রক্ত ঝড়ালে তোমরা পাবে শান্তি?
আর কত অশ্রু গড়ালে আমাদের দেবে মুক্তি?
আর কত মা সন্তান হারালে জাতি হবে জাগ্রত?

শুনতে পাই কত আর্তনাদ, কত চিৎকার, কত কান্না
তবুও কেন জেগে উঠেছো না?
কেন দেখছো না অবুঝ সেই শিশুটিকে
যে মাটিতে লুটিয়ে আছে
তবুও বিবেকে কেন জাগে না?

শত বাবার আর্তনাদ
শত মায়ের আর্তনাদ
ছেলে তাহার শুয়ে আছে রক্তরাঙা গায়ে
শত বোনের আর্তনাদে কেঁদে ভাসছে বুক;
ভাইটি যে তার পড়ে আছে প্রাণ যে তার যায়!

প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ডাক, এই বুঝি প্রাণ গেল
এই বুঝি আমায় যেতে হবে দুনিয়া রেখে পিছে
প্রতিমুহূর্ত বিভীষিকাম এই বুঝি ডাক এলো
এই বুঝি পৃথিবী ছাড়তে হবে, জীবন হবে মিছে।

ছোট্ট শিশুটি কাঁদছে একা
মা তার আছে পড়ে
বাবাও দু’দিন আগে চলে গেছে তাকে ছেড়ে;
আর নাই সময়
শিশুটিও জানে
ওই যে হায়েনার দল আসছে
এবার না-হয় আমিও যাব মা-বাবার কোলে।

আর কত প্রাণ গেলে তবে
উঠবে তোমরা জেগে?
আর কতটুকু রক্ত গড়ালে তবে দেবে সাড়া?
মানবতা আজ কোথায় তোমাদের?
ভালোবাসা আজ কোথায় তোমাদের?
তবে কি আজ শুধুই মানবতাহীন হায়েনায় দুনিয়া ভরা?

সময়ের অ-সময়

মাগো, ওরা নাকি আমাকে তোমার কাছে যেতে দেবে না
আমি থাকব কেমনে তোমায় ছাড়া?
তোমার কবিতা তোমার গল্প ওরা নাকি আর শুনতে দেবে না
মা, আমি নাকি সন্ত্রাসবাদী
তোমার ছেলে নাকি সন্ত্রাসী!
পাঁচ বছর তোমার এই খোকা নাকি অপরাধী!
তাই তো ওরা আমাকে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিলো মা!
আমি আসবো মা, তোমার কোলে ফিরে আসবো।
তোমার মুখে গল্প শুনবো,
তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো।
বাবাকে বলো না গো মা আমাকে নিয়ে যেতে
বাবাকে বলো না গো মা আমাকে বাঁচাতে!

মা, জানো, এখানে অনেক কষ্ট
সময়ে অসময়ে বোমা পড়ছে, শয়ে শয়ে লোক মরছে
কতজনের ঘর পুড়ছে
নিমিষেই সব ধূলায় মিশছে।
জানো মা, আমিও ধুলায় মিশে যাচ্ছি
যাকে তুমি মাথায় তুলে রাখতে সে আজ মাটিতে পড়ে আছে।
সেদিন আমি রং নিয়ে খেলেছি
আজ নিজেই রঙে রাঙিয়ে গেছি।
মা, ও মা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না মা
তোমার খোকা যে আজ নিথর পড়ে আছে!

ওই যে কত শিশু ওপর থেকে ডাকছে মা
বলছে, সবাই নাকি ওপরে একসাথে খেলবে;
আমাকে কি যেতেই হবে?
তোমার কাছে ফিরে আসা যায় না মা?
নাহ, আর আসবো না মা তোমার কাছে,
আর গল্প শুনবো না মা; আর তোমার কোলে ঘুমাবো না;
এবার যেতে হবে
ওরা তোমার খোকাকে আর বাঁচতে দিলো না মা!