সহজ কাহিনির ভেতর অস্তিত্ববাদী বক্তব্য ‘বহিপীর’

মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল

প্রকাশিত : আগস্ট ১৬, ২০১৮

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ আমাদের পাঁচ দশকের এক বিরল, নিরীক্ষাপ্রিয় ও মৌলনাট্য প্রতিভা। আধুনিক নাটকে সংলাপ সৃষ্টি,  নাট্যশৈলী নির্মাণ,  অভিনয় কৌশল, বিষয়বস্তু  যোজনা, মঞ্চ পরিকল্পনা— সবকিছুতে পুরোনো আবহ কাটিয়ে উঠেছে বাংলা নাটক।

এতে আরো নতুনত্ব এসেছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মতো নাট্যকারের স্পর্শে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রথম নাটক ‘বহিপীর’ ১৯৫৫ সালে লেখা হয়। এ নাটকে নাট্যকার আমাদের দেশীয় সমাজের চেতনা উদ্ভুদ্ধ করেছেন। রেশমপুরের সামান্য জমিদারির মালিক হাতেম আলীর জমিদারি সান্ধ্য আইনে নিলামে ওঠার উপক্রম। স্ত্রী ও পুত্র হাশেম আলীকে নিয়ে তিনি টাকা সংগ্রহের জন্য চিকিৎসার কথা বলে পারিবারিক বজরায় ঢাকা যাচ্ছেন।

ঢাকার নিকটবর্তী ডেমরাঘাটে বজরা উপস্থিত হলে জমিদার পত্নী বিপন্ন অবস্থার সম্মুখীন তাহেরাকে দেখতে পান। এবং সহানুভূতিশীল হয়ে তাহেরাকে তাদের বজরায় আশ্রয় দেন। তাহেরার ঘরে সৎ মা, পিতাও তাহেরার প্রতি ততটা স্নেহবৎসল নয়। তারা জোর করে এক বৃদ্ধ পীরের সাথে তাহেরার বিয়ে দেয়। কিন্তু তাহেরা এই বিয়ে মানে না, ফলে সে তার চাচাত ভাইয়ের সাথে পালিয়ে আসে।

পীর সাহেবেও তার খাদেম হাকিকুল্লাহকে সাথে নিয়ে তাহেরার খোঁজে বের হয়। ঝড়ের সময় খালের ভিতরে ঢুককবার সময় পীরের নৌকার সাথে হাতেম আলীর বজরার ধাক্কা লাগে। এর ফলে বহিপীরও হাতেম আলীর বজরায় স্থান পায়। হাকিকুল্লাহর মাধ্যমে পীর সাহেব জানতে পারেন, তাহেরাও এই বজরায় আছে। ঢাকায় গিয়ে হাতেম আলী তার বন্ধুর কাছে টাকা না পেয়ে উৎকণ্ঠা আর অস্থিরতা নিয়ে ফিরে আসেন।

পীর সাহেব তার উৎকণ্ঠার কারণ জানতে পেরে তাকে টাকা সাহায্য দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু শর্ত একটি, তাহেরাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহেরা যখন জানতে পারে এ কাহিনি, তখন সে জানায়, প্রয়োজন হলে সে নদীতে ঝাঁপ দেবে তবুও ভণ্ড পীরের সাথে যাবে না। এসব চরিত্রগুলোকে ঘিরে নাটকটি এগিয়ে চলে।

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে গেলে বলবো যে, নাটকটি ছিল সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সবচেয়ে অনিন্দ্য এক সৃষ্টি। নাটকের অংকিত কাহিনি মূলত সরল, কিন্তু তা একটি বিশেষ সমাজ বাস্তবতাকে স্পর্শ করে। এ নাটকে এ দেশীয় ধর্ম আশ্রিত ব্যক্তিবর্গ, পীর-দরবেশ এবং তার খাদেমদের চারিত্রিক অসঙ্গতি নাট্যকার চমৎকার ঢঙ্গে উপস্থিত করেছেন। সহজ কাহিনির ভেতর অসম্ভব সত্য এবং অস্তিত্ববাদী বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে।

ধর্মের নামে সমাজকে কুসংস্কারে ঘিরে ফেলে এক পরিবারের বর্ণনা এ নাটকে দেয়া আছে। সমাজকে ছিন্ন করে নিয়ে অস্থিরতার এক সরল কাহিনি সৃষ্টি হয়েছে এ নাটকে। সাহিত্যপ্রেমীদের অনবদ্য নাটকটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি...

একুশে বইমেলা ২০১৮