সহজ হিসাব

কিশোর পাশা ইমন

প্রকাশিত : জুন ০৮, ২০১৮

কয়েকশো গবেষণাপত্র বিষয়ক আলোচনা পড়ে রহস্যটা বুঝতে পারলাম। পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ার পরও ভালো রেজাল্ট করতে না পারা ছেলেমেয়েরা সৃজনশীল কাজে ভালো করতে পারবে, এমন সুযোগ কম। এটা এখন আমার কাছে বিস্ময়কর কোনও ব্যাপার না যে, হুমায়ূন আহমেদ দারুণ মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার পাশাপাশি কেন এত দারুণ রচনা রেখে গেছেন। রেজাল্ট খারাপ করলে তার রচনাও এত ভালো কিছু না হতে পারতো। একাডেমিক পারফর্ম্যান্সের সুযোগ যারা পাননি অথচ দারুণ সৃজনশীল হিসেবে পরবর্তীতে প্রমাণ রেখেছেন, তাদের কথা আলাদা।

এখানে একাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের গল্প লেখার ক্ষমতার আপাতদৃষ্টিতে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু আসলে আছে। মনস্তাত্ত্বিক সব গবেষণা থেকে নিরেটভাবে প্রমাণিত এটা। একাডেমিক প্রেশার সার্ভাইভ করা যদি হুমায়ূন আহমেদ না শিখতেন, সারা জীবনে তিনি হয়তো কিছু উপন্যাস লিখতেন। কিন্তু তার কাজের পরিধি অনেক বিস্তৃত ছিল। নাট্য রচনা, গীতিকাব্য, অনুবাদ, ছোটগল্পের সঙ্গে অসংখ্য উপন্যাস রচনার পেছনে তার একাডেমিক সাফল্যের সম্পর্কটা খুবই কাছের।

গবেষক হিদারটন বলেছিলেন, “এজন্য পিয়ানো ক্লাস কিংবা ফুটবল ক্লাবে বাচ্চাদের ভর্তি করাটা এত জরুরি। এখানে ভবিষ্যতে ভালো মিউজিশিয়ান কিংবা মেসি-রোনালদো তৈরির কোনও উদ্দেশ্য নেই আসলে। এক ঘণ্টা প্র্যাকটিস করলে কিংবা জোর করে হলেও পনেরোটা পাক দৌড়ে আসলে আপনার ইচ্ছেশক্তি বাড়বে। দশ মিনিট ধরে যে পাঁচ বছরের বাচ্চা ফুটবলের পেছনে দৌড়াতে পারে, সিক্সথ গ্রেডে উঠলে সে হোমওয়ার্কটা সময়মতো করবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও তারা ভালো করবে। একই বৈশিষ্ট্য তাদের সৃজনশীলতায় ছাপ রাখবে। এটা হবেই। গবেষণালব্ধ ব্যাপার। আগে এটা একটা রহস্য ছিলো আমার কাছে। জনপ্রিয় গায়কের লেখাপড়ার দরকার কি? দরকার আসলে আছে। অফিসের কাজে দক্ষতা বাড়াতে জিমে শরীরচর্চার সম্পর্কটা যেমন গভীর, তেমনই। প্যারা নাও ক্ষুদে প্রতিভারা। পড়াশোনাকে হেলাফেলা কইরো না। এইটা ঠিকমতো করতে পারলে ঐটাও পারবে। নাহলে তোমার ল্যাক অফ উইলপাওয়ার তোমার সৃজনশীলতাকেও গাঙের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।