স্টিফেন হকিং: এক রহস্যঘাতী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ

শশী হক

প্রকাশিত : মার্চ ১৭, ২০১৮

ধরা যাক, একটা চঞ্চল বানর কী-বোর্ডে এলোমেলোভাবে হাত চালাচ্ছে। তা এখন, গাণিতিকভাবে, স্ক্রিনে শেক্সপিয়রের একটা গোটা সনেট পাবার সম্ভানা এক্কেবারে যে নাই, তা নয়। আছে, কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হলেও, আছে। আর এই প্রসঙ্গটি এনেই স্টিফেন হকিং বলছে, এই যে আমাদের মহাবিশ্ব নিপুণভাবে এমন হলো, একসময় তার এইরূপ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল বানরের হাতে হতে পারা অই সনেটের সম্ভাবনার মতো, বা তার চেয়েও কম। এই হলো হকিং-ফান, সৃষ্টি, স্রষ্টা আর মহাবিশ্ব নিয়ে!

স্টিফেন হকিং হচ্ছে সেই কণাবিজ্ঞানী যিনি অনায়াসে জগত প্রপঞ্চকে খাঁমচে ধরেন, ভুল করেন, হাসেন, তামাশা ছুঁড়ে দেন। এমনকি নিজের দিকেও। ফলে তার বিজ্ঞানকথায় আমি বেশ রস পাই, আর্টের বিস্ময় পাই। তিনি যখন বিগব্যাঙ, ব্ল্যাকহোল আর বান্ডেলথিওরী বয়ান করেন, ধর্মের লোকসকল কী বুইঝা জানি খুশি হয়। আবার সেই তিনিই যখন বুদ্ধিমান এলিয়েনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখেন বা খাঁটি নিহিলিস্ট হয়ে বলেন, নাই, এরপর আর কিছুই নাই, শূন্য, সব মিছা, জীবন ওয়ানটাইম... তখন তারাই আবার নাখোশ হয়, তারে নাস্তিক গাইল পারে।

হকিং আর সবার থেকে আলাদা একারণেই যে তিনি আবিস্কারী বিজ্ঞানী নন, জ্ঞানকথক, সৃষ্টিরহস্যের স্ক্রু খোলার খেলায় বিভোর এক দামাল ত্বাত্তিক পদার্থবিদ। শেষজীবনে হকিং একটা কথাই শুধু বলতেন, মানুষ জীবনযাপনে বড় ভুল করছে, এবং কৃত্রিম বুদ্ধির উপর অতি নির্ভরশীলতাই একদিন হয়ে উঠবে তার সকল বিপর্যয়ের কারণ। হকিং-এর কাছে মানুষ (বিশেষত নারী) মহাবিশ্বের চেয়েও রহস্যময়, আনপ্রেডিক্ট্যাবল, বিপুল। তাই যতই বিপর্যয় আসুক না কেন, হকিং-এর বিশ্বাস, শেষমেশ আর কিছুই নয়, মানুষের অফুরন্ত প্রেমশক্তিই তাকে রক্ষা করে নেবে।

অবশেষে চলেই গেলেন স্টিফেন হকিং, তার জন্য কিছু শাদাফুল। তার এই প্রয়াণে পৃথিবী যেন আজ তার সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত শিশুটিকে হারালো। কিন্তু যে স্বপ্নবীজ তিনি বুনে গেলেন আমাদের মেধায়, আমাদের আনন্দে, আমাদের প্রেমে, তার উদগম যেন ব্যাহত না হয়, অজ্ঞানতার দোহাই দিয়ে নলেজের ইলিউশন যেন তাকে নষ্ট করতে না পারে। জয় হোক মানবতার, জয় হোক শুদ্ধজ্ঞানের।

লেখক: কবি