স্ত্রী এবং রক্ষিতা

পর্ব ২

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : অক্টোবর ১০, ২০১৮

ঘড়ির কাঁটাটা এমন বাজেভাবে সাউন্ড করে, শুনলেই বাদলের মেজাজ বিগড়ে যায়। ঘড়িতে অ্যালার্ম না দিয়েও উপায় নাই। আজকে সাতসকালে তাকে রওনা দিতে হবে চট্টগ্রাম। ঘড়ির অ্যালার্ম শুনেই বাদল ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে। বিছানায় বসে দু’পা ঝুলে রেখে আবলতাবল অনেক কিছু ভাবে।

শরীরের ক্লান্তি ভাবটা এখনোও কাটেনি। গতকাল রাতে মিতালীর শরীরের সাথে শরীর মিলাতে যেয়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে। এত বছর ধরে বাদল মিতালীর শরীরটা নিয়ে খেলছে, কিন্তু খেলার সাধ মিটছে না। সব পুরুষেরই কি এমন হয়?

দরজা খোলার আওয়াজ। মিতালী গোসল ছেড়ে ঘরে ঢুকেছে। সাট্ সাট্ করে শব্দ হচ্ছে। এই শব্দটা বাদলের খুব চেনা শব্দ, মিতালীর গোসলের পর চুল ঝাড়ার শব্দ। মিতালী অনবরতভাবে মাথার চুলের সাথে দুহাতের গামছার সাথে সাট্ সাট্ শব্দ করে যাচ্ছে, শরীরের ছান্দনিক দোলনে মিতালীর শরীর থেকে এরই মধ্যে আলগা হয়ে খুলে পড়েছে বুকের উপর আলগাভাবে জড়ানো তোয়ালেটি, ভিজা শরীরের কারণে মিতালী ব্লাউজটি পড়েনি, মিতালীর ঝাঁকুনিতে বাদলের চোখ দুটিও দুলছে। সে অনেকক্ষণ ধরেই মিতালীর বুকের সৌন্দর্যটা উপভোগ করছে। মিতালী প্রথমে বাদলের চাউনি বুঝতে না পারলেও, ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় হঠাৎ করেই বাদলের দৃষ্টি চোখে পড়ে। সে নিজেকে বিশেষকরে তার বুক দুটোকে বাদলের চোখ থেকে আড়াল করতে কোমরে আটকে থাকা তয়েলাটি নিয়ে বুকের উপর ফেলতে গিয়েও থেমে যায়।

থাকুক। বুকটা উদোম আছে, থাকুক। দেখুক, বুকটা দেখছে সে, দেখুক। সে তো তার স্বামী। স্বামীর কাছে এত লজ্জা কিসের? এই, তুমি এমন করো কেন? প্রতিদিন এমন দুষ্টামি কিন্তু আমার ভালো লাগে না। হা হা হা করে বাদল হেসে ওঠে।

হাসবে না, খবরদার হাসবে না, তোমার কারণে আমি শাড়িটুকুও ঠিকমতো পড়তে পারি না।
বাদল: কেন বাবা, তুমি আমাকে এত দোষারোপ করছো?
মিতালী: কেন মানে! তোমার সামনে আমি কতবার শাড়ি পরব আর খুবল?
হা হা হা... আমার সামনে শাড়ি পড়ে থাকার দরকার কি?
মিতালী: ছি, তোমার মুখে না কিছু আটকায় না। ঘরের বউ হয়েছি বলে যা-তা ভাবে থাকতে হবে?
বাদল: হা হা হা... আর যাই বলো, তোমাকে শাড়ি ছাড়াই বেশি মানায়... হা হা হা।
মিতালী: ধেততেরি, কী নোংরা রে বাবা, এবার কিন্তু আমি তোমাকে মারব।
বাদল: মারো, তোমার নরম হাতের স্পর্শে আমাকে মেরে ফেলো, হা হা হা...

তোমার সাথে পারা যাবে না, ঝটপট গোসল সেরে নাও, টেবিলে বুয়া নাস্তা দিয়ে রেখেছে। মিতালী এবার দ্রুততার সাথে তার শরীরে শাড়ি জড়িয়ে নেয়। হঠাৎ গোসলখানার দরজার বিকট শব্দে মিতালীর হুঁস ফেরে। সে অনেকটা আবেগময়ী হয়ে পড়েছিল। বুকের উপর তোয়ালে জড়াতে জড়াতে সে খেয়াল করল, বাদল এরই মধ্যে গোসলখানায় ঢুকেছে। মিতালীর বুকটা হঠাৎ করেই যেন চেপে বসেছে। তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে তার দুচোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিতে চেষ্টা করছে। দুচোখের কোণে দুফোটা অশ্রু এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। মিতালীর প্রচণ্ডভাবে চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে। ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে জীবনের সব কিছু। কিন্তু পারছে না, কেন পারছে না?

স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন, এই ঐশ্বরিক বন্ধনকে সে ভেঙে ফেলতে পারছে না। এখানে তার বিবেক বাধা দেয়, বাধা দেয় চিৎকার দিতে, বাধা দেয় সংসার নামক বন্ধনকে গুড়িয়ে দিতে। মিতালীর চাওয়াটা অনেক বড় কিছু নয়, সে তার স্বামী সন্তান নিয়েই সুখে থাকতে চায়। কিন্তু শুয়োরের বাচ্চা! তাকে সুখী হতে দিল না। তার শরীরে কি নাই? অন্য দশটা নারীর মতো সবই রয়েছে তার, নিজের বুকটা দেখে নিজেরই খুব লোভ হয় মিতালীর, শরীরে মেদ বলতে কিছু জমতে দেয়নি মিতালী, তার নাভির সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এই বয়সেও যে কোনো পুরুষ হামলে পড়বে তার উপর নিশ্চিত। তারপরও শুয়োরের বাচ্চাটার মন পাচ্ছে না সে। ছিহ, নিজের স্বামীকে এভাবে গালি দেয়া শোভা পায় না, কি করবে? মাথায় রক্ত উঠে গেলে সে আর কি করবে? হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দান করো।

বাদল খুব দ্রুত গোসল সেড়ে পরিপাটি হয়ে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। আজকে বেশ সকাল সকালে বুয়া এসে নাস্তা তৈরি করে দিয়ে গেছে, নাস্তার টেবিল পুরু ফাঁকা। ইদানীং বাদলকে একাই নাস্তা করতে হয়। মাঝে কিছু সময়ের জন্য মিতালী তার সামনে বসলেও পরে উঠে চলে যায়। ছেলেমেয়েরা নাস্তার টেবিলে বসে না, একেকজন একেক সময় নাস্তা করে চলে যায়। তার একটা কারণও আছে। আগে প্রায় প্রতিদিনই বাদল-মিতালীর খাবার টেবিলে বসে গণ্ডগোল হতো। এইটা সন্তানেরা পছন্দ করে না, তাই তারা তাদের সামনে আসতেও চায় না। বাদল বোঝে, তার সুন্দর পৃথিবীটা কেমন জানি ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে, সে বহুবার চেষ্টা করেছে রিক্তাকে ছেড়ে আসতে, কিন্তু কিছুতেই রিক্তার কামনা তার পিছু ছাড়ছে না। সে এখন কি করবে?

চলবে