হকার

আশরাফ সিদ্দিকী

প্রকাশিত : মার্চ ১৫, ২০১৮

এই ট্রেনে প্রতিদিন যাই। প্রতিদিন আসি।
একদিনও টিকেট করি না। পচা সাবান, বাজে তেল, নকল দাঁতের মাজন এইগুলি ফেরি করি। আমার জিনিসের উৎকৃষ্টতা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা দিই। বোকা প্যাসেঞ্জারদের কেউ কেউ ফাঁদে পা দেয়। ভয়ানক রকম ঠকে। আমি মুচকি মুচকি হাসি, উঃ কী বোকা এই লোকটা!

বহুদিন পর হঠাৎ সেদিন দেখি, সে যাচ্ছে ওই ট্রেনে। হ্যাঁ, সেই তো। সোনার কুমার কোলে আর সঙ্গে একজন অর্ধবয়সী ভদ্রলোক, সম্ভবত স্বামী। প্রায় দশ বৎসর পর দেখা।

চোখাচোখি হতেই সে যেন শিউরে উঠল। চোখ নামিয়ে নিল। সেদিন আর আমার মিথ্যা বক্তৃতা দেয়া হলো না। বিকিকিনি চালাতে পারলাম না। পরের স্টেশনে নেমেই টিকিট কাটলাম। গাড়িতে গার্ডকে ডেকে বললাম, এই যে স্যার, আমার টিকিট।

মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠল। অনেক দিন পর একটা মিষ্টি পান কিনলাম। একটা ক্যাপস্ট্যান সিগারেট ধরালাম। গন্তব্যস্থল পর্যন্ত এসেও দেখি, সে এখনও নামেনি। আবার নতুন করে টিকিট কিনে আনলাম।

ভেবেছিলাম, জংশন স্টেশনে গিয়ে দরকার হলে আবার টিকিট করব। কিন্তু দু’স্টেশন পরেই ওরা সব হুড়মুড় করে নেমে গেলেন। যাবার সময় পেছনে ফিরে সে মিছেই যেন কী খুঁজছিল, না মালপত্তর সবই নিয়েছে। আমার টিকিটটা আমি একজন গরিব যাত্রীকে এমনি দিয়ে দিলাম। বললাম, জংশন পর্যন্ত অনায়াসে যেতে পারবেন। মনটা বড় ভালো লাগছিল।

না, এ হকারি আর করব না।

আশরাফ সিদ্দিকীর ‘গলির ধারে ছেলেটি’ বই থেকে পুনর্মুদ্রণ করা হলো

 

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যেসব সাহিত্যিক, আশরাফ সিদ্দিকী তাদের একজন। তিনি পাঁচশোর বেশি কবিতা রচনা করেছেন। গভীর গবেষণা করেছেন বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে। তিনি একাধারে প্রবন্ধকার, ছোটগল্প লেখক, ঔপন্যাসিক, লোকসাহিত্যিক এবং শিশু সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন।