অপু ইব্রাহীম

অপু ইব্রাহীম

অপু ইব্রাহীমের দুটি কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ১০, ২০২৩

মর্মান্তিক সন্ধ্যায়

 

মর্মান্তিক এক সন্ধ্যায় পূর্ণ চাঁদ উঠতে দেখে
অন্যমনস্ক হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লে
একটা ট্রেনকে চলে যেতে দেখলাম বুকের ওপর দিয়ে।
কাটা পড়ল আমার যাবতীয়,
মনে হলো— জীবনের সমস্ত চিৎকার
মস্ত চাকার মতন দেহের ভেতর ফেটে মরলো সশব্দে।

 

যাত্রীবোঝাই ট্রেনটা চলে যাচ্ছে, জানলোই না
আত্মহত্যাপ্রবণ জ্যোৎস্নায় খুন হয়ে গেছে কেউ একজন!
হয়তো এখনও কেউ স্বপ্নের ফেরি করছে ট্রেনে—
`বাদা...ম! বাদা...ম! বাদাম লন, বাদা...ম!`

 

দ্রুত ভিড় জমে যাবে। ক`দিন গেলেই
পুলিশি তদন্তে জেনে যাব— কী হয়েছিল আমার।

 

লাইনে— স্লিপারে— খণ্ড পাথরে— মাটিতে—
ছড়িয়ে রইল আমার নিহত আপাদমস্তক।
তেমন কিছুই আর করবার নেই
আপাতত থেঁতলে যাওয়া জোড়া চোখের ওপর
গড়াগড়ি খেতে দেখছি জ্যোৎস্নাসমগ্রকে।

 

শান্ত হও, এবার ভালোবাসতে শেখো

 

পরবর্তী ভ্রমণের লক্ষ্যে সমুদ্র কিনার ঘেঁষে বসে আছি
এক বোতল জল নিয়ে, মাতাল জলের বোতল!
এ এমন আশ্চর্য জল যে, খেলে নেশা ধরে যায়
কী করে যে বানায় এরা! বোতলগুলোও দেখবার মতন
এই অজর প্লাস্টিক যুগেও দিব্যি পুষছে কাচের শরীর!
যদিও প্রেমিকাদের নখ ঢের বেশি নিখুঁত আর নতুন

 

নেশা যে কী বস্তু, বোধে আসে না! একবার পেলে পেয়েই বসে
ভাসিয়ে রাখে জলে— শূন্যে— যে কোনোভাবে
একদিন ভাসতে ভাসতে পেয়ে যাই
মদ ও মাগীর ঐশ্বরিক সিলেবাস!
জানা গেল— স্বর্গে এসব আকছার, চুমুর চেয়েও দেদার!
সেই থেকে আমি বুকপকেটে স্বর্গ নিয়ে ফেরার

 

আর কোনোদিন ফিরবে না জেনে গেলে উভচর মানুষেরা
এরকমই কোনো বোতলে নিখোঁজ ডাঙার খোঁজে
তাদের সমস্ত হৃদয়টা কাগজে ভাঁজ করে ভাসিয়ে দেয়!

 

অনুকরণের অবিশ্বাস্য দক্ষতায়
আমিও দিয়েছি পুরে হৃদয় আমার;
উত্তরপুরুষে ছিপি খুলতেই টাক্ করে বায়ুভর্তি হয়ে
সমস্ত হৃদয় সমুখে উজিয়ে এসে বলে দেবে—
মানুষ মূলত এক বদমাশ প্রজাতির নাম।
সুযোগটা এই একবারই— এই শেষবারই—
ঢের তো খেলেছো বিশ্বে মানুষ-মানুষ
শান্ত হও— এবার ভালোবাসতে শেখো।