অমিতাভ পাল

অমিতাভ পাল

অমিতাভ পালের ৬ কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০২০

ঐতিহাসিক সাম্প্রদায়িকতা

প্রেমের শুরু একটা সবজি ক্ষেতের মতো
কোথাও ফুলকপি কোথাও বাঁধাকপি কোথাও টমেটো মরিচ—
পৃথিবী তখন এক রঙিন দুনিয়া

তারপর প্রেমে মাংস ঢুকে পড়ে
তখন কেবল লাল
আর রক্তাক্ত সব অভিজ্ঞতা—
আমরা তখন ডাক্তার হতে শিখি

এরপর বিচ্ছেদ হলে ভালো
নইলে প্রেম ধর্ম হয়ে যায়

কমোডে বসা এক স্বৈরাচারীর আত্মপ্রেম

এখন আর কথা বলতে ইচ্ছা করে না
কেননা কথা বললেই গাদা গাদা মিথ্যা বের হতে থাকে মুখ দিয়ে
সেই মিথ্যাগুলি আবার ভেজানো থাকে আমারই থকথকে লালায়
আর সেইসব মিথ্যা রসগোল্লার মতো গিলতে থাকে শ্রোতৃমণ্ডলি
কোথায় যেন ওরা শুনেছে লালা একটা ভালো অ্যান্টিসেপটিক
তাই রসগোল্লা গিলতে গিলতে ওরা ভাবে,
এই কাজটা বেশ স্বাস্থ্যসম্মত

এখন আর কথা বলতে ইচ্ছা করে না
কথা বলতে শুরু করলেই একদল স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ
আমাকে ঘিরে ধরে আর প্রতিমূহূর্তে প্রমাণ করতে চায়
ওরা আমাকে খুব ভালোবাসে
অথচ ওদের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেই আমি দেখি
দূরে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ আমার দিকে
ঘৃণার চোখে তাকাচ্ছে
ওদের কোনো স্বাস্থ্যবিকার নাই
এবং ওরা আমার মিথ্যা ও লালাকে একটুও পছন্দ করে না
অবশ্য মাঝেমাঝে ওদের জন্য আমার করুণা হয়
একটু সহ্য করলেই ওরা কিন্তু আমার
অ্যান্টিসেপটিক মাখা মিথ্যাগুলিকে গিলে
সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারতো
কিন্তু কে ওদের বোঝাবে
কে ওদের ভরসা দেবে
অবিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীর কোথাও কিছু নাই
বিপ্লব ক্ষমতার বদল আমাকে হটানো— সব বাকোয়াজ
কেউ পারলে ওদের বলে দিও— স্বাস্থ্যও টাকা আর ক্ষমতার দাস

এবার আমার দিকে তাকাও
জীবনের এই পড়ন্ত দিনগুলিতেও আমি কেমন চকচকে ধাতব
আয়নাও আজকাল আমার দিকে তাকাতে ভয় পায়

লবা

লবস্টারকে আমার লবা বলে ডাকতে ইচ্ছা করে
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে দেখেছি
শিকার করা হরিণটাকে কি আদর করে চাটছে সিংহটা
হয়তো মাংস কামড়ে ছেঁড়ার সময় তার অডিওটা
একটু নিষ্ঠুর লাগে
কিন্তু বাকি দৃশ্যগুলিতে সিংহটা যেন নিজেকেই খায়
হরিণটাকে কোনো ব্যথা না দিয়ে পরম মমতায়
আসলে তো হরিণের মাংস সিংহের পেটে গিয়ে
একটা সিংহই হয়
পুষ্টিতে আর শক্তিতে
হরিণ তাই সিংহের প্রেম

লবস্টার আমার হরিণ

বৃষ্টি

বৃষ্টি
গাড়ির ভিতরে বসে আছি
গাড়ির কাচগুলি সমানে কাঁদছে
আর একটা ওয়াইপার
মাতৃস্নেহে মুছিয়ে দিচ্ছে তাদের চোখ
তবু কি কান্না থামে?

বৃষ্টি
গাড়ির ভিতরে বসে আছি
পাচ্ছি অ্যাকোয়ারিয়ামের স্বাদ
আমার আত্মা এখন মাছের মতো সাঁতরাচ্ছে

মন্তাজ

পেটভর্তি ডেঙ্গুর বোমা নিয়ে উড়ছে একটা মশা
ড্রোনের মতো খুঁজছে টার্গেট
আর একটা মাংসল উপত্যকা পেলেই
তাতে ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃত্যুর বীজ

পেটে বোমা বেঁধে এক আত্মঘাতী হামলাকারী
খুঁজছে নির্দেশিত টার্গেট
বোতাম টেপার জন্য নিশপিশ করছে তার আঙুল
মৃত্যুর তর সইছে না

ফুসফুসভর্তি করোনা ভাইরাস নিয়ে
আমি হাঁটছি রাস্তায় বাজারে
আমার নিঃশ্বাসে বিষ
মৃত্যু জাল পেতেছে

বাজার এখন লাশের

শাক

তরকারির ভ্যানগুলিতে এখন শুধু শাকের উপদ্রব
যেন ভ্যানগুলি সব ডোবা আর তাদের চারপাশে
জন্মেছে এইসব শাকের দল
কলমি হেলেঞ্চা ঢেঁকি— ব্রয়লার লেয়ার আর পাকিস্তানি মুরগিদের ভিড়ে
শহর থেকে হারিয়ে যাওয়া পাখিদের মতো
এরাও এতদিন কোথায় যেন ছিল
এবার এরা শহরে— ভ্যানগুলির দখল নিয়েছে
বাজার অর্থনীতির কায়দা শিখে দাঁড়িয়েছে রাস্তায়
আর মানুষ কিনছে

একটু দূরে এতদিন বাজার দখল করে রাখা সবজিগুলির
ম্লান মুখের জটলা
মাছের বাজারে মাছিদের ভিড়ে
শাক কিনে বাড়ি ফিরতে থাকা মানুষগুলি
এখন আর ওদের দিকে তাকাতে সাহস পায় না

কুয়াশার মতো একটা মিহি দারিদ্র শহরে নেমেছে