আবু তাহের সরফরাজের ছড়া ‘য ফলা’

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৪, ২০১৯

রবীন্দ্রনাথ কইছিলেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, এরপর বিদেশি ভাষা।’ আমরা তা এখন কেউ শুনি না। উনি ব্যাকডেটেট। বুইড়া বয়সে কী দিয়া কী কয়া গেছেন, তা কেন শুনতে হবে? কিন্তু মোহতারাম, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষিতজনও ঠিকমতো বাংলা ভাষাটা জানেন না, এ অবস্থা কি আমাদের জন্যে লজ্জাজনক নহে? দেশের শিশু শ্রেণিগুলোতেও বাংলা বর্ণমালা ও যুক্তবর্ণ শেখার মানসম্মত পদ্ধতি নেই। বর্ণগুলোর সঙ্গে কোনোরকমে শিশুদের পরিচয় ঘটিয়ে দিতে পারলেই হইলো। পরীক্ষায় পাশ করা নিয়ে যেহেতু কথা। জনাব, এ অবস্থা আমাকে আহত করে। লজ্জায় ফ্যালে। আর তাই, বাংলা বর্ণমালায় য ফলার ব্যবহার নিয়া আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। পইড়া দ্যাখেন, যদি কিছু হয় সে আপনাদেরই দোয়া।  

ক্য     ক্যাবলা, ক্যানসার, ক্যাঁটকেটে, বাক্য।
ক্যাবলার ক্যানসার
হলো তাই, আনসার
ক্যাঁটক্যাঁট বাক্য বলে।
দুই কান ঝালাপালা
কোথা গেলি ছোটো খালা
খটখট দরজার তলে।

খ্য     মুখ্য, খ্যাতি, খ্যাতিমান, মুখ্য, আখ্যান, উপাখ্যান।
খ্যাতি হলে খ্যাতিমান
আরো খ্যাতি পেতে চান।
তিনি হন মুখ্য
এই তাই দুঃখ,
শুনি তার আখ্যান।

গ্য     গ্যাট, গ্যালিলিও, গ্যোটে, গ্যাং, ভাগ্য, আরোগ্য, যোগ্যতা, যোগ্য, ভোগ্য।
গ্যাট হয়ে বসে ছিল গ্যালিলিও
গ্যোটে এসে বললেন, চলো লিও
ঘুরে আসি নদীতীর
ঘাওয়া বয় ঝিরঝির।

গ্যাং নিয়ে শয়তান
এসে গায় পপগান।
হায়, একি ভাগ্য
নেই কি আরোগ্য?

যোগ্যতা ছিল তাই ছিল তারা যোগ্য
হয়নি কো কখনোই শয়তানে ভোগ্য।

ঘ্য    ঘ্যাঁট, ঘ্যানঘ্যান, ঘ্যানর-ঘ্যানর।
ঘ্যানর-ঘ্যানর করছে কে?
একটু তাকে ডেকে দে।
ঘ্যাঁট রেঁধেছি, ভাত বেড়েছি
ঘ্যানঘ্যানানি গান ছেড়েছি।

চ্য     চ্যাপটা, চ্যাংদোলা, চ্যাঁচানি।
চ্যাপটা চ্যাংদোলা
কাজ তার ঠ্যাং তোলা।
ঠ্যাং তুলে চ্যাঁচাতো
আর দাঁত খোঁচাতো।

ছ্য      ছ্যা ছ্যা, ছ্যাঁচরা, ছ্যাবলা।
ছ্যা ছ্যা ছ্যাঁচরা
চুলগুলো আঁচড়া।
তুই খুব ছ্যাবলা
দেখতেও ক্যাবলা।

জ্য     রাজ্য, ভাজ্য, ভোজ্য, জ্যোতিষ, জ্যাঠা।
রাজ্য ছিল, রাজাও ছিল
আর যে ছিল জ্যোতিষ
হঠাৎ তবু ভোজ্যতেলে
ভেজাল দিলো সতীশ।

খবর পেয়ে জ্যাঠা এলেন
ভাজ্য হলো দেশ
রাজ্য গেল, রাজাও গেল
আসলো তেড়ে মেষ।
 
ট্য    নাট্য, নৈকট্য, কাপট্য     ঠ্য পাঠ্য, ঠ্যাং।
দেখে আসো নাট্য
এই ছড়া পাঠ্য
দুই ঠ্যাং তুলে হও
তারই নৈকট্য।

ড্য     ড্যাং ড্যাং, ড্যাবড্যাব।
ভ্যানভ্যান করে মাছি
ড্যাং ড্যাং এলে বাঁচি।
চেয়ে দ্যাখো ড্যাবড্যাব
টেবিলের ওই ম্যাপ।

ঢ্য   ঢ্যামনা, ঢ্যাঙা, ধনাঢ্য, ঢ্যাঁড়স।
বলছি শোনো চুপিচুপি
ঢ্যামনা নাকি ঢ্যাঙা খুবই
ধনাঢ্য তার বাপ
ঢ্যাঁড়স বেচে বাজার থেকে
কিনলো বাড়ি সবুজ লেকে
চা খেলো তিন কাপ।

ণ্য  অরণ্য, বরেণ্য, লাবণ্য, পুণ্য, গণ্য।
ছিপছিপে নদীটার ওপাড়ে অরণ্য
সেখানেই বাস তার, জগতে বরেণ্য।
নেই তার কোনো ভয়
ছেড়ে দিয়ে লোকালয়
আছে বেশ, আহা তার কী যেন লাবণ্য।

চুপচাপ ভাবে সে
মানুষের সমাজে
নেই কারো পুণ্য
তবু তারা গণ্য।

ত্য     ত্যাগ, ত্যাগী, নিত্য, সত্য, ত্যাঁদড়ামি, ভৃত্য, মৃত্যু, শেষকৃত্য।
ত্যাগ কোরে ত্যাগী হও নিত্য
মুখ দিয়ে কথা বলো সত্য।
ত্যাঁদড়ামি করো না হে ভৃত্য
মৃত্যুই হবে শেষকৃত্য।

থ্য তথ্য, পথ্য, মিথ্যা
মিথ্যা বলা বড়ই দোষ
পথ্য খেতে এলেন মোষ।
তথ্য দিল বনের বাঘ
এই কথাটি লিখে রাখ।

দ্য    খাদ্য, বাদ্য, সদ্য, বিদ্যা, অদ্য, দ্যাখা।
খাদ্য খেতে বাদ্য নিয়ে এলেন মহারাজ
সদ্য পড়া বিদ্যা বলেন রেখে হাতের কাজ।
অদ্য নাকি দ্যাখা হলো হরিদাসের সাথে
কী যেন এক অসুখে তার ঘা হয়েছে হাতে।

ধ্য  ধ্যাবড়া, ধ্যান, ধ্যানী।
ধ্যাবড়ার ধ্যান ভাঙে ভোরে
ধ্যানী এসে বললেন, ওরে
এই ফুল লতাপাতা
সব তোর ছড়াখাতা।

ন্য   ন্যালনেলে, অন্যায়, ধন্য, বন্য। 
ন্যালনেলে অন্যায়
করে আর দম নেয়।
সাগরেদ এসে কয়, ধন্য
লোকজন হয়ে গেছে বন্য।

প্য    প্যান্ট, প্যাঁচা, প্যানপ্যান, প্যাঁক প্যাঁক, প্যাচপেচে, প্যানডেল, প্যাকিং, রৌপ্য, প্যাচাল, আপ্যায়ন, আপ্যায়িত, প্যাচাল, প্যাকিং, প্যাডেল।
প্যান্ট পরে প্যাঁচা এসে প্যানপ্যান করে
প্যাঁক প্যাঁক সারাদিন শুয়ে থাকে ঘরে।
ঘরদোড় প্যাচপেচে তবু নেই হুঁশ
প্যানডেল খাটিয়ে গান গায় বুশ।
প্যাকিংয়ের বাকসোটা ছিল নাকি রৌপ্য
এইসব প্যাচালেই প্যাঁচা হলো সভ্য।

ফ্যা    ফ্যালনা, ফ্যাঁকড়া, ফ্যালফ্যাল, ফ্যা ফ্যা, ফ্যাসাদ।
ফ্যালনার কাঁকড়া
ধরে খায় ফ্যাঁকড়া।
ফ্যালফ্যাল চেয়ে রয়
চোখমুখে ভয় ভয়।

ফ্যা ফ্যা ফ্যাসাদে
এসে বলে, কাঁছা দে।

ব্য,  ব্যাগ, ব্যাংক, ব্যবসা, নব্য, ব্যবহার, দিব্য, ব্যয়, অব্যাহতি।
ব্যাগ হাতে ব্যাংক থেকে এসেছেন নব্য
ব্যবসায় মন নেই, ব্যবহার দিব্য।
দুই হাতে ব্যয় করে তারাবাতি জ্বালিয়ে
অব্যাহতি পেতে গেল সব পালিয়ে।

ভ্য    অভ্যাস, ভ্যাপসা, ভ্যানভ্যান, ভ্যা ভ্যা, সভ্য, লভ্য।
ঠ্যাং তুলে ক্যাঁচ ক্যাঁচ
ভ্যা ভ্যা কাঁদে ম্যাচ।

অভ্যাস খায় ঘাস
ভ্যাপসা গরমে
ভ্যানভ্যান গায় গান
সুর ওঠে চরমে।

ভ্যা ভ্যা সভ্য
সহজেই লভ্য।

ম্য    ম্যাপ, ম্যানেজার, রম্য, ম্যালেরিয়া, বৈষম্য, সাম্য, অগম্য।
ম্যাপ দেখে ম্যানেজার লেখে ছড়া রম্য
ম্যালেরিয়া হলো তার, একি বৈষম্য!

য্য শয্যা, আতিশয্য    ল্য কল্যাণ, মূল্য, তুল্য, বাল্য।
শয্যায় শুয়ে তার সে কী আতিশয্য!
কল্যাণ কামনায় খায় না তো ভোজ্য।
বুঝলো না তবু কেউ তার কত মূল্য
কেউ নেই তার মতো, তার সাথে তুল্য।

শ্য    শ্যামল, দৃশ্য, অবশ্য, আবশ্যক      ষ্য শিষ্য, পোষ্য।
নতীর তীরে শিষ্য
থাকতো নিয়ে পোষ্য।
আঁকতো শ্যামল দৃশ্য
বেচতো না অবশ্য।

স্য    নস্যি, শস্য, তস্য, আলস্য, ঔদাস্য।
নস্যি টেনে নাকে
শস্য কাটে চাষির বেটা
তস্য কথার ফাঁকে।

নেই কোনো আলস্য
মন তবু ঔদাস্য।

হ্য    হ্যাঁ হ্যাঁ, হ্যাঁচকা, বাহ্যিক, লেহ্য, সহ্য।
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁচকা
টেনে তোল বোচকা।
বাহ্যিক লেহ্য
হয় না তো সহ্য।

কবির অনুমতি ছড়া বাণিজ্যিক ধান্দায় এই ছড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।