আশিক আকবর

আশিক আকবর

আশিক আকবরের পাঁচটি কবিতা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১

অনুশীলন

রাত তিন ঘড়ি ধরে ধরে
ময়মনসিংহের সরকারি হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগকে মনে হচ্ছে
ঢাকা কারাগারের পাঁচ খাতা
জেগে থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ক্ষেপাটে পোলাটা
এ পাড় থেকে ওপাড়ে দিচ্ছে টহল
গণবাহিনীর সিংহের মতো দেখতে মুজিবর ভাই
এলেন উত্তম বিড়ির আগুন নিতে
আমার কাছে
আমি তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মার্কসবাদী সংঘের আগুন ঝরা লিফলেট নিয়ে ধৃত
পাঁচ খাতা মেট রাজুরা ঘুমন্ত
যে কিনা সকালে উঠেই বলবে
তর্জনি সোজা করে,
মেরা ইআর দ্যাখো মেরা নিশানা, ঠা ঠা ঠা...
লিবিয়ান ফেরত বিশ বাইশ যোদ্ধা সকালে করবে কংফু কারাত প্র্যাকটিস
বিকালে পড়বে অজুহীন জুতো পড়ে নামাজ
আর আমি একদিন ময়লা ভর্তি দুইটি প্যাকেট এনে
পুলিশে চেকে পড়ে ওদের বোকাস্য বোকা করবো

জেলে মাপা ভাত ঢাল তরকারি আছে
হাসপাতালেও আছে গুণে মানে স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার
ডাক্তার ও ঔষধ দুখানেই আছে
এটা আসলে একটা বিশ্বব্যাপী কমিউনিজমের প্র্যাকটিস
বিপ্লবীরা এদের চিনে উঠতে পারেনি

জুতা

হাসপাতালের ঝাড়ুদার আপা ফ্যানট্যান বন্ধ করে
প্রচণ্ড বিরক্তিতে ঝাড়ু দিতে দিতে নানাবিধ ময়লার সাথে
দুইটি কালো জুতাও ঝাড়ু দিয়া ঠেলে নিচ্ছে
ওই ব্যবহৃত জুতার কোনো মালিক নেই
কারণ কিছুক্ষণ আগেই আমার ওয়ার্ডে তিনি মৃত হয়েছেন

আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি হই
তখনও একটি সিট খালি ছিল
তারপরও আমাকে ফ্লোরে ফোম পেতে শোয়ানো হয়
খালি সিটের প্রতি আমার সোচ্চার আগ্রহ দেখে
সর্ববিদ্যাবিশারদ ফিসফিস করে বলে, একটু আগেই ওই সিটের লোকটি মারা গেছে

আশ্চর্য, মৃত্যু কোনো রোগ নয় জেনেও
মৃত্যুকে আমরা ছোঁয়াচে রোগ বানায়ে ফেলেছি

ফ্রেণ্ড রিকু

তোমাকে ভালোবাসা গেল না
তাও একটা ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট দিয়া দিলাম
তোমার বারান্দার পুঁইশাক ভালো লাগছে
বরবটি ভালো লাগছে
তোমার বানানো পিজ্জার উপরে কাটা টমেটোর ফুল ভালো লাগছে

ভালো লাগছে মন খারাপ থাকলে তোমার রান্নাঘরে যাবার অভ্যাস জেনে
জাগতিকতা অস্থির করলে আমিও লিখতে বসি
লেখাই আমার রান্নাঘর

চশমার আড়ালে কচি চোখ মুখ দেখে কিশোরী ভেবেছি
পরে গৃহিনী জেনে ভালোই লাগলো
পরকীয়ার জন্য ফ্রেণ্ড রিকু পাঠালাম অস্থির অবাধ্য অধরা...

এমন হরহামেশাই পাঠাই
গ্রহন না করলে মনেই থাকে না
ঘর তোমার
দরোজা খোলা না খোলা একান্তই তোমার এক্তিয়ার

প্রেমের কবিতা

রাতের মাত্র শুরু
ভাবছি বসাবো চা।
এখনই ঘুম?
উহু!
রাতের প্যাঁচা ভুল করে ডাকুক কুহু।

পদ্য

হতে পারে
হতেই পারে
এলেবেলে দিনটি এসে

আলোর মশাল
জ্বেলে টেলে
বলতে পারে একটু কেশে

খাবার জোগার
করতে হবে
এসে গেছে মাসের শুরু

ধরছি তোমার
পকেট চেপে
দাও না টাকা এবার গুরু

কিনতে হবে
চাঁদের আলো
কিনতে হবে ফুলের শোভা

রঙিন কিছু
মিষ্টি এনে
ভরতে হবে মাটির টোপা

তারও পরে
রইলো কথা
আলোর বিলের দিতে জমা

খাওয়া রেখে
চলা গেলেও
কারেন্ট বিলের নেই তো ক্ষমা

মাস কাবারে
আরো কিছুর
গোপন গোপন কথা আছে

না বলি আর
গভীর রাতে
চায়ের পানি ফুটছে কাছে

ফোটার ফাঁকে
বলে রাখি
জীবন একটা পাগলা ঘোড়া

আপন মনে
চলতে থাকলেও
মিলে যাবে থোড়া টোরা

তাই বলে আর
লক্ষ্য রেখে
দিশা দেখার পথ ভুলো না

পথের মাঝেই
পড়ে আছে
পথের মনের মূল ঠিকানা।